তাসনিম তাবাস্সুম মুনমুন

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
AI-generated video falsely claiming a Hindu youth is pleading for his life in Bangladesh, debunked in a Dismislab fact-check.

বাংলাদেশে হিন্দু যুবকের প্রাণভিক্ষা চাওয়ার এআই ভিডিও প্রচার

তাসনিম তাবাস্সুম মুনমুন

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

সামাজিক মাধ্যম এক্সে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে আতঙ্কিত কণ্ঠে এক যুবক জানান, বাংলাদেশে পরিস্থিতি হঠাৎ খারাপ হয়ে যাওয়ায় তারা প্রাণনাশের আশঙ্কায় আছেন। সাহায্যের জন্য ভিডিওটি শেয়ার করার অনুরোধও জানান তিনি। তবে ডিসমিসল্যাবের ফ্যাক্টচেকে দেখা যায়, ভিডিওটি বাস্তব নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এর সাহায্যে তৈরি। ভারত থেকে চালানো এক ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট থেকে এ ধরণের একাধিক ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ।

দ্য জয়পুর ডায়লগস একটি এক্স একাউন্ট থেকে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে একজনকে বলতে শোনা যায়, “বাংলাদেশে এখন রাত। দিপু চাদরের মতো ওরা আমাদেরও শেষ করে দেবে। আপনারা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছেন কী ঘটছে। এই ভিডিওটিকে যত বেশি সম্ভব শেয়ার করুন যাতে কেউ আমাদের বাঁচাতে পারে। বুঝতে পারছি না, সবকিছু হঠাৎ করে বিগড়ে গেল।” 

ভিডিও-এর ক্যাপশনে লেখা- “বাংলাদেশ এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে।” ভিডিও-এর উপরে লেখা, “প্রতিদিন হিন্দুদের হত্যা করা হচ্ছে”, “দিপু চন্দ্রের মতো আমরাও”। পোস্টটি এ পর্যন্ত এক লাখ ৭০ হাজার বারের বেশি দেখা হয়েছে, রিপোস্ট হয়েছে এক হাজারেরও বেশি বার।  

একই ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে দ্য অল্টারনেটিভ মিডিয়া নামে আরেকটি গণমাধ্যমের এক্স একাউন্ট থেকেও। এই পোস্টে “হিন্দুসআন্ডারএটাক” (HindusUnderAttack), ‘ইসলামিস্ট’ (Islamist), ‘ইউনুস’ (Yunus) এসব হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওটি এ পর্যন্ত ৩১ হাজারেরও বেশি বার দেখা হয়েছে।

ভিডিওর কি-ফ্রেম ধরে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে একটি ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট ও ইউটিউবে চ্যানেলে একই ধরনের একাধিক ভিডিও পাওয়া যায়। কুলদীপ মিনা নামের একই ব্যক্তির ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে ভিডিওগুলো প্রচার করা হচ্ছে। এই একাউন্ট ও চ্যানেল উভয়ই ভারত থেকে চালানো হয় বলে জানা যায়। 

যাচাই করা ভিডিওটি ২৪ ডিসেম্বর কুলদীপ মিনা তার ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে প্রথম পোস্ট করেন। ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে ৪০ লাখ বার দেখা হয়েছে। ভিডিওর ৬ ও ১৩ সেকেন্ডে বাংলাদেশের পতাকা ও খুটির উপরের অংশের দৃশ্যে কিছু বৈসাদৃশ্য দেখা যায়। 

বাংলাদেশ নিয়ে আরও একাধিক ভিডিও (, , , , )  পোস্ট করা হয় এই একাউন্ট থেকে। ভিডিওগুলো বাংলাদেশের “লাইভ গ্রাউন্ড সিন” বলে দাবি করলেও ভিন্ন ভিন্ন দিনের ভিডিওতে আশেপাশের দৃশ্যের উপাদান প্রায় একই — বাংলাদেশের পতাকা, ভবনে বা দোকানে আগুন, গাড়ি ইত্যাদি। এর মধ্যে সেসব ভিডিওতে (, ) আশেপাশের দোকানের নাম দেখা যায় তা বিকৃত। একটি ভিডিওতে তাকে ইংরেজিতে কথা বলতে শোনা যায়। ভিডিওতে ব্যক্তির ঠোঁটের নড়াচড়ার সাথে কথার কোনো মিল নেই, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের স্পষ্ট লক্ষণ।

এই ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে সম্পাদিত ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (, ) সাহায্যে তৈরি ভিডিও পাওয়া যায়। এক ভিডিওতে টাইটানিক ডোবার সময় তাকে পাশ থেকে ভিডিও করতেও দেখা যায়। একটি ভিডিওর ক্যাপশনে তাকে উল্লেখ করতে দেখা যায়, “সোরা ওপেন এআই”। সোরা ওপেন এআই–এর একটি উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক মডেল, যা লিখিত নির্দেশনা থেকে বাস্তবসম্মত ও দীর্ঘ ভিডিও তৈরি করতে পারে। এটি জটিল দৃশ্য, চরিত্রের চলাচল ও পরিবেশগত পরিবর্তন বুঝে ভিডিওতে রূপ দিতে সক্ষম।

অধিকতর যাচাইয়ে, কনটেন্ট শনাক্তকরণ টুল ডিপফেক-ও-মিটারহাইভ মডারেশন দিয়ে যাচাই করে দেখা গেছে ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরির সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। ইন্ডিয়া টুডেও একটি বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনের মাধ্যমে দেখিয়েছে যে যাচাই করা এই ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি।

অর্থাৎ, বাংলাদেশি হিন্দু যুবকের সাহায্য চাওয়ার এই ভিডিওটি বাস্তব নয়। এআই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ভিডিওটি বানানো হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, ময়মনসিংহের ভালুকায় দিপু চন্দ্র দাস নামের এক পোশাকশ্রমিককে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে সংঘবদ্ধভাবে মারধর করে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।

এআই টুল ব্যবহার করে তৈরি ভিডিও মিথ্যা দাবিতে প্রায়ই বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়াতে দেখা যায়। ডিসমিসল্যাব এর আগে এআই দিয়ে তৈরি ভিডিওর ওপর একাধিক ফ্যাক্টচেক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।

আরো কিছু লেখা