ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
বাংলাদেশি মডেলকে মার্কিন পর্যটক দাবি এক্সে

বাংলাদেশি মডেলকে মার্কিন পর্যটক দাবি এক্সে

ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটারে) সম্প্রতি এক নারীর ভিডিও শেয়ার করে একাধিক প্রোফাইল থেকে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে হিজাব না পরার কারণে হেনস্তার শিকার হয়েছেন একজন মার্কিন পর্যটক। তবে যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওর নারী কোনো মার্কিন পর্যটক নন, তিনি একজন বাংলাদেশি মডেল ও অভিনেত্রী। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন করতে গিয়ে তিনি উপস্থিত জনতার কাছে হয়রানির শিকার হন। ডিসমিসল্যাবকে ওই নারী নিজেই জানান, রাজনৈতিক কারণে তিনি হেনস্তার শিকার হয়েছেন।

সামাজিক মাধ্যম এক্সে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ‘হিন্দুত্ব নাইট’ নামের অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হয়, “হিজাব না পরার জন্য একজন মার্কিন নারীকে বাংলাদেশিরা তিরস্কার ও হয়রানি করেছে। নোবেল বিজয়ী ইউনূসের নেতৃত্বে এটাই মুক্ত বাংলাদেশের চিত্র – বিশ্বের জন্য লজ্জাজনক।” ভিডিওটিতে দেখা যায়, সেই নারী একটি কেক হাতে রিক্সায় চড়ে কোথাও যাচ্ছেন। এসময় কিছু ব্যক্তি তার উদ্দেশ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখান। ভিডিওটিতে প্রায় ১০ লাখ ভিউ, ১৪ হাজার প্রতিক্রিয়া ও ৯০০-র বেশি মন্তব্য রয়েছে। এছাড়াও ভিডিওটি এক্সে এখন পর্যন্ত চার হাজারের বেশি রিপোস্ট করা হয়েছে। “জাস্টিস ওয়াচ” নামের আরেকটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি রিপোস্ট করে দাবি করা হয়, “একজন মার্কিন পর্যটককে বাংলাদেশে স্থানীয়দের দ্বারা হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল, কারণ তিনি হিজাব পরেননি! স্থানীয় মিডিয়া এটিকে “নতুন বাংলাদেশ” বলে উল্লেখ করেছে…।” ভিডিওর নারীকে “মার্কিন পর্যটক” কিংবা “মার্কিন নারী” দাবি করা একাধিক পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায় এক্সে। এমনকি ভারতীয় গণমাধ্যম “এশিয়ানেট নিউজেবল” এর এক্স হ্যান্ডেল থেকেও ভিডিওটি একই দাবিতে পোস্ট করা হয়।

কিওয়ার্ড সার্চে পুরো ঘটনাটির একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায় দৈনিক পত্রিকা কালের কণ্ঠের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে। জানা যায়, ২৯ সেপ্টেম্বর, রোববার বিকেলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৮তম জন্মদিন উদযাপন করতে কেক নিয়ে হাজির হন মিষ্টি সুবাস। তিনি নিজেকে বঙ্গমাতা সাংস্কৃতিক জোটের নেত্রী পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমি কেক কেটে আলোচনায় আসতে চাই না, আমি বলতে চাই আমি আমার নেত্রীকে ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।” এর এক পর্যায়ে কিছু পথশিশু এসে তার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করলে; পথ শিশুদের তোপের মুখে তিনি স্থান ত্যাগ করেন। তিরস্কারমূলক আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করে মিষ্টি বলেন, “আমার নেত্রীর জন্য এর চেয়ে বেশি অপমানও আমি সহ্য করতে পারবো।”

ডিসমিসল্যাবের পক্ষ থেকে মিষ্টি সুবাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি মার্কিন প্রবাসী নন, শুধু মাত্র বাংলাদেশি নাগরিক। তিনি বলেন, “এটা একদমই ভুল ধারণা যে আমাকে আমার পোশাকের জন্য অসম্মান করা হয়েছে।” ঘটনাটি অপ্রীতিকর জানিয়ে তিনি আরও বলেন, পুরো ঘটনার সাথে তার পোশাকের কোনো সম্পর্ক ছিল না, বিষয়টি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। তাকে ও তার পোশাক নিয়ে এক্সে ও অন্যান্য যে কোনো মাধ্যমে ছড়ানো দাবিগুলো ভুল ও পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর।

এছাড়াও, ফেসবুকে কিছু প্রোফাইল থেকে একই ভিডিও (, , ) শেয়ার হতে দেখা যায়, যেখানে মূল ঘটনাটির প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে দৈনিক ইনকিলাবও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা ঘটনাটির সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরে।  

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৮ সেপ্টেম্বর ছিল তার ৭৮তম জন্মদিন। তিনি ১৯৪৭ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

আরো কিছু লেখা