সুদেষ্ণা মহাজন অর্পা

ইন্টার্ন, ডিসমিসল্যাব
Fact-check: Indian video falsely claimed as BNP attack on Awami League member in Bangladesh

আওয়ামী লীগ মেম্বারকে বিএনপির মারধরের দাবিতে ভারতের ভিডিও প্রচার

সুদেষ্ণা মহাজন অর্পা

ইন্টার্ন, ডিসমিসল্যাব

ইউনিয়ন পরিষদের কার্ড ও চালের ভাগ না দেওয়ায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেম্বারকে মারধর করেছে বিএনপির সন্ত্রাসীরা, এমন দাবিতে একটি ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়েছে। তবে, ডিসমিসল্যাবের ফ্যাক্টচেকে দেখা যায়, মূল ভিডিওটি ভারতের আসামের ডবকার। চলতি বছরের গত ৪ আগস্ট ডবকায় একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে পুরোনো বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি থেকে হওয়া সংঘর্ষের দৃশ্য এটি।

গত ২৭ ডিসেম্বর ফেসবুকের একটি ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ক্যাপশনে লেখা, “এমন নির্মমতার শেষ কোথায়? ইউনিয়ন পরিষদে ভিতরে ঢুকে প্রকাশ‍্য আওয়ামীলীগ সমর্থীত মেম্বারকে কার্ড এবং চালের ভাগ না দেওয়ায় মারধর করলো বিএনপির সন্ত্রাসীরা। মিডিয়া এসব খবর প্রচার করে না। এর বিচার বাংলাদেশের মাটিতে একদিন হবে।” নিচে স্টেপ ডাউন ফ্যাসিস্ট ইউনূস এই হ্যাশট্যাগটি ব্যবহার করা হয়েছে।

ফেসবুকের একাধিক ব্যক্তিগত প্রোফাইল, গ্রুপ এবং পেজ (, , , , ) থেকে একই দাবিতে ভিডিওটি ছড়িয়েছে। ২৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, প্লাস্টিকের চেয়ার নিয়ে বেশ কয়েকজন লোক এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে পেটাচ্ছে। অনেকে তাদের বাধা দিতে এগিয়ে আসছে।

ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে ভিডিওর বিভিন্ন কিফ্রেম ধরে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ডিসমিসল্যাবের সামনে আসে ২০২৫ সালের ৪ আগস্ট ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে এনই’ এর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন। শিরোনামে লেখা, “আসাম: ডবকায় পঞ্চায়েত সভা সহিংস হয়ে ওঠার পর চেয়ার উড়ে গেছে, বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন” প্রতিবেদনের ভেতরে ব্যবহৃত ৩ মিনিটি ৪৫ সেকেন্ডের ভিডিওর প্রথম ২৩ সেকেন্ড অংশের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর হুবহু মিল পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, “আসামের ডবকার যমুনা গাঁও পঞ্চায়েতে আয়োজিত গ্রাম-স্তরের একটি বৈঠকে নির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রতিনিধির আত্মীয় এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি দলের মধ্যে উত্তপ্ত বাকবিতন্ডার পর তা সহিংস রূপ নেয়। দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অনিয়মের অতীত অভিযোগের জের ধরে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঝগড়াটি খুব দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে, এবং একে অপরকে প্লাস্টিকের চেয়ারে আঘাত করতে দেখা যায়। এতে কয়েকজন মানুষ কম-বেশি আহত হন। এই সভাটি ছিল সরকার কর্তৃক নির্ধারিত একটি উদ্যোগের অংশ, যেখানে স্থানীয় প্রশাসন নবনির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য বিশেষ গ্রামসভা করার নির্দেশ দিয়েছিল। তবে, যেখানে সবার মিলে গঠনমূলক আলোচনা হওয়ার কথা ছিল, সেখানে পুরনো ক্ষোভ আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে এবং তা হাতাহাতিতে গড়ায়।” একই ভিডিও গণমাধ্যমটির ইউটিউব চ্যানেলেও পাওয়া যায়।

আরও বিস্তারিত জানতে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখলে, প্রাইম টুয়েন্টিফোর সেভেন-এর অনলাইন প্রতিবেদন এবং আসামের ভিডিও সংবাদমাধ্যম  নিউজ ডেইলি টুয়েন্টিফোরের এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে চলতি বছরের ৪ আগস্ট একই  ঘটনার ভিডিও আপলোড হতে দেখা যায়।

প্রসঙ্গত, ভারতেও ঘটনাটি বিহারের একটি রাজনৈতিক সংঘাতের ( , , , , ) বলে অপতথ্য ছড়ানো হলে একাধিক ফ্যাক্টচেকিং সংস্থার (, , , ) যাচাইয়ের উঠে আসে মূল ঘটনা ভারতের আসামের ডবকায় ঘটে যাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সংঘর্ষের।

অর্থাৎ, আওয়ামী লীগ মেম্বারকে মারধরের দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। ভারতের আসামের ডবকায় যমুনা গাঁও  গ্রাম পঞ্চায়েতের সংঘর্ষের দৃশ্যকে ভুয়া দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে ।

আরো কিছু লেখা