আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
চট্টগ্রামের কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁর সামনে হাতাহাতির ভিডিও ভিন্ন দাবিতে প্রচার

চট্টগ্রামের কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁর সামনে হাতাহাতির ভিডিও ভিন্ন দাবিতে প্রচার

আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারে কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁর সামনে কিছু মানুষ হাতাহাতি করছে এমন একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে দাবি করা হয়েছে চাঁদাবাজির অভিযোগে বা খাওয়ার পর বিল না দেওয়ায় মারধর করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের। তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায় রেস্তোরাঁর সামনে হাতাহাতির ঘটনাটি সত্য হলেও এর সঙ্গে সমন্বয়কদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। 

৩২ সেকেন্ডের ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করে দুই ধরনের দাবি করা হয়েছে (, , , )। কোথাও বলা হয়েছে, “চকবাজার কুটুমবাড়ি  চাঁদাবাজি করতে গিয়ে সমন্বয়ক-রাজাকারকে কেদানী!”, আবার কোনটিতে বলা হচ্ছে, “চট্টগ্রাম চকবাজার কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্টে সমন্বয়ক বৃন্দ ফ্রীতে খেয়ে বিল না দেওয়ায় জনগণ গণধোলাই দিয়েছে।”  “চকবাজার কুটুমবাড়িতে সমন্বয়ক-রাজাকারকে আপ্যায়ন” এমন বিবরণ দিয়ে একই ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে এক্সেও (সাবেক টুইটার)। 

ভিডিওতে চট্টগ্রামের চকবাজার এলাকার কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁর সামনে কিছু মানুষের মধ্যে মারামারি হাতাহাতির দৃশ্য দেখা যায়। ভিডিওটিতে চট্টগ্রামের স্থানীয় গণমাধ্যম সিপ্লাস টিভির লোগোও দেখা যায়। 

ভিডিওটির সূত্র যাচাই করতে গিয়ে সিপ্লাস টিভির অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলের একটি ভিডিও খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। সিপ্লাস টিভি নিউজ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকেও এটি রিলস আকারে পোস্ট করা হয়। ভিডিওটির শিরোনাম হলো, “চকবাজার কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্টে কাস্টমারের সাথে কর্তৃপক্ষের মা/রা/মা/রি”। মূল ভিডিওতে সমন্বয়কদের কোনো উল্লেখ নেই। ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করে সিপ্লাস টিভির সম্পাদক আলমগীর টিপুর সঙ্গে। তিনি ডিসমিসল্যাবকে জানান যে সমন্বয়কদের মারধর করা হয়েছে– এমন কোন সংবাদ তারা করেননি। কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁর চকবাজার শাখায় যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, রেস্তোরাঁর বাইরে দুইজন ব্যক্তি মারামারি করতে করতে রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়ে। পরবর্তীতে তাদের রেস্টুরেন্ট থেকে বের করে দেয়া হয়। সমন্বয়কদের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তারা এই বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান ডিসমিসল্যাবকে। কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁর কাছে অবস্থিত চকবাজার থানাতেও যোগাযোগ করে ডিসমিসল্যাব। থানা থেকে জানানো হয় যে হাতাহাতি হওয়ার ঘটনাটি সত্য হলেও, এই ঘটনায় কোনো সমন্বয়কের সংশ্লিষ্টতার তথ্য তাদের কাছে নেই।

এছাড়া একটি পোস্টে এই ভিডিওর সঙ্গে আরেকটি ভিডিও যুক্ত করে দাবি করা হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বয়ক কান ধরে মাফ চেয়েছে। এই ভিডিওটি যাচাইয়ে দেখা যায় এটি ১২ নভেম্বরের একটি ঘটনার দৃশ্য। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলনের মধ্যে সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নুর নবী নামের একজন শিক্ষার্থী নিজেকে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দিয়ে প্রশাসনের পক্ষে কথা বলেন। পরবর্তীতে নুর নবী শিক্ষার্থীদের সামনে কান ধরে ক্ষমা চান। এটি মূলত সেই ঘটনার দৃশ্য।

আরো কিছু লেখা