নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
ছাত্রলীগ নেতাকে কারাগারে নেওয়ার ভিডিও ছড়াচ্ছে জামায়াত নেতাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে

ছাত্রলীগ নেতাকে কারাগারে নেওয়ার ভিডিও ছড়াচ্ছে জামায়াত নেতাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে

নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ জামায়াত নেতাকে মানিকগঞ্জ খালপাড় এলাকায় এস এ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়েছে। তবে ডিসমিসল্যাবের ফ্যাক্টচেকে দেখা যায়, মূল ভিডিওটি ঢাকার। গত ১ ডিসেম্বর আদালতে শুনানি শেষে ছাত্রলীগ নেতা মিলন খানকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময়ের ভিডিও। 

ফেসবুকের একটি ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে ২৪ ডিসেম্বর একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়, “👉মানিকগঞ্জ খালপার এলাকায় এস এ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিস থেকে বিপুল পরিমাণ ই’য়াবা”সহ  জামা’ত নেতা গ্রেপ্তার❗👉জামা’ত যেহেতু করেছে অবশ্যই হালাল❗।” ৭ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, লাল পাঞ্জাবি পরা এক ব্যক্তিকে পুলিশ টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

সত্যতা যাচাইয়ে, ভিডিওর বিভিন্ন কিফ্রেম ধরে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ডিসমিসল্যাবের সামনে আসে গত ১ ডিসেম্বর একটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর একটি পোস্ট। পোস্টে একটি ভিডিও ও ছবি দেখা যায়। ক্যাপশনে লেখা, “”মেরে ফেলেন তাও বলবো জয় বাংলা” ছাত্রনেতা স্নেহের মিলন খান ✊✊মহাজন মামলা-হামলা দিয়ে দাবায়ে রাখতে পারবা না.. বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মিলন খান ও ধানমন্ডির ২২নং ওয়ার্ড যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক শওকত বাবু’র গ্রেপ্তারে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অবিলম্বে মুক্তি চাই, দিতে হবে”। এ ভিডিওর সাথে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকেও গত ১ ডিসেম্বর একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়, যেখানে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর ব্যক্তিকে লক্ষ্য করা যায়। এর বাইরে একাধিক (, , ) অনলাইন পোর্টালে ওই ব্যক্তির ছবিযুক্ত ফটোকার্ড পাওয়া যায় যেখানে আটককৃত ব্যক্তিকে ছাত্রলীগ নেতা বলা হয়।

আরও বিস্তারিত জানতে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করলে, একাধিক গণমাধ্যমে (, , ) এ ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ২ ডিসেম্বরে বাংলা ট্রিবিউন এ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত দুই আসামি ও অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জন ৩০ নভেম্বর বিকেলে সোবহানবাগ মসজিদের সামনে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইন্সটিটিউটের সামনে সরকারবিরোধী স্লোগান দিচ্ছিলেন। এসময় দৌড়ে পালানোর সময় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ধানমন্ডি থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় ঢাবির সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের এই ছাত্রলীগ নেতাসহ দুজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। ১ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদন নিয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহ এ আদেশ দেন। প্রতিবেদন বলা হয়, “আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখি তাদের জামিন আবেদন করেন। তবে জামিন নামঞ্জুর করে আদালত তাদের কারাগারে পাঠান।” 

এছাড়া ছড়িয়ে পড়া দাবিটির প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করলে, দেশ টিভির ২৪ ডিসেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “এস এ পরিবহন কুরিয়ারে মাদক পাচার: আটক শাহীন।”

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এস এ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাচার করা ইয়াবা গ্রহণের সময় র‍্যাবের অভিযানে লিয়াকত আলী ওরফে শাহীন (৪২) নামে এক মাদক কারবারিকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মানিকগঞ্জ শহরের খালপাড় এলাকায় অবস্থিত এস এ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিস থেকে তাকে আটক করে র‍্যাব-৪।

এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সাথে ছড়িয়ে পড়া ছবিটির ব্যক্তির কোনো মিল নেই। অর্থাৎ মানিকগঞ্জে মাদকসহ এক ব্যক্তিকে র‍্যাব আটক করলেও তার সাথে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর ব্যক্তিটির কোনো মিল নেই। 

অর্থাৎ, ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা মিলন খানকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময়ের ভিডিও, যা ভুল দাবিতে ছড়াচ্ছে। 

আরো কিছু লেখা