তামারা ইয়াসমীন তমা
৩১ ঘণ্টা পর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনাটি চলমান আন্দোলন সংশ্লিষ্ট নয়
তামারা ইয়াসমীন তমা
ফারদিন নামের একজন কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু নিয়ে সম্প্রতি সময় টিভির পুরোনো ফটোকার্ড নতুন করে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা হচ্ছে। ব্যবহারকারীদের অনেকেই ফটোকার্ডটিকে সাম্প্রতিক কোটা আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী ভেবে মন্তব্য ও শেয়ার করছেন। তবে যাচাইয়ে দেখা যায়, ফরিদপুরের কুমার নদে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। ৩১ ঘণ্টা পর মরদেহ উদ্ধারের সংবাদ জানিয়ে গত ৫ জুলাই সময় টিভি ফটোকার্ডটি প্রকাশ করে।
গত ২৫ জুলাই জিয়া বিডি নামের একটি ফেসবুক পেজে সময় টিভির লোগো সম্বলিত ফটোকার্ডের স্ক্রিনশট দেওয়া হয়। স্ক্রিনশটটি একটি টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া। কার্ডে একজন কিশোরের সাদাকালো ছবির সঙ্গে লেখা “৩১ ঘণ্টা পর খুঁজে পাওয়া গেল কলেজ শিক্ষার্থী ফারদিনের ম’র’দেহ”। প্রায় সাত হাজার বার ফেসবুকে কার্ডটি শেয়ার করা হয়। কোটা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত সেভ বাংলাদেশি স্টুডেন্টস হ্যাশট্যাগ ও স্টেপ ডাউন হাসিনা হ্যাশট্যাগ দুটো ব্যবহার করেও পোস্টটি একজন শেয়ার করেন।
ফটোকার্ড বা স্ক্রিনশটের সঙ্গে ক্যাপশনে কোনো লেখা না থাকলেও অনেকেই ছেলেটি চলমান আন্দোলনের সহিংসতায় নিহত হয়েছে মনে করে মন্তব্য করেছেন। মন্তব্যের ঘরে একজন লিখেছেন, “আহারে,,,এত সুন্দর সোনার টুকরা ছেলেটা। কার বুক খালি হল। এর বিচার কবে হবে?” আরেকজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে প্রত্যেকটা ফ্যামিলির তাদের ছেলে বা ভাই যেই শহীদ হয়েছে তাকে নিয়ে একটা ভিডিও বানানো উচিত এবং সেই ভিডিওটা ফেসবুকে পোস্ট করা উচিত তাহলে বাংলাদেশের জনগণ এবং সারা বিশ্বের জনগণ দেখতে পারবে ছাত্র আন্দোলনের কতজন ছাত্র শহীদ হয়েছে।”
তবে কেটে ছোট করার কারণে ফটোকার্ডটি কত তারিখের তা দেখার সুযোগ নেই। যে টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে কার্ডটি নেওয়া তা জলছাপ আকারে দেখা যায়। ইউজার নেমটি যাচাই করে দেখা যায়, টিকটক অ্যাকাউন্টটি ব্যান করা হয়েছে। স্ক্রিনশটটি রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে গত ৫ জুলাই সময় টিভির জাতীয় সংবাদ সংক্রান্ত ফেসবুক পেজ বাংলার সময়ে মূল ফটোকার্ড পাওয়া যায়। মূল কার্ডের ক্যাপশনে লেখা, “ফরিদপুর শহরের কুমার নদ থেকে ফারদিনের ম’র’দে’হ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা।”
কার্ডের সঙ্গে ৫ জুলাই সময় টিভির অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত সংবাদের লিংকও যুক্ত রয়েছে। মূল সংবাদ থেকে জানা যায়, ফারদিন ফরিদপুরের সরকারি ইয়াছিন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। গত ৩ জুলাই বিকেলে শহরের মদনখালী স্লুইস গেটে বন্ধুদের সঙ্গে তিনি গোসলে নামেন। একপর্যায়ে ফারদিন স্লুইস গেটের উপর থেকে লাফ দেন এবং পানির স্রোতে তলিয়ে যান। পরদিন ৪ জুলাই স্থানীয়রা কুমার নদ থেকে ফারদিনের লাশ উদ্ধার করে।
কোটা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার পর গত ১৭ জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। আবু সাঈদের আগে আন্দোলন সংশ্লিষ্ট কোনো শিক্ষার্থীর নিহত হওয়ার খবর জানা যায় না। অর্থাৎ, গত ৫ জুলাই ফরিদপুরে উদ্ধার হওয়া নিহত শিক্ষার্থী ফারদিন চলমান আন্দোলনে মৃত্যুবরণ করেননি।