আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
ভিডিওটি মার্কিন মন্ত্রীর উপর ফিলিস্তিনি সাংবাদিকের আক্রমণের নয়

ভিডিওটি মার্কিন মন্ত্রীর উপর ফিলিস্তিনি সাংবাদিকের আক্রমণের নয়

আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

মার্কিন মন্ত্রী সকল ফিলিস্তিনিকে হত্যা করতে বলার কারণে ফিলিস্তিনের এক মুসলিম সাংবাদিক তাকে লাফিয়ে হামলা করতে যাচ্ছেন – এমন দাবিতে একটি ভিডিও প্রচারিত হতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভিডিওটি যাচাইয়ে দেখা যায়, এটির সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করতে সম্মতি দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই এবং হামলাকারী ব্যক্তি সাংবাদিকও নন। ভিডিওটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদার এক বিচারপতির উপর ডেওব্রা রেডেন নামের একজন আসামীর করা হামলার ঘটনার। 

“আমেরিকান মন্ত্রী ফিলিস্তিনের সবাইকে হ’ত্যা করতে হ্যাঁ বলেছেন, সাথে সাথে ফিলিস্তিনি মুসলিম সাংবাদিক আ’ক্রা’ন্ত করে সিংহের মতো লাফিয়ে।”- এই ক্যাপশনে একটি ভিডিও ছড়াতে দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে। গত ৬ এপ্রিল ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ এবং প্রোফাইল থেকে ভিডিওটি প্রচারিত হতে দেখা যায় (, , , , , )। 

২৪ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি ইংরেজিতে বলছেন, “কিন্তু আমি মনে করি এখন সময় এসেছে তার ভিন্ন রকম কিছুর স্বাদ পাওয়া উচিত – এই ইতিহাস দেখে আমি পারছি না।” এরপর একজন ব্যক্তি হঠাৎ তার উপর লাফিয়ে পড়ে হামলা করে। শুরুতে কথা বলতে থাকা ব্যক্তিটির সামনে একটি ফলকে ‘জাজ ম্যারি …” লেখাটি দেখা যায়। একই ভিডিও প্রচারিত হতে দেখা যায় সামাজিক মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) এবং ইউটিউবেও (, , )।

ভিডিওটির সূত্র খুঁজতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে সিএনএন ইউএসের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ২০২৪ সালের ৪ জানুয়ারিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল, “সাজা ঘোষণার সময় একজন বিচারকের উপর আদালতে একজন আসামীর হিংসাত্মক আক্রমণ, এবং একজন মার্শাল ‘গুরুতর’ আঘাত পান।” প্রতিবেদনটিতে বলা হয় ক্লার্ক কাউন্টি জেলা আদালতের একটি ভিডিওতে দেখা যায় নেভাদার একজন বিচারক একজন আসামীর প্রবেশন আবেদন প্রত্যাখ্যান করার পরপরই আদালতে লাঞ্ছিত হন। সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামলার শিকার ব্যক্তির নাম বিচারপতি ম্যারি কে হোলথাস এবং হামলাকারী ব্যক্তির নাম ডেওব্রা রেডেন।

এই ঘটনায় একই দিনে প্রকাশিত নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী রেডেনের একটি মামলায় প্রবেশন আবেদন করলে বিচারপরি হোলথাস তা দিতে অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে রেডেনের অতীতে করা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের দিকে ইঙ্গিত করে বিচারপতি হোলথাস মন্তব্য করেন যে তার এবার ভিন্ন কিছুর স্বাদ পাওয়া উচিত। এই মন্তব্যের পরপরই ডেওব্রা রেডেন বিচারপতির উপরে হামলা করেন।

এই ঘটনাটির সঙ্গে ফিলিস্তিনে চলমান ইসরায়েলি গণহত্যার কোন সম্পর্ক নেই। ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে ভুলভাবে বিচারপতি হোলথাসকে মন্ত্রী এবং ডেওব্রা রেডেনকে ফিলিস্তিনি মুসলিম সাংবাদিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিচারপতি হোলথাসের করা মন্তব্যটিও ফিলিস্তিনিদের হত্যার ব্যাপারে সম্মতি দেয়ার ছিল না।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ মার্চে ইসরায়েলের হামলায় ১৫ জন জরুরি সেবাকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ হওয়ার পর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ভুলবশত এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানায়।  এই ঘটনার ৫ দিন আগে অর্থাৎ ১৮ মার্চ দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় ১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

আরো কিছু লেখা