সুদেষ্ণা মহাজন অর্পা
আশুলিয়ার পুরোনো ভিডিও ছড়াচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের দাবিতে
সুদেষ্ণা মহাজন অর্পা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, শিক্ষার্থী এবং গ্রামবাসীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ চলছে এমন দাবিতে একটি ভিডিও ছড়িয়েছে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওটি ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সাভারের আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষের একটি পুরোনো ভিডিও।
“সাদিয়া সুলতানা” নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে ২ সেপ্টেম্বর একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ৪৫ সেকেন্ডের ভিডিওটির বিবরণে লেখা, “এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনাবাহিনী-র্যাবের একাধিক গাড়ি-ভাংচুর। সেনাবাহিনী-শিক্ষার্থী এবং গ্রামবাসিদের মধ্যে চলছে ত্রি-মুখী সংঘর্ষ,,,গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে সোনার বাংলাদেশ!”
একই দাবিতে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে বেশকিছু ফেসবুক পেজ ও প্রোফাইল থেকে (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭)। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে র্যাবের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। রাস্তায় সশস্ত্র অবস্থান করছেন র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। একজন ব্যবহারকারীর পোস্ট করা ভিডিও এখন পর্যন্ত ২ হাজারের বেশিবার দেখা হয়েছে।
ঘটনাটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ফ্রেম ধরে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলের একটি শর্টস ভিডিও খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রচারিত সেই ভিডিওটির সঙ্গে সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা বলে ছড়ানো ভিডিও ফুটেজের মিল পাওয়া যায়। চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের সেই ভিডিওটির বিবরণে লেখা, “আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে একজন নিহত। #ashulia” অন্য একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে একই দিনে দেড় মিনিটের একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়। এই ভিডিওর প্রথম ৪৫ সেকেন্ডের সঙ্গে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া ভিডিটির হুবহু মিল আছে। অর্থাৎ ত্রিমুখী সংঘর্ঘের দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি গত বছর সাভারের আশুলিয়ায় সংঘটিত শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের একটি খন্ডচিত্র।
এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড ধরে সার্চ করলে একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত অনলাইন প্রতিবেদন (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬) খুঁজে পাওয়া যায়। সব প্রতিবেদনই প্রকাশিত হয়েছে ৩০ সেপ্টেম্বর। এসব প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জিরাবো এলাকার মণ্ডল গ্রুপের কারখানার সামনে শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকেরা র্যাব ও পুলিশের অন্তত পাঁচটি গাড়িতে ভাঙচুর চালান। এসময় একজন নিহত ও ৩০ জন আহত হন। একই তথ্য জানিয়ে আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যম (১, ২, ৩) সেসময় ভিডিওটি শেয়ার করে।
অর্থাৎ এক বছর আগের পুরোনো ভিডিওকে সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, শিক্ষার্থী এবং গ্রামবাসীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা সঠিক নয়।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ আগস্ট, ভাড়া বাসার দারোয়ান এক ছাত্রীকে মারধর করেছেন এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় দুইশরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে।