তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
শিক্ষা সংক্রান্ত ফেসবুক পেজে শিক্ষা নিয়ে ভুয়া খবর
This article is more than 11 months old

পিএসসি-জেএসসি পরীক্ষা হচ্ছে না

শিক্ষা সংক্রান্ত ফেসবুক পেজে শিক্ষা নিয়ে ভুয়া খবর

তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

২০২৪ ব্যাচ থেকে আবার পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে– এমন একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। একাধিক শিক্ষা সংক্রান্ত ফেসবুক পেজ (, , , ) থেকে এমন তথ্য প্রচারিত হয়েছে। তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা গেছে শিক্ষা কার্যক্রম পরিবর্তন হওয়া সংক্রান্ত এই তথ্য সত্য নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের জানিয়েছেন যে, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এমন কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

২০২১ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। ২০২৩ সাল থেকে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম অনুযায়ী পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা থাকবে না বলে জানিয়েছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত হয়েছে নতুন মন্ত্রিসভা। সেখানে নতুন শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন মহিবুল হাসান চৌধুরি। গত ১৪ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি জানিয়েছিলেন যে, নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়নে ‘প্রয়োজনে’ অবশ্যই পরিবর্তন আনা হবে। এরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াতে দেখা গেছে পিএসসি ও জেএসসিতে পরীক্ষা পদ্ধতি আবার চালু করা সংক্রান্ত ভুয়া তথ্য। 

শিক্ষা বিষয়ক ফেসবুক পেজ ‘এডুকেশন নিউজ’ থেকে একটি বার্তা পোস্ট করে বলা হয়, “**ব্রেকিং নিউজ** ২০২৪ ব্যাচ থেকে PSC ও JSC পরিক্ষা নেওয়ার চূড়ান্ত ঘোষণা!” সেই সূত্র ধরে একাধিক ফেসবুক পেজ (, )  ও প্রোফাইল (, ) থেকে পরবর্তীতে সেটি শেয়ার করা হয়। 

এডুকেশন নিউজ পেজটি বিশ্লেষণে দেখা যায় এ সংক্রান্ত পোস্ট তিনবার করা হয়েছে। প্রথম পোস্টটি করা হয়েছে ১৫ জানুয়ারি, সোমবার বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে। পোস্টটি এ পর্যন্ত ৪৩৬ বার শেয়ার করা হয়েছে। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দুই হাজারেরও বেশি ব্যবহারকারী। আর মন্তব্য করেছেন ৩৪১ জন। পোস্টটি সত্য মনে করে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “অনেক ভালো একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত।”

আগের পোস্টের প্রায় দেড় ঘন্টা পর একই ধরনের আরেকটি পোস্টে বলা হয় “সকল শিক্ষার্থী বাবা-মা ফিরে পেতে চায় PSC ও JSC পরিক্ষা..”। সর্বশেষ আরেকটি পোস্টে বলা হয়, “নতুন কারিকুলাম আবার ফিরে যাচ্ছে আগের পরীক্ষা পদ্ধতিতে! ২০২৪ ব্যাচ থেকে PSC ও JSC পরিক্ষা নেওয়ার চূড়ান্ত ঘোষণা।” শেষের এই পোস্টটি করা হয় রাত ৯টা ১৪ মিনিটে। এডুকেশন নিউজ পেজের সবশেষ পোস্টটির বার্তা ফেসবুকে কি-ওয়ার্ড সার্চ দিলে এমন আরও অনেক (, পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টগুলো শেয়ার করা হয়েছে শিক্ষা সংক্রান্ত ফেসবুক পেজ থেকেই।

তথ্যটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়েরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডিসমিসল্যাবকে বলেন, “তথ্যটি ভুয়া। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমন কোনো ঘোষণা দেয়নি।” শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কোনো তথ্য পেতে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ও ফেসবুকের ভেরিফাইড পেজ দেখার পরামর্শ দেন তিনি।

শিক্ষা সংক্রান্ত পেজ থেকে শিক্ষা নিয়ে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষা সংক্রান্ত পেজ থেকে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ শিক্ষাবার্তা নামের ওই পেজ থেকে সেবার বলা হয় কোনো শিক্ষিকাকে বাচ্চা নিতে হলে প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিতে হবে। সেসময় এই ভুয়া তথ্য নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে (, ) একাধিক তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান।

গত বছরের নভেম্বরে আরেক শিক্ষা সংক্রান্ত পেজ ‘এনইউ নোটিস বোর্ড’ থেকেও ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়। সেখানে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আগামী ০২/১১/২০২৩ তারিখ (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিতব্য সকল পরীক্ষা স্থগিত সংক্রান্ত জরুরী বিজ্ঞপ্তি”। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় সেদিনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তবে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার তাদের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে জানায় বিষয়টি ভুয়া।

গত ডিসেম্বরে এমন আরেকটি ভুয়া তথ্য ছড়ায় শিক্ষা সংক্রান্ত পেজ থেকে। সেসময় ‘শিক্ষাবার্তা-Education News’ পেজ থেকে ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার ভুয়া রুটিন প্রচার করা হয়। সেই রুটিনটিও ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পাদনা করে ফেসবুকে প্রচার করা হয়। এটি নিয়েও সেসময় ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।

আরো কিছু লেখা