ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
ভিডিওগুলো ইসরায়েলে ইরানি হামলার নয়, জোড়াতালি দিয়ে বানানো
This article is more than 2 months old

ভিডিওগুলো ইসরায়েলে ইরানি হামলার নয়, জোড়াতালি দিয়ে বানানো

ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

ইসরায়েলে সাম্প্রতিক ইরানের হামলার দৃশ্য দাবিতে ফেসবুকে বেশ কয়টি রিল (, , , ) ছড়িয়েছে। ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওগুলো ইসরায়েলের ওপর চালানো ইরানের কোনো হামলার নয়। বরং এগুলো বানানো হয়েছে একাধিক ভিডিও গেম, অস্ট্রেলিয়ার সামরিক মহড়া ও যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাসের মহাকাশ প্রদর্শনীর দৃশ্য নিয়ে। ইরানের হামলার ভিডিও দাবিতে এগুলো পোস্ট বা শেয়ার দেয়া হচ্ছে।

গত ১ এপ্রিল ইসরায়েলের হামলায় ইরানের দুই জেনারেলসহ ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) একাধিক সদস্য নিহত হন। এর কয়েকদিন পর ১৩ এপ্রিল ইসরায়েলকে শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রর নিশানা করে ইরান। এই হামলার পর থেকেই বানানো ওই দুইটি ভিডিও ইসরায়েলে ইরানের হামলার দৃশ্য দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার হয়ে আসতে দেখা যায়। 

গত ১৮ এপ্রিল একটি ভিডিও রিল আকারে ফেসবুকে পোস্ট করেন এক ব্যবহারকারী; যাতে লেখা ছিল “ইরান এটা কি চমক দেখাইলো ইসরাইয়েল কে।” ভিডিওতে দেখা যায় যুদ্ধবিমান থেকে কিছু নিক্ষেপ করা হচ্ছে। ডিসমিসল্যাব ইউটিউবের এক চ্যানেলে একটি ইউটিউব শর্টস খুঁজে পায়, যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় দৃশ্যটি আসলে লকহিড সি-১৩০ হারকিউলিস যুদ্ধবিমানের মহড়ার ক্লিপ। রিলটি শেয়ার দিয়েছেন তিন হাজারের বেশি ব্যবহারকারী, প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৩৬ হাজারেরও বেশি মানুষ রিঅ্যাক্ট করেছেন, মন্তব্য আছে ৪১১ টি। ভিডিওটি ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবটিকটকেও ছড়াতে দেখা যায়।

যাচাইয়ে দেখা যায়, গত বছরের আগস্টে অস্ট্রেলিয়া দ্য প্যাসিফিক এয়ারশো-২০২৩ গোল্ড কোস্ট (Pacific Airshow 2023 Gold Coast) এর আয়োজন করে। এতে অংশ নিয়েছিল লকহিড সি-১৩০ হারকিউলিস (Lockheed C-130 Hercules) মিলিটারি ট্রান্সপোর্ট বিমানটি।

ইরান ইজরাইলকে কি চমক দেখাইলো আমরা মুসলমান হ্যাপী খুশী সাবাস ইরান” ক্যাপশন লিখে আরেক ব্যবহারকারীকে ১৯ এপ্রিল অন্য একটি রিল ফেসবুকে শেয়ার করতে দেখা যায়। রিলটি ভিন্ন ভিন্ন কিছু ভিডিওর ক্লিপ জোড়া দিয়ে বানানো- যাতে লেখা “ফিলিস্তিনকে আর অত্যাচার করতে দেবেনা ইরান।” ১৪ টির বেশি ক্লিপ জোড়া লাগিয়ে বানানো হয়েছে রিলটি। সেখান থেকে চারটি ক্লিপ শনাক্ত করতে পেরেছে ডিসমিসল্যাব। যার একটি মূলত জিটিএ-৫ (গ্র্যান্ড থেফট অটো-৫) গেমের একটি দৃশ্য। আরেকটি ক্লিপ ভিন্ন এক ভিডিও গেমের দৃশ্য, যা খুঁজে পাওয়া যায় এক গেমারের ইউটিউব চ্যানেলে। অন্যদুটি যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাসের নেভাদার বিনোদন থিয়েটার স্ফেয়ারেরপোস্টকার্ড ফর্ম আর্থ” প্রদর্শনী থেকে নেওয়া। ক্লিপ দুটোর হুবুহু অংশ খুঁজে পাওয়া যায় এক টিকটক পোস্টে।

রিল দুটির কমেন্ট সেকশন দেখে বোঝা যায় মন্তব্যকারীদের অনেকে ভিডিওগুলোকে বিশ্বাস করছেন। একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, “আলহামদুলিল্লাহ এটা ইরানের ফ্রী ফায়ার নয় এটা অরজিনাল রকেট ফায়ার।” অন্য একজনকে বলতে দেখা যায়, “পৃথিবীর মানচিত্রে থেকে ইশরাইল নামক দেশটা উঠিয়ে দিক,,,, জয় হবেই ইনশাআল্লাহ।” এই রকম মন্তব্য আরো রয়েছে।

বিশ্ব কে তাক লাগিয়ে ইসরায়েলে হামলা ইরানের” ক্যাপশনসহ একজন ব্যবহারকারী ১৬ এপ্রিল একটি রিল ফেসবুকে শেয়ার করেন। ভিডিওতে পৃথক তিনটি ক্লিপ দেখা যায়। এর একটির অস্তিত্ব পাওয়া যায় এক এক্স (সাবেক টুইটারে) ব্যবহারকারীর ২০২৩ এর নভেম্বরের পোস্ট করা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটের একটি টিকটক ভিডিওতে। ফেসবুক রিলটি গত এপ্রিল থেকে সামাজিক মাধ্যমে (, , , , ) ইরানের ইসরায়েলে হামলার দৃশ্য দাবিতে ভুল প্রচার হয়ে আসেছ।

গত ১৯ এপ্রিল আরেকটি রিল ফেসবুকে ছাড়া হয় “এটা কোন ফ্রি ফায়ার না এটা ইরানের রকেট” দাবিতে। ইসরায়েলে হামলা হয়েছে গত ১৩ এপ্রিল। কিন্তু গত বছর নভেম্বরেই ভিডিওটি একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা হয়। এছাড়া খুব ভালোভাবে খেয়াল করলে স্ক্রিনে কয়েকবার কারসার নাড়ানো চোখে পড়ে, সাধারণত গেমের ক্ষেত্রে এমনটি দেখা যায়। একই ভিডিও ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, ফেসবুকইউটিউবে অনেকবার শেয়ার হতে দেখা যায় একই ভুয়া দাবিতে। এই ভিডিওতে ব্যবহৃত কিছু ক্লিপের সাথে ‘ওয়ারগেম : এয়ারল্যান্ড’ নামেক এক গেমের সিজিআই এর সাথে সাদৃশ্যতা খুঁজে পাওয়া যায় রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে।

পুরোনো ভিডিও বা গেমিং দৃশ্য ব্যবহার করে ইরান-ইসরায়েল হামলার ভিডিও দাবিতে এই রকম প্রচার আরো হয়েছে। এ নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনও (, , ) করা হয়। 

আরো কিছু লেখা