মো. তৌহিদুল ইসলাম

বাংলাদেশে ইসকন জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে পিটিয়ে হত্যার দাবিতে ছড়ানো দৃশ্যটি নেপালের
মো. তৌহিদুল ইসলাম
বাংলাদেশে ইসকন জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে এক সনাতনধর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ফ্যাক্টচেক করে দেখা যায়, ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় বরং নেপালের।
“আমোরা হারবো না” নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত ২৮ অক্টোবর ভিডিওটি আপলোড করা হয়। ক্যাপশনে লেখা হয়, “ইস্কন জ*ঙ্গি ট্যাগ দিয়ে সনাতন ধর্মের হিন্দু ছেলেটিকে পিটিয়ে হ*ত্যা করল তৌহিদী জনতা নামের কুলাঙ্গাররা..।” হ্যাশট্যাগ দিয়ে লেখা হয়, #জঙ্গি #মব_সন্ত্রাস #বাংলাদেশ। ভিডিওটির দৈর্ঘ্য ৪৯ সেকেন্ড। ভিডিওটিতে দেখা যায়, একদল মানুষ এক পুরুষকে রাস্তায় ফেলে আঘাত করছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুইশর অধিক শেয়ার হয়েছে এই ভিডিও। এর বাইরে একাধিক প্রোফাইল ও পেজ থেকেও ভিডিওটি একই দাবিতে পোস্ট হতে দেখা গেছে (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭)।

ভিডিওর সত্যতা যাচাইয়ে একাধিক কিফ্রেম সার্চ করা হলে “নিশ্চল কবিতা ব্লগ” নামের একটি ফেসবুক পেজে হুবহু একই দৃশ্য সম্বলিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। গত ৯ সেপ্টেম্বর পোস্ট হওয়া ৫৫ সেকেন্ডের ভিডিওর ৭ সেকেন্ড পরবর্তী অংশের সঙ্গে সম্প্রতি ছড়ানো ভিডিওটির হুবহু মিল আছে।
ভিডিওর ক্যাপশনে নেপালি ভাষায় লেখা, “গতকাল যে ডিএসপি গুলি করেছে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।” এছাড়াও হ্যাশট্যাগ দিয়ে লেখা হয়েছে, #জেনজি ও #জেনজিরেভল্যুশন। পেজটির ট্রান্সপারেন্সি অংশ যাচাই করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এটি নেপাল থেকে পরিচালিত হয়।
পরবর্তী যাচাইয়ে সত্যতা নিশ্চিতের জন্য নেপালের তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান “নেপাল ফ্যাক্ট চেক”- এর এডিটর উমেশ শ্রেষ্ঠার সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিসমিসল্যাব। তিনি এই ভিডিওকে নেপালের ঘটনা বলে নিশ্চিত করেন।
উমেশ শ্রেষ্ঠা আরও জানান, “যে ভাষায় তারা কথা বলছে সেটিও নেপালের ভাষা। এটি সাম্প্রতিক জেনজি বিক্ষোভের একটি ঘটনা। ১৯ জন তরুণ বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করার পর জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং পরের দিন তারা পুলিশ অফিস ও সরকারি ভবনে আক্রমণ করে। তারা ৩ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। উনি (ভিডিওতে দেখানো ভুক্তভোগী) তাদের একজন।” তিনি ডিসমিসল্যাবকে জানান নিহত এই পুলিশ সদস্য হলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর অমৃত গুরুং।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত সেপ্টেম্বরে নেপালের জেন- জি আন্দোলনের সময় কটেশ্বর থানার সহকারী উপ_পরিদর্শক (এএসআই) অমৃত গুরুংকে বিক্ষোভকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে। একই সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, যেখানে তিনজন পুলিশ সদস্য নিহত হন।
অর্থাৎ, ইসকন জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে হত্যার দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। এটি নেপাল সংঘটিত গত সেপ্টেম্বর মাসে জেন-জি আন্দোলনের একটি ঘটনার।

