তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
কাদায় জলহস্তীর পাল, উগান্ডার ভিডিও সাতক্ষীরার বলে প্রচার

কাদায় জলহস্তীর পাল, উগান্ডার ভিডিও সাতক্ষীরার বলে প্রচার

তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সাতক্ষীরার একটি স্থানীয় খালের কাদার তলায় হাবডুবু খাচ্ছে এক পাল জলহস্তী- এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। গরমে সায়ের খাল শুকিয়ে যাওয়ায় জলহস্তীগুলো খুব কষ্টে আছে বলে দাবি করা হয় ফেসবুক পোস্টে। যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওটি সাতক্ষীরার সায়ের খাল বা বাংলাদেশের অন্য কোনো এলাকার নয়। মূল ভিডিওটি উগান্ডার কুইন এলিজাবেথ ন্যাশনাল পার্কের। 

গত ২৯ এপ্রিল ফেসবুকের একটি পেজে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। সাতক্ষীরার খালের ভিডিও দাবিতে আরো কিছু ব্যক্তিগত প্রোফাইল (,,) ও পেজ (,,,) থেকেও শেয়ার করা হয়েছে ১১ সেকেন্ডের ভিডিওটি। এতে দেখা যায়, চারপাশে মাঠের মতো খোলা জায়গা। প্রায় শুকনো খালের পানিতে কাদায় নাকমুখ ডুবিয়ে নড়াচড়া করছে এক পাল জলহস্তী। 

ফেসবুকে একজনের ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে শেয়ার করা ভিডিওটি দেখেছেন সবচেয়ে বেশি ব্যবহারকারী। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা: ‘সাতক্ষীরার সায়েরের খালে একি দেখা যায়। এটা কি কেউ জানলে জানাবেন।’ এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ভিডিওটি ২৮ লাখেরও বেশি ব্যবহারকারী দেখেছেন। সাড়ে চারশোরও বেশিবার শেয়ার করা হয়েছে। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ১০ হাজারেরও বেশি ব্যবহারকারী এবং মন্তব্য করেছেন এক হাজারের অধিক। মন্তব্যকারীদের কেউ কেউ ভিডিওটির প্রকৃত স্থান নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করছেন। একজন লেখেন, ‘যদি সাতক্ষীরা হয়, তবে গরু অথবা মহিশ হবে।’ আরেকজন মন্তব্য করেন, ‘এটা অন্য দেশের কোন সাফারি পার্কের।’ ‘সায়রের খাল দেখছি দখলমুক্ত দোকানপাট মাছ বাজার সব গেল কই’ লেখে কমেন্ট করেছেন আরেক ব্যবহারকারী।

রিভার্স ইমেজ সার্চ করে নিউজফ্লেয়ার নামক ভিডিও বেচা-কেনার ওয়েবসাইটে প্রকৃত ভিডিওটি খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। ১৮ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ভিডিওর শুরুর ১১ সেকেন্ড অংশ কেটে নিয়ে সেটি ফেসবুকে বাংলাদেশের সাতক্ষীরার বলে প্রচার করা হয়েছে।

নিউজফ্লেয়ার সাইটে ভিডিওটির বিবরণে বলা হয়, ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর কৃষ্ণ সুকরিত নামের এক নারী উগান্ডার কুইন এলিজাবেথ ন্যাশনাল পার্ক পরিদর্শনের সময়ে মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দি করেন। ৬১ বছর বয়সী সুকরিত বলেন, ‘শুরুতে কাদা নড়তে দেখে আমি  চিৎকার করে উঠেছিলাম। আমার বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লেগেছিল যে এগুলো জলহস্তী।’ অন্তত ২৫ টি জলহস্তী আনন্দের সঙ্গে কাদায় স্নান করছিল বলেও জানান তিনি।

প্রকৃত সায়ের খাল দেখতে কেমন?

সাতক্ষীরার এই খালটি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ প্রতিবেদন (,,,,) প্রকাশ হতে দেখা যায়। এসব প্রতিবেদনে বলা হয়, অবহেলা আর অবৈধ দখলদারিতে দূষণের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে খালটি। বিভিন্ন সময়ে খালের উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা ব্যর্থ হয়েছে। 

জানা যায়, জলাধারটির প্রকৃত নাম প্রাণসায়ের খাল। প্রথম আলোর এক সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮৫০ সালের দিকে সাতক্ষীরার জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরী নদীপথে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা ও শহরের সৌন্দর্যতা বৃদ্ধির জন্য খালটি খনন করেছিলেন। পরে তাঁর নামেই ‘প্রাণসায়ের খাল’ হিসেবে এটি পরিচিতি পায়। 

সাতক্ষীরা শহরের বুক চিরে বয়ে গেছে প্রাণসায়ের খাল। প্লাস্টিকের আবর্জনা আর দখলদারিতে খালটির অস্তিত্বই এখন সংকটের মুখে। তাই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে যে বিশাল প্রান্তর দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল দেখা যায় তার সঙ্গে প্রাণসায়ের খালের দৃশ্যগত মিলও নেই।

আরো কিছু লেখা