মো. তৌহিদুল ইসলাম

ভারতীয় বিমানে নারী ও পুরুষের মধ্যে হাতাহাতির ভিডিওটি সাজানো
মো. তৌহিদুল ইসলাম
ভারতীয় বিমানে নারী ও পুরুষের মধ্যে হাতাহাতির দাবিতে একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে যাচাইয়ে দেখা যায়, এটি সত্য ঘটনা নয়, বরং সাজানো কন্টেন্ট।
সংবাদমাধ্যম দৈনিক আজাদীর ফেসবুক পেজ থেকে গত ১৫ সেপ্টেম্বরে একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়, “ভারতীয় বিমানে নারী-পুরুষের হাতাহাতি, থামালেন দুই বিমানবালা।” প্রায় দেড় মিনিটের ভিডিওটিতে দেখা যায়, বিমানের কেবিন সদৃশ কক্ষের মধ্যে একজন নারী ও একজন পুরুষ উচ্চ স্বরে বাক্য বিনিময় করছেন। এক পর্যায়ে তাঁদের মধ্যে হাতাহাতি হতেও দেখা যায়। এই প্রতিবেদন লেখার আগ পর্যন্ত ভিডিওটি অন্তত ২ হাজার ৮’শ বার শেয়ার হয়েছে। মন্তব্য করা হয়েছে ৬৫০ টিরও বেশি।

এছাড়া ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবেও ভিডিওটি প্রায় একই দাবিতে পোস্ট করা হয় ( ১, ২, ৩)।
দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে ভিডিও থেকে কিফ্রেম নিয়ে সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। এতে ভারতীয় তথ্যযাচাইকারী প্রতিষ্ঠান “ফ্যাক্টলি” ও সংবাদমাধ্যম “ইন্ডিয়ান টাইমস”-এর দুটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন (১, ২) খুঁজে পাওয়া যায়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান টাইমসে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে ঘটনাটি সাজানো বলে জানানো হয়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, আলোচিত ভিডিওটি কোনো বাস্তব ঘটনা নয়, বরং সাজানো। এতে দুই কৌতুকশিল্পী দীপক কালাল ও রুতু রামটেকে অংশ নিয়েছেন। ভিডিওটি প্রথমে প্রকাশ করে ফ্লাই হাই ইনস্টিটিউট, যেটি নাগপুরভিত্তিক একটি এভিয়েশন ট্রেনিং সেন্টার। প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত এমন ভিডিও তৈরি করে, যেখানে বিনোদনের পাশাপাশি যাত্রীদের আচরণ ও নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করা হয়। আলোচিত ভিডিওটিও শুধু সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে তৈরি, কোনো বাস্তব ঘটনার প্রতিফলন নয়।
ফ্যাক্টলির প্রতিবেদনও বলছে, ভিডিওটি বাস্তব কোনো ঘটনার নয়, বরং সাজানো। “ফ্লাই হাই ইনস্টিটিউট নাগপুর” নামের একটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে এই ভিডিওটি বানিয়েছে। “ফ্যাক্টলি” আরও জানায়, আগেও তারা ফ্লাই হাই ইনস্টিটিউটের একই ধাঁচের সাজানো কন্টেন্ট (১, ২) যাচাই করেছে। সেসব কন্টেন্টগুলোতেও দীপক কালাল, রুতু রামটেকে ও অন্যরা অংশ নিয়েছিলেন।
ফ্লাই হাই ইনস্টিটিউটের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট যাচাই করে দেখা যায়, সেখানে নিয়মিত এ ধরনের সাজানো কন্টেন্ট প্রকাশ করা হয়। এসব ভিডিওতে দেখানো হয় কীভাবে কেবিন ক্রুরা বিমানের ভেতরে বিভিন্ন জটিল পরিস্থিতি সামলাতে পারেন। এসব ভিডিও দেখতে অনেকটাই বাস্তব মনে হয়। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই তারা একটি ভিডিও তৈরি করে, যেখানে কনটেন্ট ক্রিয়েটর দীপক কালাল ও রুতু রামটেকে অংশ নেন। যাচাইয়ে দেখা যায়, মূল ভিডিওটি পোস্ট করার সময় উভয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটরকে ইনস্টাগ্রাম ট্যাগ করা হয়। ফলে দীপক কালাল ও রুতু রামটেকের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টেও ১ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, ভারতীয় বিমানে নারী ও পুরুষ যাত্রীর মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাটি কোনো বাস্তব ঘটনা নয়, বরং সাজানো দৃশ্য।
উল্লেখ্য, দীপক কালাল একজন ভারতীয় কৌতুকশিল্পী। তিনি নেটিজেনদের কাছে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে পরিচিত। রুতু রামটেকেও একজন কৌতুকশিল্পী। এর আগে গত জুন মাসে বিমানে একজন যাত্রীর সঙ্গে তার ঝগড়ার আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। যা ভারতীয় তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান নিউজচেকার সাজানো বলে নিশ্চিত করে।