ইশরাত জাহান তাঞ্জু
ফোনে ‘হ্যালো’ বলার প্রচলন গ্রাহাম বেলের প্রেমিকার নাম থেকে নয়
ইশরাত জাহান তাঞ্জু
সামনাসামনি বা টেলিফোন, ইন্টারনেটে আমরা প্রায়ই অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের শুরুটা করি ‘হ্যালো’ শব্দ দিয়ে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমসহ ফেসবুক (১, ২, ৩, ৪, ৫) ও ইউটিউবে (১, ২, ৩) দাবি করা হচ্ছে, ফোনে হ্যালো বলার উদ্ভব খোদ টেলিফোনের আবিস্কারক গ্রাহাম বেলের প্রেমিকার নাম থেকে। কিন্তু দাবিটি সঠিক নয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো এসব পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে, টেলিফোনের আবিস্কারক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল হ্যালো শব্দটির প্রচলন করেছিলেন তাঁর বান্ধবী হ্যালো মার্গারেট-এর নাম থেকে। ভালোবেসে তাঁকে হ্যালো বলে ডাকতেন গ্রাহাম বেল। টেলিফোন আবিষ্কারের পর প্রথম ফোনটি তিনি বান্ধবী হ্যালোকেই করেছিলেন। টেলিফোনে প্রথম যে শব্দটি ব্যবহার করেন সেটি ছিল ‘হ্যালো’। অর্থাৎ টেলিফোনে তিনি সর্বপ্রথম তার বান্ধবী হ্যালোকে (মার্গারেট) ডেকেছিলেন। সেই থেকে হ্যালো শব্দটি বিশ্বজুড়ে মোবাইল- টেলিফোন ব্যবহারকারীদের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করে। এছাড়া একাধিক ফেসবুক পোস্টে সাথে গ্রাহাম বেলের সাথে এক নারীর ছবিও যুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮) গ্রাহাম বেলের প্রেমিকার নাম থেকেই ফোনে হ্যালো বলার চর্চা শুরু বলে দাবি করা হয়।

ফ্যাক্টচেকিং সাইট স্নোপস-এর প্রতিবেদন এবং আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল: গিভিং ভয়েস টু দ্য ওয়ার্ল্ড নামের বই থেকে জানা যায়, হ্যালো নামে গ্রাহাম বেলের কোনো বান্ধবী ছিল না। বরং ১৮৭৬ সালে তিনি যখন টেলিফোন আবিস্কার করেন, তখন তাঁর সম্পর্ক ছিল ম্যাবেল গার্ডিনার হুবার্ড নামের এক নারীর সঙ্গে। পরের বছরই তাঁরা বিয়ে করেন এবং ১৯২২ সালে বেলের মৃত্যুর আগপর্যন্ত তাঁরা একসঙ্গেই ছিলেন। ফেসবুকে ছড়ানো কিছু পোস্টে গ্রাহাম বেলের সঙ্গে যে নারীর ছবি যুক্ত করা হয়েছে, সেটি আসলে ম্যাবেল হুবার্ডের ছবি।
ফ্যাক্ট চেকিং সাইট আফ্রিকাচেক-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৮৭৬ সালের ৭ মার্চ আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেলকে টেলিফোন আবিস্কারের জন্য পেটেন্ট দেওয়া হয়। এর তিনদিন পর তিনি তাঁর সহকারী থমাস ওয়াটসনকে প্রথম কলটি করেন এবং বলেন, “মি. ওয়াটসন – কাম হেয়ার – আই ওয়ান্ট টু সি ইউ” (ওয়াটসন – এদিকে আসুন – আমি আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই)।
এছাড়া, ২০১১ সালে ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিজ্ঞানী থমাস আলভা এডিসনই এই হ্যালোর ব্যবহার প্রচলন করেন।
১৯৯২ সালে প্রকাশিত নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৮৭৭ সালে এডিসন টেলিফোনকে বিবেচনা করেছিলেন শুধু ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহারের যন্ত্র হিসেবে যেখানে টেলিফোনের দুই প্রান্তই সব সময় উন্মুক্ত থাকত। এই ব্যবস্থাটি একটি সমস্যা তৈরি করেছিল: কীভাবে এক প্রান্তের মানুষ বুঝতে পারবেন যে, অন্য প্রান্ত থেকে কেউ কথা বলতে চায়? এই সমস্যা সমাধানের জন্য এডিসন প্রস্তাব করেছিলেন “হ্যালো” শব্দটির ব্যবহার। এক প্রান্ত থেকে কেউ হ্যালো বললেই অন্য প্রান্তের মানুষ বুঝতে পারবেন যে, কেউ কথা বলতে চায়।
একই সময়ে গ্রাহাম বেল হ্যালোর পরিবর্তে প্রস্তাব করেছিলেন “আহোয়!” শব্দটির ব্যবহার। যেটি সেসময় বেশি ব্যবহার করতেন নাবিকেরা। কিন্তু দুই শব্দের লড়াইয়ে শেষপর্যন্ত হ্যালোরই জয় হয়। ১৮৭৮ সালে এডিসন প্রথম যে টেলিফোন এক্সচেঞ্জ চালু করেন, সেখানেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে হ্যালো। ১৮৮০-এর দশকের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব টেলিফোন এক্সচেঞ্জেই প্রচলিত হয়ে যায় হ্যালো শব্দটির ব্যবহার।