নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
ডিসেম্বর ১, ২০২৫
১৬:২৮:৫৩
ডেমরায় গ্রেনেড উদ্ধারের দাবিতে ছড়াচ্ছে ভিন্ন ঘটনার ছবি

ডেমরায় গ্রেনেড উদ্ধারের দাবিতে ছড়াচ্ছে ভিন্ন ঘটনার ছবি

ডিসেম্বর ১, ২০২৫
১৬:২৮:৫৩

নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

ডেমরা থেকে পাকিস্তানের ৪টি গ্রেনেড উদ্ধার করেছে র‍্যাব-১০, এ দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ডিসমিসল্যাব ফ্যাক্টচেক করে দেখেছে, ছড়ানো ছবিটি আসলে ২০২৪ সালের ৮ নভেম্বরে কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী এলাকা থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযানে উদ্ধারকৃত গ্রেনেডের।

ফেসবুকের একটি ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে ছবিটি পোস্ট করা হয়। ক্যাপশনে লেখা, “ডেমরা থেকে পাকিস্তানের ৪টি গ্রেনেড উদ্ধার করেছেন র‍্যাব-১০।” এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পোস্টটি ৩ হাজার ৭০০ বারেরও বেশি শেয়ার হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে ছবিটি শেয়ার করে লিখেন, “#ইউনূসের শাসনামলে #বাংলাদেশে #সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে #পাকিস্তান তৈরি গ্রেনেড উদ্ধার করেছে।”  এর পরেই ফেসবুকের একাধিক (,,,,) ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে একই ছবি পোস্ট করে মূল পোস্টের ক্যাপশনের দাবির পক্ষে মন্তব্য করতে দেখা যায়। তবে সজীব ওয়াজেদ জয় পরে পোস্ট ডিলিট করেছেন।

ডিসমিসল্যাব ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দৈনিক মানবকণ্ঠের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায়। এই প্রতিবেদনে ছড়িয়ে পড়া ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, “রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৪টি গ্রেনেড উদ্ধার করেছে র‍্যাব-১০। শনিবার এই গ্রেনেডগুলো উদ্ধার হয় বলে এক বার্তায় জানিয়েছে সংস্থাটি। বার্তায় বলা হয়েছে, ডেমরার সারুলিয়া এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় গ্রেনেডগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। র‍্যাব জানিয়েছে, অভিযান শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।” তবে প্রতিবেদনে ছবিটির কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি।

অধিকতর যাচাইয়ে, রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বরে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাকের একটি প্রতিবেদন সামনে আসে। এক বছর আগের এই প্রতিবেদনেও ছড়িয়ে পড়া ছবিটি ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিবেদনের ছবির ক্যাপশনে লেখা, “কক্সবাজারের পালংখালী ইউনিয়ন থেকে মিলিটারি গ্রেডের গ্রেনেড উদ্ধার করে যৌথবাহিনী। ছবি: ইত্তেফাক।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, “কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী মরাগাছ তলা এলাকায় যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমাণ পরিত্যক্ত বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করেছে যৌথ বাহিনী। উদ্ধারকৃত বিস্ফোরকের মধ্যে রয়েছে ৪টি আরজে হ্যান্ড গ্রেনেড (৩টি জলপাই রঙের ও ১টি গাঢ় জলপাই রঙের) এবং লালচে বাদামী রঙের ৫টি এম-৬৭ হ্যান্ড গ্রেনেড।” প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উখিয়া থানার অফিসার ইন-চার্জ ওসি আরিফ হোসেন উদ্ধার কার্যক্রমের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। 

সংশ্লিষ্ট কিওয়ার্ড সার্চ করলে এ বিষয়ে গত বছরের একাধিক (,,,) সংবাদ প্রতিবেদন সামনে আসে। প্রত্যেকটি প্রতিবেদনেই ছড়িয়ে পড়া ছবিটি দেখা যায়। 

প্রসঙ্গত, গত ২৯ নভেম্বর রাজধানীর ডেমরার সারুলিয়া থেকে চারটি গ্রেনেড পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছে র‍্যাব। এ বিষয়ে একাধিক (,,,) সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উল্লেখ্য কোনো প্রতিবেদনে গ্রেনেড প্রসঙ্গে পাকিস্তানের কথা উল্লেখ করা হয়নি।

গত ৩০ নভেম্বরে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, “রাজধানীর ডেমরার সারুলিয়া থেকে চারটি গ্রেনেড পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় থানা থেকে এসব গ্রেনেড লুট হয়েছিল বলে জানিয়েছে র‌্যাব। র‌্যাব-১০-এর একটি দল এ অভিযান পরিচালনা করে।”

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, র‌্যাব-১০-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) তাপস কর্মকার বলেন, “গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে রাত আটটার দিকে ডেমরার সারুলিয়ার গরুর হাট নামের একটি স্থান থেকে এসব গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। এগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। উদ্ধার হওয়া গ্রেনেড ডেমরা থানায় হস্তান্তর করা হবে।” 

এ বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “ডেমরায় ৪ গ্রেনেড উদ্ধার।” এই প্রতিবেদনে ২৯ নভেম্বরে উদ্ধারকৃত গ্রেনেডের ছবি ব্যবহার করা হয়। ছবির ক্যাপশনে বলা হয়, “উদ্ধার করা গ্রেনেডগুলো।” সে ছবির গ্রেনেডের সঙ্গে ছড়ানো ছবির গ্রেনেডের মিল নেই।

অর্থাৎ, গত ২৯ নভেম্বর ডেমরা থেকে র‍্যাব গ্রেনেড উদ্ধার করলেও তার সাথে ছড়িয়ে পড়া ছবিটির কোনো সম্পর্ক নেই এবং ছবিটি এক বছরেরও বেশি পুরোনো।প্রসঙ্গত, ফেসবুকে ভিন্ন ঘটনার ছবি দিয়ে ভুয়া দাবি ছড়ানোর চেষ্টা নতুন নয়। ডিসমিসল্যাব একটি ফ্যাক্টচেকে দেখিয়েছে কীভাবে জামায়াত ও শিবির কর্মী অস্ত্রসহ আটক হয়েছে দাবি করে ভিন্ন ঘটনার ছবি ছড়ানো হয়েছে।

আরো কিছু লেখা