স্টিভ সালগ্রা রেমা

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
শিশু সন্তানকে একা ফেলে ১০ দিনের ভ্রমণে মা, ভিন্ন নারীর ভিডিও ভাইরাল

শিশু সন্তানকে একা ফেলে ১০ দিনের ভ্রমণে মা, ভিন্ন নারীর ভিডিও ভাইরাল

স্টিভ সালগ্রা রেমা

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

১৬ মাসের সন্তানকে একা রেখে মা দশ দিনের ভ্রমণে- এমন ক্যাপশনসহ একটি ভুল ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে যাকে দেখা যাচ্ছে, তার নাম ভ্যালেন্টিনা গ্লোরিয়া। ভয়াবহ মানসিক অসুস্থতা নিয়ে তিনি যখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তখন এই ভিডিওটি ধারণ করা হয়। দুটো ঘটনাই যুক্তরাষ্ট্রের। অন্য ঘটনায় শিশুটির করুণ মৃত্যু হয়, যাবজ্জীবন হয়েছে মা ক্রিসটেল ক্যানডেলারিওর।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ক্যাপশনে যাকে ক্রিসটেল ক্যানডেলারিও বলে দাবি করা হচ্ছে তিনি আসলে ভ্যালেন্টিনা গ্লোরিয়া। 

ভিডিওতে দেখা যায় কয়েকজন অস্ত্রধারী একজন নারীকে (ভ্যালেন্টিনা গ্লোরিয়া) বিছানায় শিকল দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করছেন, তাঁর হাত ও গোড়ালি হাতকড়া দিয়ে বাঁধা। এক পর্যায়ে ওই নারীকে আর্তচিৎকার করতেও শোনা যায়।

ডিসমিসল্যাব রিভার্স ইমেজ সার্চ করে পেয়েছে যে, ১৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি পাঁচ বছর আগের। এটি যুক্তরাষ্ট্রের এরিজোনা রাজ্যের ঘটনাভিডিওটিতে দেখা যায়, মানসিক রোগী ভ্যালেন্টিনা গ্লোরিয়াকে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা একটি বিছানায় হাতকড়া দিয়ে বাঁধছেন। ভিডিওর মাঝামাঝি সময়, ১১ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডে, তিনি একজন অফিসারের দিকে থুতু ছুড়ে মারেন। এই ঘটনার জন্য ভ্যালেন্টিনা প্রায় নয় মাস জেলে ছিলেন।

ভাইরাল ভিডিওটির মূল সূত্র

যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া আউটলেট ফিনিক্স নিউ টাইমস এর এক প্রতিবেদন বলছে, ভ্যালেন্টিনা সিজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিজঅর্ডারে ভুগছিলেন, যার প্রধান লক্ষণ হলো মানসিক অস্থিরতা, হ্যালুসিনেশন, এবং মিথ্যা ধারণা। ২০১৯ সালে কারারক্ষীদের ওপর হামলার কারণে ভ্যালেন্টিনার বিরুদ্ধে আরও দুটি গুরুতর অভিযোগ দায়ের করা হয়। 

ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে যে ঘটনার কথা বলা হচ্ছে সেটি গত বছরের। 

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ক্রিসটেল ক্যানডেলারিও ১৬ মাস বয়সী শিশুকে ঘরে একা রেখে ১০ দিনের ভ্রমণে গিয়েছিলেন। বেড়ানো শেষে তিনি ঘরে ফিরে নিজের সন্তানকে নিথর অবস্থায় দেখতে পান এবং পুলিশ এ খবর দেন। পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়, যেখানে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

গত ১৯ এপ্রিল একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট হতে দেখা যায়। ক্যাপশনে লেখা হয় “১৬ মাসের বাচ্চাকে তার মা দশ দিনের জন্য বাড়িতে একা রেখে ট্যুরে যায়। বাড়ি ফিরে এসে দেখে শিশুটির নিধর দেহ পড়ে আছে। শিশুটিকে মৃত বলে জানানো হয়, এমন মায়ের আমরা সবাই তার শাস্তি কামনা করেছিল এবং তার শাস্তির কিছু ফুটেজ সকলের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। বিস্তারিত খতিয়ে দেখিনি আমি। সংগৃহীত।”

একই ক্যাপশন দিয়ে ভিডিওটি আরো অনেকে পোস্ট করেছেন (, , , , , , , , )। কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেলেও (, ) এমন দাবির পোস্ট করা হয়।

ফেসবুকে এ ভিডিওটি শেয়ার করে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “মহিলার কত সাহস ১৬ মাসের বাচ্চাকে, দশ দিনের জন্য  একা ঘরে রেখে এত ঘুরতে যাওয়ার সাহস পায় কেমনে । আমি পাচ বছরের বাচ্চা ৩০ মিনিটের জন্য ঘরে রেখে পাশের রুমে আড্ডা দেই না। কোরিয়ার পাওয়া লটারি পর্যন্ত বিফলে গেলো শুধু বাচ্চা বাচ্চা করে । আল্লাহ এই মহিলারে হেদায়েত দান করুক।” আরেকজন লিখেছেন, “১৬ মাসের সন্তানকে ঘরে আটকে রেখে দশ দিনের জন্য এই মহিলা ঘুরতে যান। সন্তানওটি মারা যায়। বিদেশের আইনে সাজা কি রকম হয় দেখে নিন।”

মামলায় মা ক্রিসটেল ক্যানডেলারিওকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। এই মামলার শুনানিতে ক্যানডেলারিও দাবি করেন, ঘটনার সময় তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি বলেন, আমার বাচ্চা, জেলিনকে হারানোর জন্য আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। যা কিছু ঘটেছে তার জন্য আমি অত্যন্ত আহত। আমি আমার এই কাজের ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করছি না, তবে কেউ জানত না যে আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি এবং আমি কিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।”
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি যে ক্রিসটেল ক্যানডেলারিওর না, তা কোনো কোনো ফেসবুক পোস্টের নিচে কমেন্ট আকারে কেউ কেউ বলেছেন। তবে এর উত্তরে পোস্টদাতা ভিডিওটির কমেন্টসে  বলেন, “অনুগ্রহ করে আমাকে এই অভিযোগ করবেন না যে আমি ভিউ পাওয়ার জন্য ভুল ক্যাপশন দিয়েছি। আমি সেই স্থানে ছিলাম না, তবে যে ভিডিও আমি পোস্ট করেছি তা সঠিক ঘটনা অনুযায়ী। যদি ভুল হয়ে থাকে, আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি।”

আরো কিছু লেখা