নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
নভেম্বর ২৪, ২০২৫
১৮:৪০:৪৫
ডাকসু সদস্য রাফিয়াকে নিয়ে এনসিপি নেত্রী সামান্তা শারমিনের ভুয়া বক্তব্য প্রচার

ডাকসু সদস্য রাফিয়াকে নিয়ে এনসিপি নেত্রী সামান্তা শারমিনের ভুয়া বক্তব্য প্রচার

নভেম্বর ২৪, ২০২৫
১৮:৪০:৪৫

নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেছেন, ডাকসু এর কার্যনির্বাহী সদস্য উম্মা উসওয়াতুন রাফিয়া নিজেই নিজের বাসায় আগুন দিয়েছে – এমন একটি দাবি সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে বিষয়টি সত্য নয় বলে ডিসমিসল্যাবকে জানিয়েছেন সামান্তা শারমিন।

ফেসবুকে “রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ” নামের একটি পেজ থেকে পোস্ট করা হয়। ক্যাপশনে বলা হয়, “ডাকসুর নেত্রী রাফিয়া নিজেই অগ্নিসংযোগ করে, নাটক সাজিয়ে অন্যকে ফাঁসিয়েছে -সামান্তা।” এই পোস্টের কমেন্টে অডিট নিউজ নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ডের নাটক সাজিয়ে অন্যকে ফাঁসানোর অভিযোগ -এনসিপি নেত্রী সামান্তা।” প্রতিবেদনে বলা হয়, “একটি জাতীয় রাজনৈতিক দলের নেত্রী সামান্তা, গণমাধ্যমকে দেওয়া বক্তব্যে দাবি করেন যে, তাকে রাফিয়া নির্বাচনে সহানুভূতি পাওয়ার কৌশল সম্পর্কে ফোন করেছিলেন। সামান্তার ভাষ্যমতে, তিনি রাফিয়াকে জনগণের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন; তবে তার দাবি, রাফিয়া ফোনে এমন একটি পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেছিলেন, যা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন হন। সামান্তা বলেন, তিনি রাফিয়াকে কোনো ধরনের উসকানিমূলক বা ক্ষতিকর কাজ না করতে অনুরোধ করেছিলেন, এবং ঘটনাটি সংবাদে প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন। তবে রাফিয়া বা তার পরিবার এখন পর্যন্ত এসব অভিযোগ সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেননি।” 

এছাড়াও এই পেজ থেকে এই বিষয়ে একাধিক (,) ফটোকার্ড পোস্ট করা হয়। একই দাবি করে ফেসবুকের একাধিক ব্যক্তিগত প্রোফাইল (,) এবং গ্রুপ (,,) থেকে ফটোকার্ড পোস্ট হতে দেখা যায়। 

ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করে কোনো গণমাধ্যমে সামান্তা শারমিনের এমন বক্তব্য খুঁজে পায়নি ডিসমিসল্যাব। অধিকতর নিশ্চিত হতে ডিসমিসল্যাব সামান্তা শারমিনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি নিশ্চিত করেন এ বক্তব্য ভুয়া, “এই বিষয়ে আমি কাউকে কোনো মন্তব্য করিনি।”

প্রসঙ্গত, গত ১৯ নভেম্বর উম্মা উসওয়াতুন রাফিয়ার বাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ২০ নভেম্বর পৃথক অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এই বিষয়ে একাধিক (,,) সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

২১ নভেম্বর প্রথম আলোর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, “ময়মনসিংহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদস্য উম্মা উসওয়াতুন রাফিয়ার বাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পৃথক অভিযানে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গত বুধবার রাত তিনটার দিকে ডাকসু সদস্য উম্মা উসওয়াতুন রাফিয়ার ময়মনসিংহ নগরের ঢোলাদিয়া এলাকার বাসায় ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।” 

অর্থাৎ, ডাকসু সদস্য রাফিয়াকে নিয়ে এনসিপি নেত্রী সামান্তা শারমিনের ভুয়া বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে।

“রুখে দাও বাংলাদেশ” নামের পেজটি থেকে ইতিপূর্বে অন্তত দুটি অপতথ্য ছড়ানোর নজির পাওয়া যায়। গত ১৫ নভেম্বর পেজটি থেকে এনসিপি নেত্রী নুসরাত জাহান বিন্তি এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটর নুরুজ্জামান কাফিকে নিয়ে একটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটিতে দাবি করা হয়, “এনসিপি নেত্রী নুসরাত জাহান বিন্তি এবং কাফির অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।” পোস্টটির কমেন্টে একটি লিংক দেয়া হয় যেটিতে একাধিক ছবি রয়েছে। এই ছবিগুলোকে বিন্তি এবং কাফির ছবি হিসেবে দাবি করা হয়। তবে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দাবিটি ভুয়া। মূলত আলোচিত ছবিগুলো কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কাফি এবং এনসিপি নেত্রী বিন্তির নয়, বরং ভারতের কেরালা রাজ্যের মালয়ালি দম্পতি শারুন রাজ-বৈষ্ণবীর ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবিকে ভুয়া দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এছাড়াও, গত ১৪ নভেম্বর পেজটি থেকে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদকে নিয়ে একটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটিতে দাবি করা হয়, “ব্যারিষ্টার ফুয়াদ অন্তরঙ্গ মুহুর্তে জনতার হাতে আটক।” পোস্টটির কমেন্টে একটি লিংক দেয়া হয় যেখানে একাধিক ছবিকে ব্যারিস্টার ফুয়াদের ছবি বলে দাবি করা হয়। তবে, এই বিষয়ে একাধিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ফেসবুকে পোস্ট (, )  দিয়ে জানায় যে এটি ব্যারিস্টার ফুয়াদের ভিডিও নয়।

আরো কিছু লেখা