আহমেদ ইয়াসীর আবরার

ভারতে মুসলিম মেয়েদের বন্ধ্যা বানানোর দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি পাকিস্তানের
আহমেদ ইয়াসীর আবরার
ভারতে ব্লাড ক্যান্সারের টিকা বলে স্কুলে মুসলিম মেয়েদের দেওয়া হচ্ছে বন্ধ্যা বানানোর ইনজেকশন। এতে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেক মেয়েই- এমন দাবিতে একটি ভিডিও পোস্ট হতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে। আরও দাবি করা হচ্ছে, বিশেষ করে ৮ থেকে ১৫ বছর বয়সী মুসলিম মেয়েদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। তবে ডিসমিসল্যাবের ফ্যাক্টচেকে দেখা যায় মূল ভিডিওটি পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরের ডডিয়াল তহশিলের পুলিশের টিয়ারশেলে আহত শিক্ষার্থীদের।
“ভারতে ব্লাড ক্যান্সারের টিকা বলে স্কুলে মুসলিম মেয়েদের দেওয়া হচ্ছে বন্ধা বানানোর ইঞ্জেকশন! 😱 এসংক্রান্ত কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পরেছে স্যোশালমিডিয়াগুলোতে। বলা হচ্ছে, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক স্কুলে মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের জন্য ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে, বিশেষ করে মুসলিম মেয়েদেরকে। তারা আপত্তি করলে জোড় করেই দেওয়া হচ্ছে এসব ইনজেকশন। এতে অনেক মেয়েই স্কুলেই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।”- এই ক্যাপশনে একটি ভিডিও পোস্ট হতে দেখা যাচ্ছে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক (১, ২, ৩, ৪) এবং ইনস্টাগ্রামে (১, ২)। পোস্টে আরও দাবি করা হচ্ছে, “৮ থেকে ১৫ বছর বয়সী মেয়েদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে, বিশেষ করে মুসলিম মেয়েদের।” ভিডিওতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম পরা কিছু অসুস্থ নারী শিক্ষার্থীকে একটি কক্ষের ভেতরে কাশতে এবং হাঁপাতে দেখা যাচ্ছে।

ভিডিওটির সূত্র যাচাইয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ডিসমিসল্যাবের সামনে আসে ১ বছরেরও বেশি পুরোনো একটি ভিডিও। ২০২৪ সালের ৯ মে “বাঘী” নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে হুবহু একই ভিডিও পোস্ট করে শিরোনাম লেখা হয়, “ডডিয়ালে বালিকা বিদ্যালয়ে পুলিশের টিয়ার শেল নিক্ষেপ।”

প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যম এক্সের একটি পোস্ট খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। পাকিস্তানি গণমাধ্যম এবিএন নিউজের সাংবাদিক বাশারাত রাজার অ্যাকাউন্ট থেকে একই দিনে এই ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেন, “এটিও ডডিয়ালের একটি ক্লিপ, যেখানে পুলিশ এবং বেসামরিক পোশাকে থাকা অজ্ঞাতপরিচয়ের ব্যক্তিরা স্কুলগুলোতে অতিরিক্ত টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে, ফলে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত ছাত্রীরা জ্ঞান হারায়।” একই দিনে এটিকে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ভিডিও বলে পোস্ট করা হয় একাধিক এক্স পোস্টে (১, ২)।
এই ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয় একাধিক গণমাধ্যমে (১, ২, ৩)। পাকিস্তানি গণমাধ্যম দ্য ডনের ২০২৪ সালের ১০ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “মিরপুরের ডডিয়াল তহসিলে, রাতভর অভিযানে এক ডজনেরও বেশি কর্মীকে আটকের প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা মকবুল বাট শহীদ চকে বিক্ষোভ করার পর সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পুলিশের ছোড়া টিয়ার গ্যাসের শেলগুলো একটি স্কুলেও গিয়ে পড়ে, যার ফলে বেশ কয়েকজন ছাত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে।”

প্রসঙ্গত, এই ঘটনার ভিডিওটি পাকিস্তানের সামাজিক মাধ্যমে অন্য একটি মিথ্যা দাবিতে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছিল যে এটি একটি জাতীয় এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচির ফল, যেখানে টিকা নেওয়ার পর স্কুলের ছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এই ভুল দাবিটি যাচাই করে চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বরে প্রতিবেদন প্রকাশ করে এএফপি ফ্যাক্টচেক।