তৌহিদুল ইসলাম রাসো
প্রতিবেদনটির শেষ লাইনে ভুলবশত ফরেন অ্যাফেয়ার্সের পরিবর্তে ফরেন পলিসি লেখা হয়েছিল। এটি সংশোধন করা হয়েছে।
ডিপফেক ভিডিও দিয়ে প্রার্থীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ভুয়া খবর ফেসবুকে
তৌহিদুল ইসলাম রাসো
প্রতিবেদনটির শেষ লাইনে ভুলবশত ফরেন অ্যাফেয়ার্সের পরিবর্তে ফরেন পলিসি লেখা হয়েছিল। এটি সংশোধন করা হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনে সামাজিক মাধ্যমে একটি ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে, যেখানে গাইবান্ধা-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগারকে বলতে শোনা যাচ্ছে যে, তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়েছেন। তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা গেছে, ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, নাহিদ নিগার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত জানাচ্ছেন। ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়- “আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম এবং শামিম হায়দার পাটোয়ারি ভাইকে সমর্থন করলাম। আপনারা সবাই দলে দলে কেন্দ্রে যাবেন এবং শামীম হায়দার পাটোয়ারি ভাইয়ের লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিবেন। সবাই আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আপনাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।”
কিন্তু ভিডিওটি যাচাইয়ে দেখা যায়, সেখানে কথার সঙ্গে ঠোঁটের অসামঞ্জস্যতা আছে। নাহিদ নিগারের আসল কণ্ঠস্বর ও বাচনভঙ্গির সঙ্গেও কোনো মিল পাওয়া যায় না ভুয়া ভিডিওটির। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে ভুয়া ভিডিওটি বানানোর ক্ষেত্রে যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি নেওয়া হয়েছে এই প্রার্থীর ফেসবুক প্রোফাইল থেকে।
গাইবান্ধা-১ আসনের সর্বশেষ সংসদ সদস্য ছিলেন জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারি। ২০১৮ সালে উপনির্বাচনের মাধ্যমে তিনি এই আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবারের নির্বাচনেও তিনি এই আসনের অন্যতম প্রার্থী। গাইবান্ধা-১ আসনে কোনো প্রার্থী দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শুরুতে নৌকা প্রতীকে এই আসনে মনোনয়ন দিলেও পরে জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে সেটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এআই দিয়ে তৈরি ভুয়া ভিডিওটিতেও শামীম হায়দার পাটোয়ারির পক্ষে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সব মিলিয়ে এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সর্বমোট ১০ জন প্রার্থী। এর মধ্যে যে দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন, তাদের একজন আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার।
ফেসবুকে যে এমন একটি ভুয়া ভিডিও প্রচারিত হচ্ছে– সে সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে নাহিদ নিগারের দুইটি পেজ থেকেই। তার দুটি পেজের একটির লাইক সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার এবং আরেকটির প্রায় সাড়ে ৬ হাজার। উভয় পেজে গ্রাফিক কার্ড ও ভিডিও-র মাধ্যমেও বলা হয় নির্বাচন থেকে তার সরে দাড়ানোর দাবিটি গুজব। এই দুই পেজ থেকে যে ভুয়া পেজটি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে– সেটির স্ক্রিনশটে দেখা যায়, সেখানে মাত্র ৪টি লাইক আছে। তবে যাচাইয়ে সেই পেজটি আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
নাহিদ নিগারের নামে ভুয়া পেজ ছাড়াও একই ক্যাপশনে ভুয়া ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে ‘গাইবান্ধা গেজেট’ নামের একটি পেজ থেকে। সেই ভিডিওটির কমেন্টে “ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন”, “ভালো পদক্ষেপ নিয়েছেন”, “ভালো খবর”– এ ধরনের মন্তব্য দেখা যায়। অর্থাৎ অনেকেই সেটিকে সত্য ঘোষণা বলে ধরে নিয়েছেন।
তবে নাহিদ নিগারের একাধিক পেজে সম্প্রতি প্রকাশিত ছবিতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে তিনি এখনো ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শনের ছবিতেও দৃশ্যমান যে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাড়াননি।
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর ব্যবহার নিয়ে ইতিমধ্যে একাধিক গণমাধ্যমে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। বাংলাদেশের একাধিক ডিপফেক ভিডিওর উদাহরণ দিয়ে গত ১৪ ডিসেম্বর এক বিস্তারিত প্রতিবেদনে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছিল, “আগামী বছরের বেশ কয়েকটি বড় নির্বাচনের আগে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার এবং বিভাজনে বাড়ানোর চেষ্টায় কীভাবে এআই দিয়ে বিভ্রান্তি ব্যবহার করা যেতে পারে তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে নীতিনির্ধারকরা উদ্বিগ্ন।” ‘ডিপফেক এন্ড ডিসইনফরমেশন ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে দ্য ডিপ্লোম্যাটে প্রকাশিত লেখাতেও বাংলাদেশে নির্বাচনে ডিপফেক কন্টেন্ট ব্যবহারের কথা বলা হয়েছিল। এছাড়া ফরেন অ্যাফেয়ার্সের এক প্রতিবেদনে এআই অপতথ্য যেকোনো দেশের গনতন্ত্রের জন্যে হুমকি হতে পারে বলেও জানানো হয়েছিল।