আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
This article is more than 6 months old
_Website feature

ইরান ইসরায়েল সংঘাতের দাবিতে ছড়াচ্ছে ভিও-থ্রি দিয়ে তৈরি ভিডিও

আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

ইরানের ক্ষেপনাস্ত্র হামলা থেকে বাঁচতে এক নারী দৌড়াচ্ছেন, বা ইসরায়েলি নাগরিকেরা ইরানকে হামলা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছেন– এমন তিনটি ভিডিও সম্প্রতি ছড়াতে দেখা গেছে সামাজিক মাধ্যমে। অনেকেই ভিডিওগুলোকে সত্য ধরে নিয়ে নানা মন্তব্য করেছেন। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে, ভিডিও তিনটি আসলে গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভিডিও জেনারেশন মডেল ভিও-থ্রি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সশস্ত্র বাহিনীর পোশাক পরে এক ব্যক্তি বুম হাতে কথা বলছেন। পোস্টগুলোর ক্যাপশনে লেখা, “ইরান আক্রমন বন্ধ কর।৫০% শেষ হয়ে গেছে।আমরা যুদ্ধে হেরে গেছি।” ৮ সেকেন্ডের এই ভিডিওর ব্যক্তিটিকে ইংরেজি ভাষায় বলতে শোনা যাচ্ছে, “ইরান! আমরা অনুরোধ করছি। দয়া করে আক্রমন থামাও। ইসরায়েলের অর্ধেক ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা আত্মসমর্পণ করছি। দয়া করে এই ধ্বংসযজ্ঞ থামাও।” কথা বলতে থাকা ব্যক্তিটির পেছনে ধ্বংসস্তুপ দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটিতে গণমাধ্যম সময় টিভির লোগোও দেখা যায়। একই ভিডিও পোস্ট হতে দেখা যায় বিভিন্ন ফেসবুক পেজ এবং গ্রুপেও (, , , , )।

ফেসবুকে ছড়ানো ভিডিওটি ডান কোণে একটি টিকটক অ্যাকাউন্টের নামকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করে মূল ভিডিওটি খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। ‘পজেটিভভিডিওজঅনলি৩৮৯’ নামের একটি টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ জুন পোস্ট হওয়া ভিডিওটি ৮ সেকেন্ডের এবং এটির সঙ্গে ফেসবুকে ছড়ানো ভিডিওটির হুবহু মিল পাওয়া যায়। মূল ভিডিওর ডান কোণে ‘ভিও’ নামের একটি ওয়াটারমার্ক দেখা যায়। ভিও হলো গুগল ডিপমাইন্ডের তৈরি একটি টেক্সট-টু-ভিডিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক মডেল। এটি ব্যবহার করে লেখার মাধ্যমে ভিডিও ক্লিপ তৈরি করা যায়। এছাড়া সময় টিভির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলেও এই ভিডিওটি পাওয়া যায়নি।

আরেকটি ভিডিও প্রচারিত হতে দেখা যাচ্ছে ইউটিউবে। এখানে বিধ্বস্ত এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে একজন নারী সাংবাদিককে। ভিডিওর শুরুতে নারী সাংবাদিক “প্লিজ” বলার পর বিধ্বস্ত ব্যক্তিটি বলেন, “দয়া করে আমাকে একা ছেড়ে দিন।” এরপর নারী সাংবাদিক বলেন, “ইসরায়েল আমাদের জন্য একমাত্র দেশ।” এরপর বিধ্বস্ত ব্যক্তি বলে উঠেন, “স্যার, আপনি আমাদের বলতে পারবেন এখানে কী হয়েছে?” ভিডিওটি ফেসবুকেও প্রচারিত হতে দেখা যায়।

এই ভিডিওটির কথোপকথনটি পুরোপুরি অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বিধ্বস্ত ব্যক্তি এবং নারী সাংবাদিকের আলাপের মধ্যে কোন মিল পাওয়া যায় না। এবং ভিডিওর শেষে বিধ্বস্ত ব্যক্তি নিজেই বলে উঠেন, “স্যার, আপনি আমাদের বলতে পারবেন এখানে কী হয়েছে?”। প্রশ্নটি শুনতে সাংবাদিকের প্রশ্নের মতো হলেও বলছেন একজন হামলায় বিধ্বস্ত ব্যক্তি। এছাড়া, এই ভিডিওর ডান কোণেও ‘ভিও’ নামের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার লোগোটির ওয়াটারমার্ক দেখতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, এই ভিডিওটিও আসল নয়।

ফেসবুকে শেয়ার করা আরেকটি ভিডিও সামনে আসে ডিসমিসল্যাবের। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, “এখন কেমন লাগে? মজা লাগছে তাই না? মজার কি পেয়েছো? সামনের দিনগুলোতে ভয়াবহতা তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। ইজরায়েল নামক রষ্ট্র পৃথিবীর মানচিত্রে থাকবে না ইনশাআল্লাহ!” ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে একজন নারী দৌড়াচ্ছেন এবং আর্তনাদ করছেন। দৌড়াতে থাকা নারীর পেছনে বিস্ফোরণ হতে দেখা যাচ্ছে ভিডিওটিতে। ভিডিওটি আকার পরিবর্তন করে আরও পোস্ট পাওয়া যায় সামাজিক মাধ্যমে। 

ভিডিওটির বিশ্লেষণে দেখা যায় এটির ডান কোণেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে ভিডিও তৈরিকারী ‘ভিও’ এর ওয়াটারমার্ক রয়েছে। ভিডিওটির আকার পরিবর্তন করে ফেসবুকে অসংখ্যা পোস্ট হয়েছে (, , , )। এই ভিডিওগুলোর শুরুর অংশে এআই দিয়ে তৈরি ভিডিওটি যুক্ত করা হয়েছে। তবে ভিডিওর আকার পরিবর্তনের কারণে এগুলোতে ভিওর লোগোটি দেখতে পাওয়া যায়না।

গুগল ভিও কী?

গুগলের ভিও-থ্রি হলো গুগল ডিপমাইন্ডের তৈরি সর্বশেষ এবং সবচেয়ে উন্নত এআই ভিডিও জেনারেশন মডেল। ভিও-থ্রি এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর নেটিভ অডিও জেনারেশন ক্ষমতা। অর্থাৎ, এটি ভিডিওর সঙ্গেই মানানসই সংলাপ, ভয়েস-ওভার, বিভিন্ন সাউন্ড ইফেক্ট এবং এমনকি আবহ সঙ্গীতও স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি করে, যার সঙ্গে ভিডিওর ভিজ্যুয়ালের সামঞ্জস্য থাকে।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ১৩ তারিখে ইরানে আক্রমণ করে ইসরায়েল। এই আক্রমণে ইরানের সেনা কর্মকর্তা এবং বিজ্ঞানীসহ ৭৮ জন নিহত হয়। পরবর্তীতে ইরানও পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে। দুই রাষ্ট্রের সংঘাতে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানা যায় (, )।

আরো কিছু লেখা