আহমেদ ইয়াসীর আবরার
পুরোনো ভিডিও ঘূর্ণিঝড় রিমালের দৃশ্য হিসেবে প্রচার
আহমেদ ইয়াসীর আবরার
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে যেগুলোর সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কোনোই সম্পর্ক নেই। ভারত, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশের পুরোনো দুর্যোগের ভিডিওকে রিমালের আঘাতের দৃশ্য হিসেবে প্রচার করছেন অনেকে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রিমালের ফলে বাংলাদেশে ১০ জন মানুষ মারা গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৭ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ। ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি হয়েছে ভারতেও।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব বলে ফেসবুকে একটি রিল প্রচার হতে দেখা যায়। দুর্যোগের এই ভিডিও রিলটি মোট ৭টি ক্লিপ জোড়া দিয়ে বানানো; ক্লিপগুলোর সবই পুরোনো। ক্যাপশনে বলা হয় “ঘূর্ণিঝড় রেমালের তান্ডব কতটা ভয়াবহ দেখেন।” ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায় ভিডিওর প্রথম, চতুর্থ এবং সপ্তম ক্লিপটি ভারতের হিমাচল প্রদেশে ২০২৩ সালে ঘটে যাওয়া বন্যার। সবচেয়ে পুরোনো যে সূত্রটি পাওয়া যায় তা হচ্ছে গো হিমাচল এক্স (সাবেক টুইটার) একাউন্ট থেকে ২০২৩ সালের ৯ জুন প্রকাশিত একটি ভিডিও। মূল ভিডিওকে কেটে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর বিভিন্ন অংশে যুক্ত করে তা রিমালের বলে প্রচার করা হয়।
রিলটির দ্বিতীয় ও পঞ্চম ক্লিপে যে চিত্র দৃশ্যমান, সেগুলো পাওয়া যায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম চ্যানেল-৪ নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে। ২০২৩ সালের ১৪ মে প্রকাশিত এই ভিডিওটির বর্ণনায় বলা হয়, মিয়ানমার ও বাংলাদেশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় মোখার দৃশ্য রয়েছে এতে। মিয়ানমারের এলাকাটির নাম বলা আছে সিতওয়ে।
তৃতীয় ক্লিপে দেখা যায়, সমুদ্র থেকে তীরের দিকে ধেয়ে আসছে বিশাল এক ঘূর্ণায়মান জলরাশি। সূত্র খুঁজতে গেলে বিশ্ব নিউজ নামক একটি ভারতীয় গণমাধ্যমের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন সামনে আসে। ২০২৩ সালে ভারতে হওয়া ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের পর ভিডিওটি ভাইরাল হলে বিশ্ব নিউজ এটি যাচাই করে। তাদের যাচাইয়ে বলা হয় এটি ফক্স ওয়েদারের ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রকাশিত একটি ভিডিও, যা ধরা পড়ে সাইপ্রাস সৈকতে।
ষষ্ঠ ক্লিপটি যাচাইয়ে পাওয়া যায় ভারতীয় তথ্য যাচাইকারী সংস্থা ফ্যাক্টলির একটি প্রতিবেদন। সেখানে বলা হয়, ভিডিওটি ২০২৩ সালে লিবিয়ায় আঘাত হানা ভয়াবহ বন্যার সময়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফ্যাক্টলি জানায়, মূল ভিডিওটি ছবি ও ভিডিও বেচাকেনার ওয়েবসাইট শাটারস্টক থেকে নেয়া। তবে মূল ভিডিওর পেছনে টর্নেডোর অংশটুকু সুরিয়ালভিডিওজ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলের।
এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় রিমালের দুদিন আগে আরেকটি রিল প্রচারিত হয় ফেসবুকে। রিলে একজনকে বলতে শোনা যায়, “দেখুন ভারতে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হওয়ার কারণে অনেক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। গরিব অসহায় মানুষের গবাদিপশুগুলা ভেসে বাংলাদেশে চলে আসছে। দেখুন যেভাবে পানি আসতেছে হয়তো বাংলাদেশেও বন্যা হয়ে যাইতে পারে।” তবে ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে পশ্চিম আফ্রিকার ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা ডুবাওয়ার একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ভিডিওটি ২০২১ সালে নাইজেরিয়ার বন্যার হিসেবে প্রচারিত হচ্ছিল সামাজিক মাধ্যমে। কিন্তু ডুবাওয়া নিশ্চিত করে যে এটি মেক্সিকোর নায়ারিত রাজ্যের সাকুয়ালপান নদীর দৃশ্য, যা ধারণ করা হয় ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘হানা’র সময়ে। একই ভিডিও ভারতের কেরালা রাজ্যের ওয়েনাড জেলার দৃশ্য বলে প্রচারিত হলে দেশটির গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনের মাধ্যমে তা নাকচ করে দেয়।
ঘূর্ণিঝড় রিমালকে কেন্দ্র করে এআই দিয়ে তৈরি ছবিও প্রচার হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এটি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের পর সৃষ্ট বন্যার পানি থেকে বাঁচতে কয়েকটি শিশু একটি নারিকেল গাছে আশ্রয় নিয়েছে এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। তবে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে জানা যায় ভিডিওটি পুরোনো।