নোশিন তাবাসসুম

ফ্যাক্টচেক: পাকিস্তানের পতাকা হাতে সাদিক কায়েমের নির্বাচনী প্রচারণার ভুয়া দাবি
নোশিন তাবাসসুম
পাকিস্তানের পতাকা হাতে সাদিক কায়েম নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন – এমন দাবিতে একটি ছবি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়েছে। তবে ডিসমিসল্যাবের ফ্যাক্টচেকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েমের হাতে জাতীয় পতাকার ছবি সম্পাদনা করে পাকিস্তানের পতাকা হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।
গত ২৯ নভেম্বর “আজকের নিউজ” নামের ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে একটি ফটোকার্ড পোস্ট করা হয়। ফটোকার্ডে বলা হয়, “পাকিস্তানের পতাকা হাতে নির্বাচনি প্রচারণায় সাদিক কায়েম।” পোস্টের ক্যাপশনে লেখা, “রক্ত যখন কথা বলে!!!।” এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পোস্টে প্রায় ১ হাজার ৭০০টি প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে এবং পোস্টটি শেয়ার হয়েছে ৭৭৯ বার। পোস্টের মন্তব্যগুলো দেখলে বোঝা যায়, অনেকেই ছবিটিকে সত্য বলে ধরে নিয়েছেন। এক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, “পাকিস্তানের রক্ত কথা বলবেই।। ধীককার জানাই।।” আরেকজন মন্তব্য করেছেন, “দেশটা কি রাজাকারের হাতে চলে যাচ্ছে নাকি।”

ছবির সত্যতা যাচাই করতে গেলে সাদিক কায়েমের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইল থেকে গত ২৬ নভেম্বর পোস্ট করা একটি ছবির সঙ্গে মিল লক্ষ্য করা করা যায়। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা, “আগামীর দিন শুধু সম্ভাবনার…।” সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পাকিস্তানের পতাকা হাতে ভিপি সাদিক কায়েমের ছবির সাথে তার প্রোফাইলে পোস্ট হওয়া ছবির তুলনা করে দেখা যায়, হাতে ধরা জাতীয় পতাকা ছাড়া অন্য সকল উপাদানে হুবহু মিল আছে। মূল পোস্টে সাদিক কায়েমের তিনটি ছবি রয়েছে। সবগুলোতেই তিনি ছাদখোলা গাড়ির মধ্যে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। প্রথম ছবিটির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ছবিটির হুবহু মিল রয়েছে।
অধিকতর যাচাইয়ে দেখা যায়, সম্পাদিত ছবিটি প্রথম পোস্ট করে “আনোয়ার টিভি” নামের একটি স্যাটায়ার পেজ। এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করা হয় ২৮ নভেম্বর। ফটোকার্ডটির নিচে আনোয়ার টিভির নামসহ বিজ্ঞাপন সদৃশ লেখা রয়েছে। যা কেটে দিয়ে পরে ফটোকার্ড আকারে পোস্ট করা হয়।
প্রসঙ্গত, ডাকসু ভিপি ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েম ডাকসু নির্বাচনের পর গত ২৬ নভেম্বর প্রথমবারের মতো নিজ জেলা খাগড়াছড়িতে যান। বিকেলে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খাগড়াছড়ি বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সে তাকে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ বিষয়ে একাধিক (১, ২, ৩, ৪) সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২৬ নভেম্বর দৈনিক যায়যায়দিন এর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম আজ বুধবার (২৬ নভেম্বর) নিজ জেলা খাগড়াছড়িতে আগমন করেন। তাঁর আগমন উপলক্ষে গুইমারা মানিকছড়ি ও মাটিরাঙ্গায় থেকে হাজারো মানুষ মোটরসাইকেল বহর নিয়ে তাঁকে স্বাগত জানাতে জড়ো হয়। গুইমারার জালিয়াপাড়া এলাকায় ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁকে বরণ করা হয়।”
এছাড়া, সাদিক কায়েমের খাগড়াছড়ি যাওয়া নিয়ে একাধিক (১, ২) সংবাদমাধ্যম ভিডিও প্রকাশ করে। ২৮ নভেম্বর দৈনিক ইত্তেফাকের প্রকাশিত ভিডিওর ক্যাপশন ছিলো, “নিজ এলাকায় জাতীয় পতাকা হাতে শোডাউন সাদিক কায়েমের।” এই ভিডিওতে সাদিক কায়েমকে ছাদখোলা গাড়িতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
অর্থাৎ, পাকিস্তানের পতাকা হাতে সাদিক কায়েম নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন এ দাবিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মূলত সাদিক কায়েমের হাতের জাতীয় পতাকাটি সম্পাদনা করে পাকিস্তানের পতাকা হিসেবে দেখানো হয়েছে।

