নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
এনসিপি নেতার গুলিবিদ্ধের ঘটনায় পুলিশের ভুয়া বরাতে পাকিস্তানি গণমাধ্যমে ভারতীয় ‘র’ সম্পৃক্ততার দাবি

এনসিপি নেতার গুলিবিদ্ধের ঘটনায় পুলিশের ভুয়া বরাতে পাকিস্তানি গণমাধ্যমে ভারতীয় 'র' সম্পৃক্ততার দাবি

নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

পাকিস্তানি গণমাধ্যম টাইমস অব ইসলামাবাদ খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা মো. মোতালেব শিকদার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা ভারতীয় ‘র’ এর সম্পৃক্ততা নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। তবে ডিসমিসল্যাব ফ্যাক্টচেক করে দেখেছে দাবিটি ভুয়া। সোনাডাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অনিমেষ মণ্ডল ডিসমিসল্যাবকে নিশ্চিত করেছেন, এ ধরনের কোনো বক্তব্য তিনি দেননি এবং টাইমস অব ইসলামাবাদের সাথে তার কোনো কথা হয়নি। 

গত ২২ ডিসেম্বর পাকিস্তানি গণমাধ্যম টাইমস অব ইসলামাবাদ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে বাংলাদেশের ছাত্র নেতার মাথায় গুলি করা হয়েছে।” প্রতিবেদনের একটি অংশে বলা হয়, “সোনাডাঙ্গা মডেল থানার পুলিশ ইন্সপেক্টর অনিমেষ মণ্ডল, ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের মতো এই হামলার পেছনেও ভারতীয় র-কে সন্দেহ করছে।”

বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর সর্বশেষ সংবাদ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ ঘটনায় কোনো প্রতিবেদনে পুলিশ বা অন্য কোনো উৎস ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী ‘র’ এর সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করেনি। একাধিক (, , , ) গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কোনো পুলিশ সদস্য ভারতীয় ‘র’ এর ভূমিকার কথা উল্লেখ করেনি। ২২ ডিসেম্বর প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, “খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা মো. মোতালেব শিকদারকে (৪২) ‘বাসার ভেতরের অন্তঃকোন্দলে’ গুলি করা হয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা।”

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, “সোনাডাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অনিমেষ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, গুলিটি মোতালেব শিকদারের মাথার চামড়া স্পর্শ করে বেরিয়ে যায়। এতে রক্তক্ষরণ হলেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান। বর্তমানে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং শঙ্কামুক্ত। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রথমে ভুক্তভোগী আমাদের জানিয়েছিলেন, রাস্তায় মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায়। পরে দেখলাম যে ঘটনা ঘরের ভেতরের। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, এক–দুজন তাঁকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁকে কারা হাসপাতালে নিয়ে যান, সেটাও আমরা খুঁজে দেখছি।’” 

সোনাডাঙ্গা থানার এই পুলিশ কর্মকর্তার দেওয়া কোনো বক্তব্যেই ‘র’ এর সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ নেই। 

অধিকতর যাচাইয়ে, সোনাডাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অনিমেষ মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিসমিসল্যাব। অনিমেষ মণ্ডল ডিসমিসল্যাবকে নিশ্চিত করে বলেন, “এরকম কোনো কথা আমি বলি নাই”। তিনি আরও বলেন “এটা মিথ্যা আর ওদের (টাইমস অব ইসলামাবাদ) সাথে আমার কোনো কথাও হয়নি।”

এ বিষয়ে টাইমস অব ইসলামাবাদের সঙ্গে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো জবাব দেয়নি সংবাদমাধ্যমটি।  

এছাড়া টাইমস অব ইসলামাবাদের প্রতিবেদনে “উৎস” হিসেবে উল্লেখিত দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনেও এ ঘটনায় ‘র’ এর সম্পৃক্ততা রয়েছে বা পুলিশ সন্দেহ করছে- এমন কোনো বক্তব্যের উল্লেখ নেই। এবং এই প্রতিবেদনে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে ওসি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের বরাতে প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে অনিমেষ মণ্ডলের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

বিস্তারিত জানতে এ ব্যাপারে ডেইলি স্টারের খুলনা প্রতিনিধি দীপংকর রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিসমিসল্যাব। তিনি নিশ্চিত করেছেন, এ ঘটনা নিয়ে তথ্য যাচাইয়ের সময় কথোপকথনের কোনো অংশেই ভারতের ‘র’ সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি পুলিশ কর্মকর্তা। এবং দীপঙ্কর জানিয়েছেন, প্রতিবেদনের প্রয়োজনে তথ্য যাচাইয়ে ওসি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তিনি, অনিমেষ মণ্ডলের সঙ্গে নয়।

এছাড়া ২২ ডিসেম্বরই ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি হত্যা মামলায় ‘র’ এর ভূমিকা রয়েছে দাবিতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে টাইমস অব ইসলামাবাদ। যা নিয়ে ভারতীয় ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল ফরেনসিক রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইটিকস সেন্টার (ডিএফআরএসি) তাদের ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করে।

প্রসঙ্গত, গত ২২ ডিসেম্বর দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সোনাডাঙ্গা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা মো. মোতালেব শিকদার। আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, গুলিটি তার মাথার চামড়া স্পর্শ করে বেরিয়ে গেছে। বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত।

আরো কিছু লেখা