তামারা ইয়াসমীন তমা
বার্ড ফ্লু আতঙ্ক: বাংলাদেশে কি মুরগি খেতে নিষেধ করা হয়েছে?
তামারা ইয়াসমীন তমা
বাংলাদেশে বার্ড ফ্লু বা এইচ৫এন১ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ে বেশ কিছু পোস্ট (১, ২, ৩, ৪) সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। বাংলা ভাষায় লিখিত এসব পোস্টে হাঁস-মুরগি না খাওয়ার নির্দেশনার কথাও প্রচারিত হয়। তবে, বাংলাদেশে বার্ড ফ্লু নিয়ে কোনো ধরনের সতর্কতা বা হাঁস-মুরগি খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি বলে ডিসমিসল্যাবকে নিশ্চিত করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
“ছড়িয়ে পড়েছে ‘এইচ৫এন১’ ভাইরাস। হাঁস-মুরগী না খাওয়ার নির্দেশ” লেখা ভাইরাল এসব পোস্টের সূত্র খোঁজ করতে গিয়ে কিছু গণমাধ্যমের সংবাদ সামনে আসে। যাচাইয়ে দেখা যায়, গত ৬ মার্চ জাগো নিউজ ও নিউজ২৪ বিডি ‘আপাতত মুরগি না খাওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের’ শিরোনামে সংবাদ প্রচার করে। একই দিনে রাইজিং বিডি ‘এইচ৫এন১ ভাইরাস: মুরগি ‘আপাতত’ না খাওয়ার পরামর্শ’ শিরোনামে একই সংবাদ প্রচার করে। তবে সবগুলো সংবাদই ভারতের ঝাড়খণ্ড প্রদেশ সংশ্লিষ্ট। ঝাড়খণ্ডে মুরগির এইচ৫এন১ ভাইরাস বা বার্ড ফ্লু ভাইরাস ছড়ানোয় সতর্কতা জারি করেছে দেশটির স্থানীয় সরকার।
আন্তর্জাতিক বিভাগে প্রচারিত এসব সংবাদের ভেতরে বিস্তারিতভাবে ভারতের কথা উল্লেখও করা হয়েছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বোকারো জেলায় বার্ড ফ্লু বা অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ছড়িয়ে পড়ায় চার হাজার হাঁস-মুরগি মেরে ফেলা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ হওয়ায় প্রতিবেদনগুলোতে বাংলাদেশেও বার্ডফ্লু ছড়ানোর শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এই ফ্লুর ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক ডিসমিসল্যাবকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মুরগির মাংস খাওয়ার বিষয়ে কোনো সর্তকর্তা বা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি।
তিনি বলেন, “ফেসবুকে যা ছড়িয়েছে, তা সঠিক নয়। বাংলাদেশে এমন কোনো ঝুঁকি তৈরি হয়নি। সাধারণ মানুষ নির্দ্বিধায় বয়লার মুরগির মাংস খেতে পারেন।”
তবে সংবাদ শিরোনামগুলোতে ভারতের নাম উল্লেখ না থাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংবাদগুলো (১, ২) শেয়ার করার পর পাঠক তা বাংলাদেশের সংবাদ ভেবে বিভ্রান্ত হয়েছে। কমেন্ট সেকশনে কেউ বলেছেন, “এমনি খাইনা”। কেউ আবার প্রশ্ন তুলেছেন যে, তাহলে মানুষ কী খাবে?
ফেসবুকের ভাইরাল পোস্টগুলোর কমেন্ট সেকশনেও দেখা যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেই সংবাদটি গুজব বলে মন্তব্য করছেন। আবার অনেকে বলছেন সংবাদটি গুজব না হলেও মুরগির দাম কমাতে সহায়তা করবে।
মোঃ মুরাদ গাজী নামের একজন কমেন্টে লিখেছেন, “গুজব”। মোহাম্মদ পারভেজ হাসান লিখেছেন, “ভাই, আরো বড় ধরনের রোগের কথা বলেন যাতে ৭-১০ দিন মানুষ ভয়তে মুরগি না খায়”। উসামা আলী লিখেছেন, “ভুয়া খবর। খামারিদের আবার পথে বসানোর চক্রান্ত চলছে”।
রুমা খাতুন নামের একজন লিখেছেন, “গুজব হোক আর গজব। শেয়ার করেন সিন্ডিকেট ভাঙেন, প্রাণের ভয়ে না খেলে দাম নামাতে বাধ্য”।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের পোল্ট্রি খাতে ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (এইচপিএআই)-র সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর ২০১৩ সাল পর্যন্ত দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৫২ জেলাতেই ৫৫৬ বার এইচপিএআই এইচ৫এন১ ছড়ানোর তথ্য মিলে।
তবে এবার পার্শ্ববর্তী দেশে সংক্রমণের খবর মিললেও বার্ডফ্লুর ভাইরাস নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো সতর্কতা জারি করা হয়নি। এছাড়া হাঁস-মুরগি ও ডিম খাওয়া বন্ধে নির্দেশনা জারির বিষয়টিও পুরোপুরি ভিত্তিহীন।