আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
তিব্বত ভূমিকম্পের ঘটনায় ছড়াচ্ছে এআই নির্মিত ও পুরোনো ছবি
This article is more than 3 months old

তিব্বত ভূমিকম্পের ঘটনায় ছড়াচ্ছে এআই নির্মিত ও পুরোনো ছবি

আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

তিব্বতে সম্প্রতি এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে ধ্বসে পড়েছে অসংখ্য স্থাপনা, নিহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। এর প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ভূমিকম্পের দৃশ্য দাবিতে এমন কিছু ছবি ছড়াতে দেখা গেছে যেগুলোর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এই ছবিগুলোর মধ্যে একটি শিশুর ছবি পাওয়া যায় যেটি তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে। এছাড়া আরও দুইটি ছবি পাওয়া যায় যেগুলোর একটি ১৬ এবং অন্যটি ১৪ বছর পুরোনো ঘটনার।

ফেসবুক এক পোস্টের ক্যাপশনে লেখা “ভয়াবহ ভূমিকম্প তিব্বত 🙏🙏🙏”। এই পোস্টের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে ৬টি ছবি। এই ছবিগুলোর মধ্যে একটিতে দেখা যাচ্ছে স্থাপনার নিচে চাপা পড়া এক শিশুকে। শিশুর এই ছবিটি তিব্বত ভূমিকম্প নিয়ে করা আরো কিছু পোস্টেও যুক্ত থাকতে দেখা যায় (, , )। ছবিটিকে নিবিড়ভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় শিশুটির একটি হাতে ৬টি আঙুল দেখা যাচ্ছে।

ছবিটি সম্পর্কে যাচাই করতে গেলে ডিসমিসল্যাবের সামনে আসে চীনের ইয়াংজি ইভিনিং পোস্টের একটি প্রতিবেদন। প্রতিবেদনে এই ছবিটিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি ছবি বলে চিহ্নিত করা হয়। সেখানে আরও বলা হয় ১৮ নভেম্বর ২০২৪ সালে “এআই জিয়াওবা” নামের একটি চীনা টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা শর্ট ভিডিওতে এই ছবিটি পাওয়া যায়। টিকটিকের চীনা সংস্করণে “এআই জিয়াওবা” অ্যাকাউন্টটি সার্চ করলে একই শিশুর আরও বিভিন্ন এআই জেনারেটেড ভিডিও পাওয়া যায়। তাই, ছবিটির সঙ্গে তিব্বতের ভূমিকম্পের কোন সম্পর্ক নেই। 

তিব্বতের ভূমিকম্প নিয়ে আরও কিছু ফেসবুক পোস্টে (, ) একজন আক্রান্ত নারীকে উদ্ধার করার ছবি যুক্ত করা হয়েছে। এই ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদন সামনে আসে, যেটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৮ সালের ১৬ মে। সেসময় চীনের সিচুয়ান প্রদেশে হওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ নিহত হয়। এই ভূমিকম্প নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে ব্যবহৃত হয় ছবিটি। প্রতিবেদনে ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়, “বৃহস্পতিবার, ভয়াবহ ভূমিকম্পের তিন দিন পর, চীনের বেইচুয়ানে ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত একজনকে বের করে আনছেন উদ্ধারকারীরা।” অর্থাৎ, এই ছবিটি প্রায় ১৬ বছরের পুরোনো।

অন্য একটি ছবিতে কয়েকজন বৌদ্ধ ভিক্ষুকে ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এই ছবিও “ভয়াবহ ভূমিকম্প তিব্বত” ক্যাপশনসহ সাম্প্রতিক কিছু ফেসবুক পোস্টে দেখা গেছে (, , )। এই ছবিটি সার্চ করে ২০১০ সালের ১৪ এপ্রিল প্রকাশিত এনবিসি নিউজের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেবছর চীনের চিংহাই প্রদেশের ইউশুতে হওয়া ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে ২৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয় এবং নিখোঁজ হয় ২ হাজারেরও বেশি মানুষ। এই ভূমিকম্প নিয়ে করা এনবিসি নিউজের প্রতিবেদনটির শুরুতে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উদ্ধারকার্যে সাহায্য করার এই ছবিটি যুক্ত করা হয়। বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ইউটিউব চ্যানেলেও এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও পাওয়া যায়, যেটি আপলোড করা হয়েছিল ২০১০ সালে। অর্থাৎ এই ছবিটিও প্রায় ১৪ বছরের পুরোনো।

তিব্বতের ভূমিকম্পকে কেন্দ্র করে কিছু পুরোনো ভিডিও-ও সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচারিত হতে দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ নিয়েও একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডিসমিসল্যাব। প্রসঙ্গত, গত ৭ জানুয়ারি চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে হওয়া ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ১২৬ জন নিহত এবং ১৮৮ জন আহত হয়েছে বলে জানাচ্ছে দেশটির গণমাধ্যম।

আরো কিছু লেখা