মিনহাজ আমান
হামাসকে অস্ত্র দিয়েছে ইউক্রেন– এমন কোনো ভিডিও প্রকাশ করেনি বিবিসি
মিনহাজ আমান
একটি ভেরিফায়েড এক্স একাউন্ট (পূর্ববর্তী টুইটার) থেকে আজ (১১ অক্টোবর) ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির লোগোযুক্ত একটি ভিডিও দিয়ে দাবি করা হয়, ফিলিস্তিনের সশস্ত্র দল হামাসের কাছে ন্যাটোর দেওয়া অস্ত্র বিক্রি করছে ইউক্রেন। টুইটে দাবি করা হয়, বিবিসি-বেলিংক্যাটের যৌথ অনুসন্ধানে এই তথ্যটি বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু, ওপেনসোর্স অনুসন্ধানী মাধ্যম বেলিংক্যাট ইতোমধ্যে জানিয়েছে, তারা এমন কোনো তথ্য পায়নি এবং বিবিসির নামে এই ভুয়া ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
মূলত কিপ ইট সিক্রেট নিউজ নামের একটি ভেরিফায়েড এক্স হ্যান্ডেলে ভিডিওসহ এই খবর পোস্ট করা হয়। ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, “বিবিসি-বেলিংক্যাট তদন্তকারীরা বলছেন, ইউক্রেন #হামাসের কাছে #ন্যাটোর অস্ত্র বিক্রি করছে। “ইউক্রেনীয়রা কালো বাজারের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের কাছে এত পরিমাণে অস্ত্র বিক্রি করেছে যে এর ফলে পাল্টা আক্রমণ ব্যর্থ হয়েছে…”
বিবিসির লোগো সম্বলিত ১ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে বলা হয়, ওপেন সোর্স ইন্টিলেজেন্সের জন্যে বিখ্যাত বেলিংক্যাটের একাধিক সাংবাদিক নিশ্চিত হয়েছে যে, হামাসের ব্যবহৃত অধিকাংশ অস্ত্রের সরবরাহকারী দেশ হল ইউক্রেন। মূলত ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির মাধ্যমে অস্ত্রসহ গোলা বারুদ পৌছেছে ফিলিস্তিনে। কিন্তু ইতিমধ্যে বেলিংক্যাট তাদের অফিশিয়াল এক্স একাউন্টে জানিয়েছে, তাদেরকে জড়িয়ে ছড়িয়ে পড়া এই দাবিটি ভুয়া। তারা লিখেছে “আমরা এই ধরনের কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি বা এমন কোনো দাবি করিনি। আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই যে এটি বানোয়াট এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।”
বেলিংক্যাটের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়ট হিগিন্স এক টুইটে লিখেছেন, “এটি রাশিয়ার সরকারের কোনো অপতথ্য প্রচারাভিযান নাকি তৃণমূল পর্যায়ের প্রচেষ্টা তা এখনো স্পষ্ট নয়, তবে এটি শতভাগ জাল”। তার টুইটের সাথে তিনি একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলের লিংকও যুক্ত করেন যেখানে রুশ ভাষায় ইউক্রেনের অস্ত্র নিয়ে হামাসের যুদ্ধ করার বিবিসির লোগোসম্বলিত ভিডিওটি পোষ্ট করা হয়েছে।
We're aware of a fake BBC video circulating on social media falsely claiming that Bellingcat has verified Ukrainian weapons sales to Hamas. We've reached no such conclusions or made any such claims. We'd like to stress that this is a fabrication and should be treated accordingly. pic.twitter.com/kX7R8ZVPzr
— Bellingcat (@bellingcat) October 10, 2023
এছাড়া, রাশিয়ান পরিচয় দেওয়া নাথিং টু সি নামের আরেকটি এক্স একাউন্ট থেকে কোনো সূত্র ছাড়াই আরো দাবি করা হয়, অস্ত্র বিক্রি করায় ইউক্রেনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে হামাস। যদিও এ নিয়ে মূলধারার গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পর, হামাসের অস্ত্র কোথা থেকে আসছে– তা নিয়ে কয়েক ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায়। গত ৯ অক্টোবর রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম স্পুটনিক সুত্রে জানা যায়, রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমানে রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ দাবি করেন, ইউক্রেনে ন্যাটোর সরবরাহ করা অস্ত্র নানা দেশের জঙ্গিদের হাতে চলে যাচ্ছে। তিনি আরো আশঙ্কা করেন, এই অস্ত্র নানাপথ ঘুরে এখন হামাস জঙ্গিদের হাতে চলে গেছে, যারা মধ্যপ্রাচ্যে ন্যাটোর সবচেয়ে বড় মিত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে সেসব অস্ত্র ব্যবহার করছে।
তবে তার আগের দিন (৮ অক্টোবর) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসওম্যান রিপাবলিকান ম্যারজোরি টেইলর গ্রিন একই দাবি করলে রাশিয়ার গণমাধ্যম আরটি জানায়, এ ধরনের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অপরদিকে ইউক্রেনীয় সংবাদমাধ্যম ইউক্রেইনস্কা প্রাভদা বলছে, হামাসের অস্ত্র সরবরাহের পেছনে খোদ রাশিয়াকেই দায়ী করছে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা দপ্তর। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, হামাসের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের পেছনে আছে ইরান।