তামারা ইয়াসমীন তমা

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের প্রচারণায় ব্যবহৃত ছবিটি সম্পর্কে যা জানা গেল
This article is more than 1 year old

পাটপাতা না গাঁজাপাতা?

পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের প্রচারণায় ব্যবহৃত ছবিটি সম্পর্কে যা জানা গেল

তামারা ইয়াসমীন তমা

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

৬ মার্চ, জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকারের পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের প্রচারণায় ব্যবহৃত একটি ছবি নিয়ে শোরগোল উঠেছে সামাজিক মাধ্যমে। সেখানে ব্যবহৃত পাতার ছবিটি পাটগাছের কিনা– তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা গেছে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের প্রচারণায় ব্যবহৃত পাতার ছবিটি পাটগাছের নয়, বরং গাঁজার। এবং সেখানে ব্যবহৃত পুরো ছবিটিই নেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট থেকে।

সোমবার বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে (বিডিনিউজ২৪, বাংলানিউজ২৪, দেশ রূপান্তর) পাট দিবসের প্রচারণায় ব্যবহৃত অচেনা পাতা নিয়ে বিতর্কের সংবাদ প্রকাশ করে। এরপর তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। 

এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈকত চন্দ্র হালদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, “সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা জানিয়েছেন এ ধরনের এক প্রজাতির পাট রয়েছে। সেই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।”

তবে সৈকত হালদারের এই বক্তব্য খণ্ডন করে পাটের জিন বিন্যাস আবিষ্কারের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী ইউজিসি অধ্যাপক ড. হাসিনা খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, “ছবিতে ব্যবহৃত পাতাটি ‘কেনাফ’ এর হতে পারে। এটাও এ ধরনের আঁশ তৈরি করে। তবে এটা পাট পাতা নয়।”

পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের প্রচারণায় ব্যবহৃত ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে হুবহু একই ছবি পাওয়া যায় আইস্টক, শাটারস্টক, অ্যাডোবি স্টকের মতো ছবি-ভিডিওর মার্কেটপ্লেসে। তিনটি ওয়েবসাইটেই ছবির বর্ণনায় লেখা হয়েছে, “cannabis leaf hemp fabric texture”। অর্থাৎ, গাঁজার পাতা হেম্প ফেব্রিক টেক্সচার। আইস্টকের সূত্র উল্লেখ করে এই ওয়েবসাইটে ছবিটি প্রকাশিত হয়েছে। আরও কিছু ওয়েবসাইটে (, , , ) ছবিটি পাওয়া যায়। সব জায়গাতেই আলোচ্য বিষয়বস্তু ছিল হেম্প বা গাঁজা থেকে উৎপাদিত কাপড় বা ফেব্রিক।

হেম্প ফেব্রিক মূলত ক্যানাবিস স্যাটিভা গাছের আঁশ থেকে তৈরি কাপড়। এই প্রজাতির উদ্ভিদ বিশেষভাবে পরিচিত নেশাজাতীয় দ্রব্য, গাঁজা বা হাশিস উৎপাদনের জন্য। তবে ক্যানাবিস স্যাটিভার যে ধরনটি থেকে ফেব্রিক উৎপাদন হয়— সেটিতে নেশা তৈরিকারী উপাদান টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল (টিএইচসি) কম থাকে। ২০২৮ সাল নাগাদ হেম্প ফেব্রিকের বৈশ্বিক বাজার মূল্য ১০.১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটের প্রতিবেদনে।

মার্কেটপ্লেসগুলোর মধ্যে ছবিটি আইস্টকে সবার আগে আপলোড করা হয় ২০১৯ সালের ২ জুন। সেখানে ছবিটির কন্ট্রিবিউটর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ওলেগ মালিশেভ-এর নাম। 

ছবির আরেকটি মার্কেটপ্লেস, ওয়ান টু থ্রি আরএফ-এও ওলেগ মালিশেভ নামের প্রোফাইল থেকে একই শিরোনামের ছবি পাওয়া যায়। এখানে ওলেগের প্রোফাইলের বর্ণনায় তার নাম এল রই (El Roi) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ওলেগ মালিশেভের লোকেশন বেলারুশ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। অ্যাডোবি স্টকেও একই শিরোনামে ছবিটি আপলোড করা হয়। এখানকার কন্ট্রিবিউটরের নাম এলরই (Elroi)।

অর্থাৎ, ওলেগ মালিশেভ বা এল রই দুজনই একই ব্যক্তি। তিনিই মূল ছবিটি সব মার্কেটপ্লেসে আপলোড করেছেন। আলোকচিত্রী ওলেগের দেয়া বর্ণনা অনুযায়ী, ফেব্রিক বা কাপড় উৎপাদনে ব্যবহৃত গাঁজা বা হেম্পের পাতার ছবি। কোথাও বলা হয়নি, ছবিটি পাটের কোনো জাতের।ওলেগ প্রায়ই গাঁজাপাতার ছবি তুলে থাকেন এবং তাঁর তোলা গাঁজাপাতার ছবি দেশী বিদেশী বিভিন্ন গণমাধ্যম ব্যবহার করে থাকে, এমনকি গেটি ইমেজেসেও তা পাওয়া যায়। নিচের ছবিতে এমন আরও বেশ কিছু উদাহরণ পাবেন।

আরো কিছু লেখা