নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
অক্টোবর ৮, ২০২৫
১৮:০১:৫২
বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ভিডিও ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মিছিল দাবিতে প্রচার

বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ভিডিও ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মিছিল দাবিতে প্রচার

অক্টোবর ৮, ২০২৫
১৮:০১:৫২

নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্ট রাত ১১টায় জয় বাংলা স্লোগানে উত্তাল-দাবিতে ৮ আগস্ট সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ডিসমিসল্যাব ফ্যাক্টচেক করে দেখেছে, ভিডিওটি অন্তত এক মাস আগের। মূলত, ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)-র শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বহিরাগতদের সংঘর্ষের ঘটনার প্রতিবাদে হওয়া মিছিলের ভিডিওকে ভিন্ন দাবিতে ছড়ানো হয়েছে। 

ফেসবুকের একটি প্রোফাইল থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টের বিবরণীতে বলা হয়েছে, “আজ রাতের ঢাকা”। ভিডিওর ভেতরে লেখা, “রাত ১১টায় ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্ট জয় বাংলা স্লোগানে উত্তাল”।

ছড়িয়ে পড়া ২৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একটি মিছিল এগিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার এক পাশে বিভিন্ন রঙের বাতি জ্বলতে দেখা যায়। মিছিলের সামনের দিকেও একইরকম বাতি দেখা যায়। ভিডিওতে “জয় বাংলা” স্লোগানটি শোনা না গেলেও “শেখ হাসিনার কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে”, “আমরা সবাই মুজিব সেনা, ভয় করি না বুলেট বোমা” স্লোগানগুলো শোনা যায়। এই প্রতিবেদন লেখার আগ পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ বার দেখা হয়েছে ভিডিওটি। শেয়ার হয়েছে প্রায় ৮০০ বার।

ফেসবুকের একাধিক গ্রুপ (, , ) এবং প্রোফাইল থেকে একই দাবিতে ভিডিওটি শেয়ার করতে দেখা গেছে।  

ভিডিওটির কিফ্রেম ধরে খোঁজার পর চলতি বছরের ৩১ আগস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সাথে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর দৃশ্যের মিল লক্ষ্য করা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলনকারীদের উপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। রবিবার (৩১ আগস্ট) রাত পৌনে ৮টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের আশপাশে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের উপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। হামলার ঘটনায় সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।” 

ভিডিওটির কিছু কিফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। ৩১ আগস্টে “ইট’জ ময়মনসিংহ” নামের একটি পেজ থেকে হুবহু একই ভিডিও পোস্ট হতে দেখা যায়। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা, “উত্তপ্ত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। কি এক অবস্থা শুরু হলো, বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।” একই ভিডিও ১ সেপ্টেম্বরে একাধিক ফেসবুক প্রোফাইল (, ) এবং পেজ (, ) থেকে পোস্ট করা হয়েছিলো। প্রতিটি পোস্টেই ভিডিওটিকে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসেবে দাবি করা হয়।

৩১ আগস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বরে ছড়ানো ভিডিওগুলোতে “জয় বাংলা”, “শেখ হাসিনার কিছু হলে” বা “আমরা সবাই মুজিব সেনা” স্লোগানগুলো শোনা যায়নি।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে ওই ঘটনার একাধিক (, , , ) প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রথম আলোর ১ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিলো, “শিক্ষকদের অবরুদ্ধ, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ”। প্রতিবেদনে বলা হয়, “কম্বাইন্ড বা সমন্বিত ডিগ্রির দাবিতে উপাচার্যসহ দুই শতাধিক শিক্ষককে অবরুদ্ধ করার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার জেরে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি আগামীকাল সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীদের ‘কম্বাইন্ড ডিগ্রি’র (বিএসসি ইন ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি) দাবিতে চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বেলা ১১টায় একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হয়। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে এ সভায় কম্বাইন্ড ডিগ্রি শুরুর পাশাপাশি পশুপালন ও ভেটেরিনারি ডিগ্রিও চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়। তবে মোট তিনটি ডিগ্রির সিদ্ধান্ত মানতে রাজি হননি পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদের দুই শতাধিক শিক্ষক অংশ নেন। সভা শেষে তিন ডিগ্রির সিদ্ধান্ত ঘোষণা দেওয়া হলে ‘এক পেশায় এক ডিগ্রির (কম্বাইন্ড ডিগ্রি)’ দাবিতে মিলনায়তনে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়াসহ অন্য শিক্ষকেরা। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) সৈয়দ শাহনেওয়াজ মোর্শেদ অপু। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠি হাতে হামলা চালান একদল ব্যক্তি। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে তাঁরা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের তালা খুলে শিক্ষকদের বের করে দেন।

অর্থাৎ, জয় বাংলা স্লোগানের দাবিতে ছড়িয়ে পড়া মিছিলের ভিডিওটি ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার পুরোনো ভিডিও।

আরো কিছু লেখা