নোশিন তাবাসসুম

নোয়াখালীতে অস্ত্রসহ শিবির কর্মী আটকের দাবিতে ছড়ানো দুটি ছবিই পুরোনো
নোশিন তাবাসসুম
নোয়াখালীতে পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ দুই শিবির কর্মী আটক হয়েছে দাবিতে দুটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ডিসমিসল্যাব ফ্যাক্টচেক করে দেখেছে, গ্রেপ্তারকৃতদের একটি ছবি আসলে ২০২১ সালের অক্টোবরে মৌলভীবাজারে পুলিশের এক অভিযানে দুই শিবির নেতাকে গ্রেপ্তারের ছবি। এবং দ্বিতীয় ছবিটি ২০২২ সালে রাজধানীর পল্টনের ‘’শিকার ও শিকারী’ নামের একটি বন্দুকের দোকানে তোলা অস্ত্রের ছবি।
ফেসবুকের একটি ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে ছবিগুলো পোস্ট করা হয়। ক্যাপশনে বলা হয়, “নোয়াখালীতে পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ দুই শি#বি#র কর্মী আটক।” এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পোস্টটি ১ হাজার ৪০০ বার শেয়ার হয়েছে। একই দাবি করে ফেসবুকের একাধিক ব্যক্তিগত প্রোফাইল (১, ২, ৩, ৪, ৫), পেজ (১, ২, ৩) এবং গ্রুপ (১, ২) থেকে ছবিগুলো পোস্ট হতে দেখা যায়।

একটি ছবিতে দেখা যায়, সাদা রঙ-এর পাঞ্জাবী পরিহিত দুইজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন। একজনের মাথায় খয়েরী রঙের টুপি। এই ব্যক্তির বাঁ পাশে মাস্ক পরিহিত এক পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে আছেন। অপর ব্যক্তির ডান পাশে কালো টি-শার্ট এবং ডিবির জ্যাকেট পরিহিত এক ব্যক্তি দাঁড়ানো। তার পিছনে আরেকজন ব্যক্তিকে লক্ষ্য করা যায়।
ডিসমিসল্যাব ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে একুশে টিভির একটি প্রতিবেদন পায়। ২০২১ সালের ১৬ অক্টোবরে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে ব্যবহৃত ছবির সাথে ছড়িয়ে পড়া পোস্টের একটি ছবি হুবহু সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, “মৌলভীবাজার শহরের পূর্ব সুলতানপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল সংখ্যক জিহাদী বই, লিফলেটসহ দুই শিবির নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) হাসান মোঃ নাসের রিকাবদার। তাদের কাছ থেকে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের জিহাদী বই, লিফলেট, চাঁদা আদায়ের রশিদ, মোবাইল ফোনসহ ২৬ ধরণের শতাধিক বই উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।”

এই ঘটনা নিয়ে সে সময় একাধিক (১, ২, ৩, ৪) প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনগুলোতেও ছড়িয়ে পড়া ছবিটি দেখা যায়। উল্লেখ্য, কোনো প্রতিবেদনেই আটককৃত ব্যক্তিদের থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে এমন কোনো তথ্যের উল্লেখ নেই।
আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, খয়েরী রঙের কাগজের উপর ৬টি অস্ত্র রাখা। ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে দ্যা ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদন সামনে আসে। ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত একটি ছবির সাথে ছড়িয়ে পড়া পোস্টের একটি ছবি হুবহু সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল, “নাসির আহমেদ: বন্দুক বিক্রেতাদের শেষ প্রজন্ম”। প্রতিবেদনটি মূলত ছিল রাজধানীর পল্টনে ‘’শিকার ও শিকারী’ নামের একটি বন্দুকের দোকান এবং দোকানের মালিক নাসির আহমেদকে নিয়ে।

এই প্রতিবেদনে দোকানে থাকা বেশ কিছু অস্ত্র দেখানো হয়েছিল। যার মাঝে একটি ছবির সাথে ছড়িয়ে পড়া অস্ত্রের ছবিটির হুবহু মিল রয়েছে। পাশাপাশি, ছবির আলোকচিত্রী নূর-এ-আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ডিসমিসল্যাবকে নিশ্চিত করে বলেছেন যে বন্দুকের দোকানটিতে অস্ত্রের এই ছবিটি তার তোলা। প্রতিবেদনের জন্য এই ছবিটি তুলেছিলেন বলে জানান।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, “পল্টনে একটি বন্দুকের দোকান পরিচালনা করেন ৮৪ বছর বয়সী নাসির আহমেদ। তার দোকানের নাম ‘শিকার ও শিকারী’। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অ্যাগেইনস্ট টিউবারকালোসিস-এ কান্ট্রি কোঅর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করতেন নাসির আহমেদ। কিন্তু বন্দুকের প্রতি ভালোবাসার জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়ে ১৯৮০ সালে ঢাকায় একটি বন্দুকের দোকান দিয়ে বসেন।”
অর্থাৎ, নোয়াখালীতে পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ শিবির কর্মী আটক হওয়ার দাবির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই।