মো. তৌহিদুল ইসলাম

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার শিবির সভাপতি দাবিতে ভারতের বাস কন্ডাক্টরের ভিডিও প্রচার
মো. তৌহিদুল ইসলাম
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ছাত্রশিবির সভাপতি বাসে একজন নারীর সঙ্গে আটক হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ডিসমিসল্যাবের ফ্যাক্ট চেকিংয়ে দেখা গেছে, ভিডিওটি ভারতের। দেশটির একাধিক গণমাধ্যম অনুসারে ভিডিওর ওই ব্যক্তির নাম গোবিন্দ সিং। তিনি উত্তর প্রদেশের সড়ক পরিবহন করপোরেশনের একজন বাস কন্ডাক্টর।
বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত ৩ অক্টোবর ভিডিওটি আপলোড করা হয়। ক্যাপশনে লেখা হয়, “কুমিল্লা নাঙ্গলকোট উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি বাস যাতায়াত করার সময়ে মহিলা সহ আটক। লজ্জা হওয়া উচিত, সেই সকল ধর্ম ব্যবসায়ীদের।” এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভিডিওটি ২৯০বারের বেশি শেয়ার করা হয়। উক্ত পেজ ছাড়াও আরও একাধিক প্রোফাইল ও পেজ থেকেও ভিডিওটি ছড়াতে দেখা যায় (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭)।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ভিডিওটির একাধিক কিফ্রেম সার্চ করা হয়। এতে ইন্সটাগ্রামে আপলোড হওয়া একই দৃশ্য সম্বলিত একটি পুরনো ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি “লেটস আনমিউট ইন্ডিয়া” নামের একটি ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০২৩ সালের ১ জুলাই আপলোড করা হয়েছিল। ক্যাপশনে লেখা ছিল, “চলন্ত বাসে যৌন সম্পর্কের সময় ধরা খেল বাস কন্ডাক্টর #উত্তরপ্রদেশ।”

পরবর্তী যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করে একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ঘটনাটি নিয়ে প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায় (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬)। এসব প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটি ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ঘটনার। গোবিন্দ সিং নামের একজন বাস কন্ডাক্টরকে এক নারীর সঙ্গে অপ্রীতিকর অবস্থায় পেয়ে বাসের যাত্রীরা ভিডিওটি ধারণ করেন।
দ্য ডেইলি জাগরণ নামের ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ২০২৩ সালের ১ জুলাই প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনামে লেখা হয়, “চলন্ত বাসে নারী সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার কন্ডাক্টর; এফআইআর দায়ের।” প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়, ভারতের উত্তর প্রদেশের হাতরাস বাস ডিপোর একটি চলন্ত বাসে এমন ঘটনা ঘটে। বাসের যাত্রীরা এই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করেন। পরবর্তীকালে তা সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পরে ও ভাইরাল হয়।

ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ বাসটির চালক ও কন্ডাক্টরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে তাদের চুক্তি বাতিল করে বলেও জানায় দ্য ডেইলি জাগরণ। এছাড়াও লেটেস্টলি নামের একটি সংবাদমাধ্যমেও একই তথ্য বর্নণা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এপিবি আনন্দ নামের আরেকটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অভিযুক্ত বাস কন্ডাক্টরের নাম গোবিন্দ সিং। এপিবি আনন্দ ছাড়াও একাধিক অনলাইন সংবাদমাধ্যমেও বাস কন্ডাক্টরের নাম গোবিন্দ সিং বলে জানানো হয় (১, ২) ।
অর্থাৎ, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার শিবির সভাপফতিকে আটক করার দৃশ্য বলে ছড়ানো ভিডিওটি আসলে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি পুরনো ঘটনা। ভিডিওটিতে দেখানো ব্যক্তি ভারতের উত্তর প্রদেশের সড়ক পরিবহন করপোরেশনের একজন বাস কন্ডাক্টর। যার নাম গোবিন্দ সিং।