নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
খাগড়াছড়িতে গত বছরের গোলাগুলির ভিডিও ছড়াচ্ছে ঢাকার সাম্প্রতিক ঘটনা দাবিতে

খাগড়াছড়িতে গত বছরের গোলাগুলির ভিডিও ছড়াচ্ছে ঢাকার সাম্প্রতিক ঘটনা দাবিতে

নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

রাজধানীতে সেনাবাহিনীর সাথে সন্ত্রাসীদের তুমুল গোলাগুলি হচ্ছে এমন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়েছে। সাম্প্রতিক দাবিতে ছড়ালেও ডিসমিসল্যাব ফ্যাক্টচেকে দেখা যায়, ভিডিওটি গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির সদরের নারাঙহিয়া রেডস্কোয়ার এলাকার।

ফেসবুকের একটি ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে ১৩ ডিসেম্বর একটি ভিডিও পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়, “এই মুহূর্তে রাজধানীতে সেনাবাহিনীর সাথে সন্ত্রাসীদের তুমুল গোলাগুলি হচ্ছে,,সুখোর ইউনুছ দেশটাকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিনত করেছে,, হাঠাও ইউনুছ বাঁচাও দেশ।” ভিডিওটি ৬ হাজারের বেশিবার দেখা হয়েছে। ৫৫ সেকেন্ডের ভিডিওর ডানে উপরে “সিএইচটি নিউজ” এর লোগো দেখা যায়। 

ফেসবুকের একাধিক (, , , ) ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকেও একই দাবিতে ভিডিওটি পোস্ট করতে দেখা যায়।

সত্যতা যাচাইয়ে কিফ্রেম ধরে সার্চ করলে, সিএইচটি নিউজের ২০২৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা, “খাগড়াছড়ির সদরের নারাঙহিয়া রেডস্কোয়ার এলাকায় যেভাবে গুলিবর্ষণ করে সেনাবাহিনী! দীঘিনালায় পাহাড়িদের ওপর সেটলার হামলার প্রতিবাদে খাগড়াছড়ি -পানছড়ি সড়কে রেডস্কোয়ার এলাকায় অবরোধকারী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে সেনাবাহিনী গুলিবর্ষণ করে। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রাতে এ ঘটনা ঘটে।” এ ভিডিওর সাথে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। 

এ ঘটনা নিয়ে একাধিক (, , , , ) সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোতে এ প্রসঙ্গে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে মোটরসাইকেল চুরিকে কেন্দ্র করে গণপিটুনিতে মো. মামুন (৩০) নামের এক বাঙালি যুবকের মৃত্যুর পর সংঘর্ষ শুরু হয়।

ওই দিন সেখানকার পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। হত্যার এ ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে দীঘিনালায় বাঙালিরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বাঙালিদের অভিযোগ, মিছিলটি বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় পাহাড়িরা বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। দীঘিনালা উপজেলায় সংঘর্ষের জেরে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, পানছড়ি ও আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার রাতে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় তিনজন নিহত হন। 

২০২৪ সালের ৫ অক্টোবর সিএইচটি নিউজের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, “গত ১৮-১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খাগড়াছড়ি সদরে ও দীঘিনালায় এবং ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রাঙ্গামাটি সদরে বিশেষ মহলের সহযোগিতায় সেটেলার বাঙালিরা পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়সহ জুম্ম জনগণের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা ও জুম্মদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ও ঘরবাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা সংঘটিত করেছে। উক্ত সাম্প্রদায়িক হামলায় ৪ জন জুম্ম নিহত হয়েছে (সেটেলার বাঙালি কর্তৃক দীঘিনালায় একজন জুম্ম, খাগড়াছড়ি সদরে সেনাবাহিনীর গুলিতে ২ জন জুম্ম এবং রাঙ্গামাটি সদরে সেটেলার বাঙালি কর্তৃক একজন জুম্ম)। এছাড়া এই সাম্প্রদায়িক হামলায় শতাধিক জুম্ম আহত হয়েছে, অগ্নিসংযোগে ভস্মীভূত ও লুণ্ঠিত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়সহ শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট।” 

অর্থাৎ, ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি এক বছর আগের খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষের ঘটনার, যা ভুয়া দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে।

আরো কিছু লেখা