তৌহিদুল ইসলাম রাসো
প্রধানমন্ত্রী ও গণমাধ্যমকে জড়িয়ে ফেসবুকে বিকাশের ভুয়া অফারের বিজ্ঞাপন
তৌহিদুল ইসলাম রাসো
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি এবং দুইটি গণমাধ্যমের লোগো যুক্ত করে বিকাশের ভুয়া অফারের বিজ্ঞাপন চলতে দেখা গেছে ফেসবুকে। মেটা অ্যাড লাইব্রেরিতে ৫ ও ৬ মে এমন তিন হাজারেরও বেশি বিজ্ঞাপন পাওয়া গেছে। যাচাইয়ে দেখা যায়, মোট ১৬টি ফেসবুক পেজ থেকে এই ভুয়া অফারের বিজ্ঞাপন চালানো হয়েছে। এগুলোতে ক্লিক করলেই ফেসবুক ব্যবহারকারীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অন্য কোনো ওয়েবসাইটে। যে পেজগুলো থেকে এসব বিজ্ঞাপন চালানো হয়– সেগুলোর অধিকাংশেরই অ্যাডমিনের অবস্থান দেখা যায় কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।
মেটা অ্যাড লাইব্রেরিতে “আমি দেশের সবাইকে ৫০০০ টাকা উপহার দিচ্ছি টাকা পেতে এখানে ক্লিক করুন” লিখে খোঁজ করে ১ হাজার ৮৭১টি বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়। বিজ্ঞাপনগুলো চালানো হয়েছে আটটি আলাদা ফেসবুক পেজ থেকে। পেজগুলোর মধ্যে দুটি বন্ধ পাওয়া যায়, বাকি ৬টি সক্রিয়। এছাড়া “৫০০০ টাকা বোনাস পেতে ক্লিক করুন”- লিখে সার্চ দিয়ে পাওয়া গেছে ১ হাজার ৫০৯টি বিজ্ঞাপন। এগুলো চালানো হচ্ছে আটটি আলাদা পেজ থেকে। এই দেড় সহস্রাধিক বিজ্ঞাপন এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও ফেসবুকে চলছিল।
সবগুলো বিজ্ঞাপনেই যুক্ত করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি; সঙ্গে রয়েছে এই লেখাটি “আমি দেশের সবাইকে ৫০০০ টাকা উপহার দিচ্ছি টাকা পেতে এখানে ক্লিক করুন।” সঙ্গে আরো যুক্ত করা হয়েছে দুইটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ-২৪ ও চ্যানেল আইয়ের লোগো।
১৬টি পেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় অ্যাডমিন কোন দেশে অবস্থান করছে ১১টি পেজে সে বিষয়ে তথ্য উল্লেখ আছে। এই ১১টি পেজের প্রতিটিতেই এক বা একাধিক অ্যাডমিন কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বলে দেখানো হয়েছে। এই দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশি অ্যাডমিন আছে এমন পেজের সংখ্যা তিনটি। আর ভারতের অ্যাডমিন আছে এমন পেজ দুইটি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিকাশের নামে ভুয়া অফার ছড়ানোর বিষয়টি নতুন নয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিকাশের অফার’ উল্লেখ করে বিজ্ঞাপন চলে ফেসবুকে। এ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে এমন ভুয়া বিজ্ঞাপন চলতে দেখা যায়নি। মূল ধারার গণমাধ্যমের লোগো যুক্ত করে বিকাশের ভুয়া অফারের বিজ্ঞাপন চালানোর বিষয়টিও আগে চোখে পড়েনি।
বিষয়টি নিয়ে “নিউজ-২৪” কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ডিসমিসল্যাবকে জানানো হয় যে, তাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো বিজ্ঞাপনের প্রচারণা চালানো হয়নি এবং এমন বিজ্ঞাপনের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততাও নেই।
মেটা তাদের ঘোষিত পলিসিতে বলেছে, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থাকলে বিজ্ঞাপনকে রাজনৈতিক ক্যাটাগরি হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। বিকাশের ভুয়া বিজ্ঞাপনগুলোতে একটি দেশের সরকারের প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে; যিনি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও। তবে এই তিন সহস্রাধিক বিজ্ঞাপনের কোনোটিকেই রাজনৈতিক হিসেবে শনাক্ত করেনি মেটা। অর্থাৎ মেটা তাদের বিজ্ঞাপন নীতিমালা সঠিকভাবে এখানে কার্যকর করেনি। এর আগে গবেষণা সংস্থা ডিজিটালি রাইটের একটি গবেষণায় ফেসবুকের বিজ্ঞাপন নীতিমালার কার্যকারিতা নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনে পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে মেটার কিছু উল্লেখযোগ্য ত্রুটি ধরা পরে।
বিকাশের ভুয়া বিজ্ঞাপনগুলো চালানোর জন্য মেটাকে কী পরিমাণ অর্থ দিতে হয়েছে বা কতোজন ব্যবহারকারীর কাছে বিজ্ঞাপনগুলো পৌঁছেছে সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ রাজনৈতিক ক্যাটাগরির বিজ্ঞাপন ছাড়া অন্য ক্যাটাগরির বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে এসব তথ্য প্রকাশ করে না মেটা। বিজ্ঞাপনগুলোতে মেটা তাদের বিজ্ঞাপন নীতি পুরোপুরি না মানায় এই অসম্পূর্ণতা পাওয়া যায়।
ঠিক কত টাকা খরচ হয়েছে সেটি একেবারে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও খরচের একটি সাধারণ ধারণা করেছে ডিসমিসল্যাব। মোট ৩৩৮০টি বিজ্ঞাপন চলেছে ১৬টি আলাদা পেজ থেকে। আর ইমপ্রেশনের অনুপাতে অর্থ ব্যয় করে এমন বেশিরভাগ বিজ্ঞাপনদাতাদের প্রতিদিন নূন্যতম এক মার্কিন ডলারের বাজেট বরাদ্দ রাখার পরামর্শ দেয় মেটা। তাই, বিজ্ঞাপন খরচ প্রতিদিন সর্বনিম্ন এক মার্কিন ডলার ধরে হিসাব করলেও, এক দিনে মেটা প্লাটফর্মে ৩ হাজার ৩৮০ মার্কিন ডলার সমমানের ভুয়া বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়ে থাকার কথা। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ প্রায় চার লাখ টাকা।
দেখা যায়, এ জাতীয় ভুয়া বিজ্ঞাপনের লিঙ্কে ক্লিক করলেই সেটি একটি আলাদা ওয়েব লিঙ্কে নিয়ে যায়। আর সেখানে উপহার পাবার জন্য একটি আবেদন ফর্ম পূরণ করতে বলা হয়। ফর্ম পূরণের পর সেটি বিকাশের পেমেন্ট গেটওয়েতে নিয়ে যায়। আর সেখানে গিয়ে বিকাশ নম্বর দিয়ে পরবর্তী ধাপে পিন দেয়া হলে একাউন্টের টাকা কেটে নেওয়া হয়।