ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
‍তিন মাস পুরোনো অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও সাম্প্রতিক ভারতে পাকিস্তানের সংঘাতের বলে প্রচার 

‍তিন মাস পুরোনো অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও সাম্প্রতিক ভারতে পাকিস্তানের সংঘাতের বলে প্রচার 

ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

ফেসবুকে ছড়ানো একটি ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে, পাকিস্তানের বিমান হামলায় ভারতের একটি পার্ক লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ওই ঘটনার দৃশ্য হিসেবে কলকাতার পার্ক সার্কাস নামের একটি ভবনে আগুনের ভিডিও ব্যবহার করা হয়েছে। তবে যাচাই করে দেখা গেছে, এটি ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক সংঘাত চলাকালীন সাম্প্রতিক কোনো বিমান হামলার ঘটনা নয়। এটি ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকায় একটি কারখানায় আগুন লাগার সময় ধারণ করা ভিডিও। 

একটি ভবনের ওপর কালো ধোঁয়া ও দাও দাও করে আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে। ভবনের প্রবেশমুখে হলুদ রঙ-এর ওপর কালো রঙ দিয়ে বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দিতে লেখা ‘পার্ক সার্কাস’। ভবনের ছাদে ও বাইরে বেশ কিছু উৎসুক মানুষকেও দেখা যাচ্ছে। এমনই একটি ভিডিওটি সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক (, , , ) ও ইউটিউবে (, ) ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। প্রতিটি পোস্টে দাবি করা হয় এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পার্ক সার্কাসে পাকিস্তানের হামলার দৃশ্য। কোথাও বলা হয় এটি ‘মিসাইল হামলা’ তো কোথাও বলা হয়, ‘বিমান হামলা’র দৃশ্য এটি। জুয়েল হোসাইন নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে গত ৭ মে, একই দাবিতে রিলটি পোস্ট হয়। এই পোস্টে এখন পর্যন্ত ছয় হাজারের বেশি ব্যবহারকারী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ভিডিওটি ফেসবুকে নয়শো এর বেশিবার শেয়ার করা হয়। এছাড়াও রয়েছে তিন শতাধিক মন্তব্য।

ভিডিওটির কি-ফ্রেম ধরে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান চালালে একই ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে কলকাতা হতে পরিচালিত এক প্রোফাইলে খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রোফাইল থেকে ভিডিওটি রিল আকারে এবছরের জানুয়ারি মাসের ২৩ তারিখে আপলোড করা হয়েছিল। অর্থাৎ চলমান পাক-ভারত অস্থিরতার অন্তত তিন মাস আগে। ভিডিওটির ক্যাপশনে ইংরেজিতে লেখা আছে, “পার্ক সার্কাস অগ্নিকাণ্ড, কলকাতা। ভারতীয় রেলওয়ের জন্য এক কালো দিন।” জানুয়ারি মাসের একই সময়ে পার্ক সার্কাস স্টেশন বা স্টেশন চত্বরে আগুন লাগার কোনো ঘটনা ঘটেছিল কি না, তা জানতে আবারো কি-ওয়ার্ড সার্চ চালায় ডিসমিসল্যাব। দেখা যায়, গত ২০ জানুয়ারি তারিখে আনন্দবাজার, টিভি ৯ বাংলা এবং আজকালসহ একাধিক ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো।

আনন্দবাজারের ২১ জানুয়ারির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরে গত ২০ জানুয়ারি দুপুরের দিকে পার্ক সার্কাস স্টেশন সংলগ্ন একটি কারখানায় আগুন লেগেছিল। ওই কারখানা স্টেশনের একদম পাশে হওয়ায় পুরো স্টেশন চত্বর কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায়, যা দেখে অনেকেই ধারণা করেছিল স্টেশনেই আগুন লেগেছে। এ ঘটনারই ছোট্ট একটি দৃশ্যের দেখা মেলে ভাইরাল এই ভিডিওতে। ভিডিওর মূল ঘটনার সাথে পাক-ভারত সামরিক সংঘাতের কোনো সম্পর্ক নেই।

এছাড়াও একই ভিডিও গত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝির দিকে ভারতের পশ্চিবাংলার মুর্শিদাবাদে সাম্প্রাদায়িক প্রতিবাদ ও হামলার দৃশ্য দাবিতেও প্রচার করা হয়েছিল। সেই সময় দাবিটি খন্ডন করে একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভারতীয় গণমাধ্যম আজতাক বাংলা। 

প্রসঙ্গত, গত ৬ মে দিবাগত রাতে পাকিস্তানের ৯টি স্থানে বিমান হামলার দাবি করে ভারত। এরপর পাকিস্তানও ভারতে পাল্টা হামলা চালায়। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা প্রধান ৫টি ভারতীয় বিমান বাহিনীর জেট ভূপাতিত করেছে বলে দাবি করে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাতের ঘটনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে এরই মাঝে বেশকিছু ভুল তথ‍্য ছড়াতে দেখা গেছে। যা নিয়ে ইতোমধ্যে একটি বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডিসমিসল্যাব। 

আরো কিছু লেখা