
রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে পেত্রোপাভলোভস্ক-কামচাতস্কি শহরের কাছে ৮.৮ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে গত ২৯ জুলাই। এই ঘটনায় বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমে প্রচারিত হতে দেখা গেছে অন্তত দুইটি পুরোনো ভিডিও, যার সঙ্গে রাশিয়ায় ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পের কোনো সম্পর্ক ছিল না।

রাশিয়ায় ভূমিকম্পের দৃশ্য দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি ভিডিওটিতে দেখা যায় একটি দোকানের শেলফগুলো ভূমিকম্পে পড়ে যাচ্ছে। এই ভিডিওটি যুক্ত করা হয়েছে যুগান্তর, এখন টিভি, দৈনিক আজাদী, প্রবাসী জার্নাল ও দীপ্ত টিভির ভিডিও প্রতিবেদনে। প্রত্যেকটি ভিডিওর ক্যাপশনে রাশিয়ার ভূমিকম্পের ঘটনার উল্লেখ থাকতে দেখা যায়।
ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায় এই ভিডিওটি চলতি বছরের মার্চে ঘটে যাওয়া মিয়ানমারের ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের সময়ের। ভিডিওটির ডান পাশের উপরের কোণে ২০২৫-০৩-২৮ তারিখটিও দেখা যায়। চলতি বছরের ৩০ মার্চে পোস্ট হওয়া চীনা নিউজ পোর্টার নিউজ কিউকিউতে একটি ভিডিও (আর্কাইভ) পাওয়া যায় যার শিরোনামে এটিকে মিয়ানমারের ভূমিকম্পের সময়ের দৃশ্য বলে উল্লেখ করা হয়।

ভিডিওর ভেতরে লেখা হয়েছে, “২৮ মার্চ বিকেলে, মিয়ানমারে ৭.৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। একটি অনলাইন ভিডিওতে দেখা গেছে যে ভূমিকম্পের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সুপারমার্কেটের জিনিসপত্রে ধ্বসে পড়ে এবং ভবনগুলো কেঁপে উঠে, যার ফলে দোকানটি এলোমেলো হয়ে যায়। সৌভাগ্যবশত, একজন নারী দ্রুত একটি টেবিলের নিচে ঢুকে পড়েন এবং তাকের আঘাতে আহত হননি।”

একাত্তর টিভির একটি ভিডিও প্রতিবেদনে আরেকটি ভিডিও পাওয়া যায় যা সামাজিক মাধ্যমেও পোস্ট হতে দেখা গিয়েছে। একাত্তর টিভির প্রতিবেদনটির (আর্কাইভ) এক মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে দুইজন ব্যক্তিকে সমুদ্র তীরে একটি বড় ঢেউ অথবা সুনামি থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে দেখা যায়। একই ভিডিও “রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপে ৮.৭ মাত্রার একটি বিশাল ভূমিকম্পের ফলে ৪ মিটার উঁচু সুনামির ঢেউ উঠেছে।”- ক্যাপশনে ৩০ জুলাইয়ের একাধিক পোস্টেও যুক্ত থাকতে দেখা যায় (১, ২, ৩)।

এই ভিডিওটির সূত্র যাচাই করতে গেলে ডিসমিসল্যাবের সামনে আসে ছবি-ভিডিও শেয়ারের সাইট ইমজারে ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিলে পোস্ট করা একটি ভিডিও, যার শিরোনাম ছিল, “গ্রিনল্যান্ডের জেলেরা এক মেগা-সুনামির ধ্বংসাবশেষ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।” গ্রিনল্যান্ডের জেলে এবং সুনামি কিওয়ার্ড ব্যবহার করে ২০২১ সালের ৯ এপ্রিলের একটি ইউটিউব ভিডিও পাওয়া যায় যেখানে একই দৃশ্যটি দেখা যাচ্ছে। ‘লিসেট স্টুডিওস’ থেকে আপলোড করা এই ভিডিওর বিবরণে এটিকে ২০১৭ সালের ১৭ জুন গ্রিনল্যান্ডে ঘটে যাওয়া একটি সুনামির দৃশ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ২০১৭ সালের জুনে গ্রিনল্যান্ডে সুনামি নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয় ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এবং দ্য গার্ডিয়ানে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে গণমাধ্যমে ভুল ছবি বা ভিডিও প্রকাশের ঘটনা নতুন নয়। এবছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের দাবানলের দৃশ্য দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত হতে দেখা গেছে পুরোনো ছবি। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যার সময় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে ব্যবহার করা হয়েছে ২০২১ সালে মুন্সিগঞ্জের পদ্মা নদীর পাড়ে পানি বেড়ে যাওয়ার ছবি।