আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
আওয়ামী লীগের পেজ থেকে চালানো বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত দাবিটি সঠিক নয়
This article is more than 1 month old

আওয়ামী লীগের পেজ থেকে চালানো বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত দাবিটি সঠিক নয়

আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল পেজ থেকে দৈনিক ৪২০০টি আলাদা আলাদা বিজ্ঞাপন চলছে– এমন দাবিতে একটি পোস্ট ছড়াতে দেখা যাচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। প্রতিটি বিজ্ঞাপনের পেছনে ১০ ডলার খরচ করা হলে দৈনিক এগুলোর পেছনে ৪২ হাজার ডলার বা প্রায় ৫৫ লাখ টাকা খরচ করা হচ্ছে বলেও দাবি করা হয়েছে পোস্টটিতে। তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায় দাবিটি সত্য নয়। আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড অফিসিয়াল পেজ থেকে সর্বশেষ বিজ্ঞাপন চালানো হয়েছিল ৪ আগস্ট থেকে ৬ আগস্ট। এছাড়া, বর্তমানে এই পেজ থেকে কোনো বিজ্ঞাপন হিসেবে চালানো হচ্ছে না।

“ওরা যখন নিজেরা নিজেরা কামড়া-কামড়ি করতেছে ঠিক তখন BAL এর পেইজে ৪,২০০টি আলাদা আলাদা বুস্টিং এর এড চলতেছে ( এড ব্লকার এনেবল করা, ডিটেইলস দেখতে পারবেন না)। যদি একেকটা এড ১০ ডলার করেও হয় তাহলে টোটাল ধরেন দৈনিক ৪২,০০০ ডলারের (প্রায় ৫৫ লাখ টাকা!!!) এড চলতেছে – যা বাংলাদেশের ফেসবুক বুস্টিং ইণ্ড্রাস্ট্রিতে নজিরবিহীন!”- এমন দাবিতে ফেব্রুয়ারি ১৯ তারিখে হওয়া একটি পোস্ট প্রচারিত হতে দেখা যাচ্ছে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। পোস্টের কমেন্টে মেটা অ্যাড লাইব্রেরির একটি স্ক্রিনশট যুক্ত করেছেন পোস্টদাতা। যেখানে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল পেজ থেকে প্রায় ৪২০০টি বিজ্ঞাপন চালানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত পোস্টটিতে প্রায় দশ হাজার রিয়েকশন এবং প্রায় ২৩০০ বার শেয়ার হতে দেখা গিয়েছে।

দাবিটি যাচাই করতে ডিসমিসল্যাব যায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল পেজে। পেজের ‘এবাউট’ সেকশনে পেজ ট্রান্সপারেন্সিতে গেলে সেখানে বলা হয়, এই পেজ থেকে ‘সামাজিক ইস্যু, নির্বাচন বা রাজনীতি’ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন চালানো হয়েছে। আরও লেখা হয়েছে, বর্তমানে এই পেজ থেকে কোনো বিজ্ঞাপন চালানো হচ্ছে না। 

পরবর্তীতে একই পেজের ‘গো টু অ্যাড লাইব্রেরি’ লিংক অপশনে ক্লিক করে মেটা অ্যাড লাইব্রেরিতে গেলে দেখা যায় সেখানে পেজটির বর্তমানে কোনো ‘সক্রিয় বিজ্ঞাপন’ নেই। তবে সক্রিয় বিজ্ঞাপন ফিল্টারটি বন্ধ করে দিলে ‘নিষ্ক্রিয় বিজ্ঞাপন’ এর ক্ষেত্রে প্রায় ৪১০০টি বিজ্ঞাপন দেখা যায়। এবং সর্বশেষ বিজ্ঞাপনটি চালানো হয় ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট থেকে ৬ আগস্ট।

মেটার অ্যাড লাইব্রেরি সামাজিক ইস্যু, নির্বাচন বা রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন সাত বছরের জন্য সংরক্ষণ করে। এসব বিজ্ঞাপনের মূল কন্টেন্ট, অর্থায়নকারী ব্যক্তি বা সংস্থার নাম, বিজ্ঞাপনটি কতবার দেখানো হয়েছে, কত দিন পর্যন্ত চলেছে, এর পেছনে কত অর্থ খরচ করা হয়েছে, কাদের লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপনটি প্রচারিত হয়েছে– এসব তথ্যও সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে মেটা অ্যাড লাইব্রেরিতে। ডিসমিসল্যাব আওয়ামী লীগের পেজ থেকে চালানো সব বিজ্ঞাপন ডাউনলোড করে দেখেছে, সেখান থেকে মোট ৪১০৯টি বিজ্ঞাপন চালানো হয়েছে। প্রথম বিজ্ঞাপনটি প্রচারিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ১৬ মে এবং সর্বশেষটি ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পেজ থেকে চালানো বিজ্ঞাপনগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৪১০৯টি বিজ্ঞাপনের মধ্যে ৩৯৭৪টির অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে বাংলাদেশি টাকায় এবং বাকি ১৩৫টির মার্কিন ডলারে। কিন্তু আলোচ্য ফেসবুক পোস্টটিতে বিজ্ঞাপনের পেছনে সম্ভাব্য খরচের হিসেব দেখানো হয়েছে শুধুমাত্র ডলারে। এছাড়া, প্রতিটি বিজ্ঞাপনের পেছনে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন কত খরচ হয়েছে– সেই হিসেবও দেওয়া হয় মেটার অ্যাড লাইব্রেরিতে। যেমন, ৪ আগস্ট প্রচারিত সর্বশেষ বিজ্ঞাপনটির পেছনে পেজটি খরচ করেছে ৫০০-৫৯৯ টাকা। অর্থাৎ, সর্বনিম্ন ৫০০ এবং সর্বোচ্চ ৫৯৯টাকা। 

প্রতিটি বিজ্ঞাপনের পেছনে পেজটি সর্বোচ্চ ব্যয় করেছে– এমনটি ধরে নিয়ে মোট ব্যয়ের হিসেব বের করেছে ডিসমিসল্যাব। দেখা গেছে, বাংলাদেশি টাকায় অর্থ পরিশোধ করা ৩৯৭৪টি বিজ্ঞাপনের পেছনে তাদের খরচ ছিল ২৪ লক্ষ ৭১ হাজার ১২৬ টাকা। অন্যদিকে ডলারে অর্থ পরিশোধ করা বিজ্ঞাপনগুলোর পেছনে ০-৯৯ ডলার খরচ করা হয়েছে বলা হয়েছে মেটা অ্যাড লাইব্রেরিতে। এক্ষেত্রেও প্রতিটি বিজ্ঞাপনের পেছনে সর্বোচ্চ ৯৯ ডলার খরচ করা হয়েছে এমনটি ধরে নিলে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৩৬৫ মার্কিন ডলার বা ১৭ লক্ষ টাকা (১ ডলার = ১২৫ টাকা ধরে)। এই হিসেবে আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল পেজ থেকে ২০১৮ সালের মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪১০৯টি বিজ্ঞাপনের পেছনে সর্বোচ্চ ৪১ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে। 

অর্থাৎ পেজটিতে ৪২০০টি বিজ্ঞাপন সক্রিয় আছে এবং প্রতিটি বিজ্ঞাপনের পেছনে দৈনিক ১০ ডলার খরচ করা হচ্ছে ধরে নিয়ে দৈনিক প্রায় ৫৫ লাখ টাকার বিজ্ঞাপন চালানো হচ্ছে– এমন দাবি সঠিক নয়। প্রতিদিন নয়, বরং ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পেজটি থেকে চালানো হয়েছে মোট ৪১০৯টি বিজ্ঞাপন।

আরো কিছু লেখা