ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
শিক্ষকদের জিন্স ও টি-শার্ট পরা নিষিদ্ধ হওয়ার খবরটি ভারতের মহারাষ্ট্রের 
This article is more than 8 months old

শিক্ষকদের জিন্স ও টি-শার্ট পরা নিষিদ্ধ হওয়ার খবরটি ভারতের মহারাষ্ট্রের 

ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যমের সংবাদ শিরোনাম (, , , , ) ও ফেসবুকের অনেক পোস্টে দাবি করা হচ্ছে “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের জিন্স ও টি-শার্ট পরা নি’ষিদ্ধ”! তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, খবরটি বাংলাদেশেরই নয়, বরং ভারতের মহারাষ্ট্রের। শিরোনামে স্থানের উল্লেখ না থাকায় সরকারি নির্দেশনা ভেবে বাংলাদেশের বহু ফেসবুক ব্যবহারকারী বিষয়টি অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করছেন (, , , , , , , )। 

যাচাইয়ে দেখা যায়, বেশ কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারী (, , , ) সরাসরি দৈনিক জনকণ্ঠের একটি প্রতিবেদনের শিরোনামের লিংক বা স্ক্রিনশট শেয়ার করেছেন। দৈনিক জনকণ্ঠ ১৬ মার্চ রাত ১০টা ১৮ মিনিটে এবং সময়ের কণ্ঠস্বর এক ঘণ্টার কিছু বেশি সময় পর (রাত ১১টা ৩৩ মিনিটে) নিজেদের ওয়েবসাইটে খবরটি প্রকাশ করে। শিরোনাম ছিল অভিন্ন: “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের জিন্‌স ও টি-শার্ট পরা নিষিদ্ধ ঘোষণা”। কিন্তু শিরোনামে কোথাও উল্লেখ ছিল না যে ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়; পরবর্তী সময় ফেসবুকেও অনেককে বিভ্রান্তিকর শিরোনামটি পোস্ট আকারে শেয়ার করতে দেখা যায়।

৬৩ হাজার ফলোয়ারের ফেসবুক পেজ এডুকেশন নিউজ এবং বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড গ্রুপে পোস্ট আকারে শিরোনামটি শেয়ার করা হয়। 

এডুকেশন নিউজ পেজের পোস্টটিতে দুই হাজার এক শত ব্যবহারকারী রিঅ্যাক্ট করেছেন এবং এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ৮৪ বার এটি শেয়ার করা হয়েছে। পেজে কমেন্ট আকারে যদিও বলা হয় খবরটি আসলে ভারতের, অন্যরা মূল সূত্র ও প্রেক্ষাপট উল্লেখ ছাড়াই অসংখ্য ব্যবহারকারী “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের জিন্স ও টি-শার্ট পরা নি’ষিদ্ধ” এই শিরোনামে এক বাক্যে শেয়ার বা পোস্ট করেছেন। 

বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড গ্রুপের পোস্টটিতে প্রায় এক হাজার সাত শত লাইক ও রিঅ্যাক্ট দেখা যায়। কমেন্ট দেখা গেছে ১৬০টি।

দৈনিক শিক্ষা- নামের এক গ্রুপে মোহাম্মদ রমজান আলী নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী যে পোস্ট করেন তা ছিল হুবহু গণমাধ্যমের বিভ্রান্তিকর শিরোনাম। এটিও শেয়ার করা হয়েছে ৪২৬ বার। দুই হাজার দুইশত রিঅ্যাক্ট দেখা যায়, কমেন্ট ছিল ২৩০টি।

কেউ কেউ আবার “হ্যাশট্যাগ বাংলাদেশ” বা শুধু “হ্যাশট্যাগ বাংলাদেশ হ্যাশট্যাগ শিক্ষাবোর্ড” ব্যবহার করেও ভুল ইঙ্গিত দিচ্ছেন। 

“শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের জিন্‌স ও টি-শার্ট পরা নিষিদ্ধ ঘোষণা” শীষক জনকণ্ঠের প্রতিবেদনটির শুরুতেই বলা হয়: “শিক্ষক ও শিক্ষিকারা এখন আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জিন্স ও টি-শার্ট পরতেন পারবেন না। সম্প্রতি নতুন এই পোশাকবিধি চালু করেছে ভারতের মহারাষ্ট্র সরকার। এ বিষয়ে একটি নির্দেশিকাও জারি করা হয়েছে”। হুবহু শিরোনাম ও ইন্ট্রো করে সময়ের কণ্ঠষ্বর।

জুমবাংলার প্রতিবেদনের শিরোনামেও ভারত দেখা যায়নি। ফেসবুকে জুমবাংলার পোস্টটিতে তিন হাজার আটশো জন ব্যবহারকারী রিঅ্যাক্ট করেন। একই সাথে ২৪৪ বার এটি শেয়ার করা হয়।

ভারতের গণমাধ্যম মহারাষ্ট্র টাইমস- এর একটি রিপোর্টে মূল খবরটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

মিডিয়া রিসার্চ ও এডভোকেসি প্রতিষ্ঠান- ‘ফার্স্ট ড্রাফট’-এর সংজ্ঞা মতে, বেশি ক্লিকের আশায় খবরের শিরোনামে চটকদার ভাষা ব্যবহারের এই চর্চা হচ্ছে ক্লিকবেইট, যেখানে শিরেনামের সঙ্গে মূল সংবাদের তেমন মিল পাওয়া যায় না। এই সংবাদটির ক্ষেত্রেও সেটিই ঘটেছে। ঘটনাস্থল উল্লেখ না করে আভাসে বার্তা দেওয়া হয়েছে যে নির্দেশনাটি বাংলাদেশের শিক্ষকদের জন্য প্রযোজ্য। বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য খবর মনে করে অনেকেই “হ্যাশট্যাগ বাংলাদেশ” বা শুধু “হ্যাশট্যাগ বাংলাদেশ হ্যাশট্যাগ শিক্ষাবোর্ড” ট্যাগ দিয়েছে।

একই শিরোনাম ব্যবহার করে আবার দুইটি ফটোকার্ড ও ছড়িয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে। একটি সময়ের কণ্ঠস্বর ও আরেকটি জুমবাংলার। ক্লিকবেইট শিরোনাম প্রচার করতে অনেক সময় ফটোকার্ডের ব্যবহার করা হয়। 

আরো কিছু লেখা