আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
বিকাশে বোনাস উপহারের নামে প্রতারণা

বিকাশে বোনাস উপহারের নামে প্রতারণা

আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

১১ কোটি গ্রাহক পূর্তি উপলক্ষে বিকাশ ২৫০০ টাকা বোনাস দিচ্ছে- এমন একটি প্রচারণা চলছে ফেসবুকে। বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচারিত এসব পোস্টের মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে অনেকেই অর্থ হারাচ্ছেন বা চলে যাচ্ছেন জুয়ার সাইটে। ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায় বিকাশের ওয়েবসাইটে এই ধরনের কোনো অফার দেওয়া হয়নি এবং এই অফারের পোস্টগুলো মূলত প্রতারণার ফাঁদ।

১১ কোটি গ্রাহক পূর্তি উপলক্ষে বিকাশ সবাইকে ২৫০০ টাকা উপহার দিচ্ছে এমন দাবিতে একটি বিজ্ঞাপন চলতে দেখা যায় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। ১৭ নভেম্বর, মেটা অ্যাড লাইব্রেরিতে “২৫০০ টাকা উপহার” কিওয়ার্ড সার্চ করে একই ধরনের প্রায় ২৬৭টি সক্রিয় বিজ্ঞাপন চলতে দেখা যায়। যেসব পেজ থেকে এই বিজ্ঞাপনটি চালানো হয়েছে সেসব পেজে এই বিজ্ঞাপন সংশ্লিষ্ট কোন পোস্ট পাওয়া যায় না।

বিজ্ঞাপনে দেওয়া লিংকে ক্লিক করলে এটি একটি ওয়েবসাইটে নিয়ে যায় যেখানে শিরোনামে লেখা, “বিকাশের ১১ কোটি গ্রাহক পূর্তি উপলক্ষে বিকাশ দিচ্ছে সবাইকে ২৫০০ টাকা বোনাস উপহার।” সর্বশেষ বোনাস প্রাপ্ত ১০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি তালিকাও দিতে দেখা যায়। কিভাবে টাকা পাওয়া যাবে এমন প্রশ্নের উত্তরে লেখা ব্যবহারকারীর ১টি বিকাশ, নগদ অথবা রকেট অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে এবং আবেদন ফরমটি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। 

আবেদন ফরমে নাম, বয়স এবং কোন মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করতে চায় তা জানতে চাওয়া হয়। টাকা গ্রহণের মাধ্যম হিসেবে তিনটি পেমেন্ট পদ্ধতি আছে। বিকাশ, নগদ ও রকেট। নগদ বা রকেটে টাকা গ্রহণ করতে চাইলে ব্যবহারকারীরা চলে যান একটি জুয়া খেলার সাইটে। বিকাশে টাকা নিতে চাইলে সামনে আসে আরেকটি ওয়েবপেজ, যেখানে আরেকটি ফরম পূরণ করতে বলা হয়।

এই ফরমে ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট নাম্বার, অ্যাকাউন্টটি পার্সোনাল নাকি এজেন্ট, অ্যাকাউন্টে এই মুহুর্তে কত টাকা আছে (পয়সা বাদে) এবং বিকাশের সেবা কেমন লাগে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে চাওয়া হয়। বিকাশ অ্যাকাউন্টে ৪৯ টাকা বা তার কম পরিমাণ অর্থ আছে উল্লেখ করলে একটি জুয়ার খেলার সাইটে নিয়ে যায় এবং ৫০ বা ততোধিক অর্থের উল্লেখ করলে সুমিতা ফার্নিচার নামের একটি পেমেন্ট গেটওয়েতে নিয়ে যায়। এই পেমেন্ট গেটওয়েতে অ্যাকাউন্ট নাম্বার, ওটিপি এবং পিনকোড চাওয়া হয়। এই সকল তথ্য দিলে পূর্বে উল্লেখিত সমপরিমাণ টাকা কেটে নেয়া হয়।

বিকাশের ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৮,৯৯৯ টাকা উপহার দেওয়ার হচ্ছে– এমন আরেকটি বিজ্ঞাপনও দেখা গেছে ফেসবুকে। এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতারণার ধরনও প্রায় একই রকম। এখানেও বিকাশের অনুকরণে তৈরি একটি সাইটে একই ধরনের তথ্য জানতে চাওয়া হয়। তথ্য জমা দিলে নিয়ে যায় আমেনা স্টোর নামের একটি পেমেন্ট গেটওয়েতে এবং একই পদ্ধতিতে টাকা কেটে নেয়। মেটায় এই বিজ্ঞাপন দেওয়া পেজটির নাম অল ডিজিটাল অফার। পেজটি খোলা হয়েছে নভেম্বরের ১৪ তারিখে। একই দিনে পেজ থেকে এই প্রতারণামূলক ওয়েবসাইটের লিংক শেয়ার করা হয়। পোস্টটিতে একজন ব্যবহারকারী লিখেন, “আমি সঠিক ইনফরমেশন দিয়েই ফরম ফিলাপ করছি বাট আমার টাকা তো আসে নাই উলটা আমার ব্যালেন্সের টাকা কাইটা নিয়া গেছে।” অর্থাৎ, এই ধরনের পোস্টের মাধ্যমে অনেকেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।

এইভাবে প্রতারণার ফাঁদ নতুন নয়। কিছুদিন পরপরই বিভিন্ন অফারের নামে সাময়িক ওয়েবসাইট তৈরি করে মানুষের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয়া হয়। চলতি বছরের অক্টোবরে ডিসমিসল্যাবের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রায় একই পদ্ধতি ব্যবহার করে ফেসবুক থেকে লাইক কমেন্ট করে আয়ের নামে আর্থিক প্রতারণা হতে দেখা যায়। এছাড়া, মেটা অ্যাড লাইব্রেরিতে এধরনের প্রতারণামূলক সাইটের লিংক শেয়ার নিয়েও পূর্বে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব।

আরো কিছু লেখা