আহমেদ ইয়াসীর আবরার
ড. ইউনূসের পদত্যাগের দাবিতে পিটিশনের নামে ফিশিং লিংক
আহমেদ ইয়াসীর আবরার
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের দাবিতে একটি পিটিশন লিংক প্রচার হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। পোস্টের ইংরেজি ক্যাপশনে বলা হচ্ছে, “এটি স্বাক্ষর করে আমাদের সমাজকে বাঁচান।” তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায় এটি কোন পিটিশন স্বাক্ষর করার ওয়েবসাইট নয় বরং একটি ক্ষতিকর লিংক, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হতে পারে। পিটিশনের নামে এই ধরনের ক্ষতিকর লিংক আগেও ছড়াতে দেখা গেছে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে। দেখা যায়, সবগুলো লিংকের পেছনে আছে একই চক্র।
ভুয়া পিটিশনের লিংকটিতে বলা হয়েছে, “ইউনূসকে পদত্যাগ করিয়ে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে এই পিটিশন সাইন করুন”। অনলাইনে ক্ষতিকর লিংক যাচাইকারী টুল ভাইরাস টোটালে দেখা যায়, ছয়টি প্রতিষ্ঠান লিংকটিকে ম্যালওয়্যার ও ফিশিং হিসেবে হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
লিংকটি সাজানো হয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত পিটিশন খোলার প্লাটফর্ম, চেঞ্জ ডট ওআরজির নাম ও ডিজাইন নকল করে। তবে ইউনূসের পদত্যাগের দাবিতে তৈরি ক্ষতিকর লিংকটি বিশ্লেষণে দেখা যায় চেঞ্জ প্লাটফর্মের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। ভুয়া এই ওয়েবসাইটটির ডোমেইন এমপিটিশন ডট ওআরজি। আর চেঞ্জের ডোমেইন হলো চেঞ্জ ডট ওআরজি। মূলত চেঞ্জ প্লাটফর্মের নাম ও লোগো ব্যবহার করে ড. ইউনূসের পদত্যাগ সংক্রান্ত এই ভুয়া পিটিশনটি প্রচার করা হচ্ছে।
পিটিশনের নামে ক্ষতিকর লিংক প্রচারের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। বাংলাদেশে গত জুলাইয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে এই ধরনের ভুয়া পিটিশন লিংক ছড়াতে দেখা গিয়েছিল। সেসময় এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ডিসমিসল্যাব। সেখানে উগান্ডা ও ঘানার দুইটি আন্দোলন ঘিরে প্রচারিত এমন ভুয়া পিটিশনের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। সম্প্রতি এমন ভুয়া পিটিশন ছড়িয়েছে ঘানায় সকল বন্দি নাগরিকদের মুক্তির দাবিতেও।
ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, এই পাঁচটি ভুয়া পিটিশনের পেছনে আছে একই চক্র। সম্প্রতি ড. ইউনূসের পদত্যাগ এবং ঘানার বন্দিদের মুক্তির ভুয়া পিটিশনের পেজ সোর্স কোড যাচাইয়ে দেখা যায়, দুইটি লিংকেই গুগলের একই ইউনিভার্সাল অ্যানালিটিকস (ইউএ) আইডি আছে। এছাড়াও, ডিসমিসল্যাবের আগের প্রতিবেদনে যে তিনটি ভুয়া পিটিশনের উল্লেখ ছিল, সেসব লিংকেও আছে একই ইউএ আইডি: ইউএ-১৬৩৩৯৩৫০২-১।
কোনো ওয়েবসাইট কত মানুষ ব্যবহার করছে, কোন কোন পেজে যাচ্ছে, কতক্ষণ থাকছে– ইত্যাদি পর্যবেক্ষণের জন্য বসানো হয় গুগল অ্যানালিটিকস আইডি, যেটি ইউনিভার্সাল অ্যানালিটিকস নামে পরিচিত। একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একটি আইডির মাধ্যমেই বিভিন্ন ওয়েবসাইটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এবং একই আইডির অর্থ এর পেছনে একটি অ্যানালিটিকস অ্যাকাউন্টই ব্যবহার করা হয়েছে।
গত জুলাইয়ে ছড়ানো তিনটি লিংকের ক্ষেত্রে সাইটের ডোমেইন ছিল সাইন ডট মাই পিটিশন ডট এক্সওয়াইজেড এবং সম্প্রতি ছড়ানো দুইটি লিংকের ডোমেইন হলো এমপিটিশন ডট ওআরজি। ডোমেইন ভিন্ন হলেও সবগুলো লিংকেই আছে একই ইউএ আইডি। এ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, বিভিন্ন দেশে এ ধরনের ক্ষতিকর পিটিশন লিংক প্রচারের পেছনে একই চক্র কাজ করছে।
গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এই ঘটনার তিনদিন পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্বগ্রহণের পর থেকেই সাবেক ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের অভিযোগ করা হয়। সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে যান ড. ইউনূস। নিউইয়র্কে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি ফেসবুকে বিভিন্ন আইডি থেকে মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সরকার বিরোধী পোস্টে #স্টেপডাউনইউনূস (#stepdownyunus), #স্টেপডাউনডিআরইউনূস (#stepdowndryunus) এবং #স্টেপডাউনইউনূস (#stepdownyounus) হ্যাশট্যাগ ব্যবহার হতেও দেখা যাচ্ছে।