ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
আর্থিক সাহায্যের পোস্টে পাঁচ বছর আগের পুরোনো ছবি

আর্থিক সাহায্যের পোস্টে পাঁচ বছর আগের পুরোনো ছবি

ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গত কয়েকদিন ধরে এক অসুস্থ শিশুর ছবিযুক্ত পোস্ট শেয়ার করতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রোফাইল ও পেজ থেকে। পোস্টটির বিবরণীতে বলা হচ্ছে, এক অসহায় বাবা তার অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন। এতে অসুস্থ শিশুটির কোথাও দুটি আবার কোথাও তিনটি ছবি যোগ করা হয়েছে। অর্থসাহায্য পাঠানোর জন্য বিভিন্ন পোস্টে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন বিকাশ বা নগদ নম্বর। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে, ছবির অসুস্থ শিশুটি বাংলাদেশের হলেও ঘটনাটি পুরোনো। ভারতের জনপ্রিয় ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম ‘কেট্টো’-তে পাঁচ বছর আগে শিশুটির অসুস্থতার বিবরণ পাওয়া যায় এবং ওই প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের হালনাগাদ করা তথ্য থেকে জানা যায় চার বছর আগে ভারতেই সম্পন্ন হয়েছে তার চিকিৎসা।

বেশকিছু ফেসবুক প্রোফাইল (, , , ) পেজ (, ) ও গ্রুপে (, , , , ) সম্প্রতি এই একই শিশুর ছবি শেয়ার করা হয়। মোটাদাগে দুই ধরনের বিবরণী খুঁজে পাওয়া যায় এই পোস্টগুলোতে। 

‘রাঁধা কৃষ্ণ’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ৭ ডিসেম্বর একটি পোস্ট করা হয়। এতে শিশুটির তিনটি ছবি শেয়ার করে পরিচয় উল্লেখ না করেই চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদন জানানো হয়। আর্থিক সাহায্য পাঠানোর জন্য সেখানে বিকাশ, রকেট ও নগদের মোবাইল অ্যাকাউন্ট নম্বরও যোগ করা হয়। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত পোস্টটি ফেসবুকে প্রায় সাড়ে আট হাজার জন ব্যবহারকারী শেয়ার করেছেন। 

একই শিশুর ছবিগুলো ব্যবহার করে সম্প্রতি ফেসবুকে আরেকটি পোস্ট ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। এতে দাবি করা হয়, অসুস্থ শিশুর নাম “মোঃ ইয়াসিন”। পিতার নাম বলা হয়- মোহাম্মদ ওমর আলী, যিনি পেশায় অটোচালক।

আর্থিক অসচ্ছলতার বিষয়টি উল্লেখ করে পোস্টের বিবরণীতে জানানো হয়, অসুস্থ শিশুটির অপারেশন করাতে ১০ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। তবে সব মিলিয়ে তিন লক্ষ টাকার ব্যবস্থা হলেও ইয়াসিনের চিকিৎসা করাতে আরও সাত লক্ষ টাকার প্রয়োজন। এছাড়া পোস্টটি যেন আরও মানুষের নজরে আসে এজন্য শেয়ার করতেও বলা হয়।

পোস্টটির শেষ অংশে একটি বিকাশ নম্বরের পাশাপাশি যোগাযোগের ঠিকানা হিসেবে শিশুটির পিতা উল্লেখ করা ব্যক্তির নাম এবং কুষ্টিয়ার একটি ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অসুস্থ শিশুটি বর্তমানে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের কোথায় ভর্তি আছে তার একটি বিবরণও দেওয়া হয়েছে। যাচাইয়ে দেখা যায়, একই শিশুর ছবি ব্যবহার করে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে করা আলাদা পোস্টে  ভিন্ন ভিন্ন অ্যাকাউন্ট নম্বর যোগ করা হয়েছে। ডিসমিসল্যাবের যাচাইকৃত চারটি আলাদা পোস্টে (, , , ) চারটি ভিন্ন বিকাশ নম্বর, তিনটি ভিন্ন নগদ নম্বর এবং একটি রকেট নম্বর পাওয়া গেছে।

ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলো এবং ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে অনলাইনে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। যাচাইয়ে, ভারতভিত্তিক একটি জনপ্রিয় ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম ‘কেট্টো (Ketto)’ এর ওয়েবসাইটে শিশুটির একই ছবিগুলো খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয় শিশুটি বাংলাদেশি হলেও তার নাম ইয়াসিন নয়, বরং তাজরিন। ‘কেট্টো’র ওয়েবসাইটে পাঁচ বছর আগে তাজরিনের অসুস্থতার ঘটনা ও চার বছর আগে তার অবস্থা সম্পর্কে সর্বশেষ হালনাগাদ করা তথ্য রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, চিকিৎসা শেষে তাজরিন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে এবং আগের চেয়ে সুস্থ আছে। 

তাই বলা যায়, ভাইরাল হওয়া আর্থিক সাহায্যের পোস্টে যে শিশুর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে তার নাম ইয়াসিন নয়, শিশুটির আসল নাম তাজরিন। আর শিশুটির অসুস্থতার ঘটনা ও ভাইরাল ছবিগুলো পাঁচ বছর পুরোনো। প্রতারণার উদ্দেশ্যে সেটি নতুন করে ছড়ানো হচ্ছে। এর আগে এধরনের আর্থিক প্রতারণার ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ডিসমিসল্যাব।

আরো কিছু লেখা