আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
আগুনে গরু পুড়ে যাওয়ার পুরোনো ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক হামলা বলে প্রচার
This article is more than 1 month old

আগুনে গরু পুড়ে যাওয়ার পুরোনো ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক হামলা বলে প্রচার

আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

নীলফামারিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুসারীদের দেয়া আগুনে একজন হিন্দু ব্যক্তির গরু পুড়ে মারা গেছে– এমন দাবিতে একটি ছবি প্রচারিত হতে দেখা গেছে সামাজিক মাধ্যমে। দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে দেখা যায় এই ছবিটি দুই মাস আগের এবং পুড়ে যাওয়া গোয়ালের মালিক হিন্দু নয়।

“নীলফামারিতে ইউনূসের অনুসারীরা অমানবিকভাবে একজন হিন্দুর গবাদি পশুর চালায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, এতে অসহায় গরুগুলো পুড়ে মরেছে।”- এমন ক্যাপশনসহ একটি ছবি পোস্ট করা হয়েছে সামাজিক মাধ্যম এক্সে (, , , )। একই ধরনের পোস্ট দেখা গেছে ফেসবুক (, ) ও ইনস্টাগ্রামেও। ছবিতে পুড়ে যাওয়া কিছু মৃত গরুকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।

ছবিটি গত ডিসেম্বরেও প্রচারিত হয়েছিল। এক্সের একটি পোস্টের বরাতে ভারতীয় গণমাধ্যম এএনএম নিউজ একটি সংবাদও প্রকাশ করেছিল, যার শিরোনাম ছিল “Big Breaking : বাংলাদেশে জীবন্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হলো গো মাতাদের- ভাইরাল সেই ছবি, দেখুন, দেখলে শিউরে উঠবে গা”। হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন হচ্ছে দাবি করা এই প্রতিবেদনে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে। 

ছবিটির সূত্র যাচাই করতে রিভার্স ইমেজ এবং কিওয়ার্ড সার্চ করলে সামনে আসে বেশ কয়েকটি স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন। ২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত দি জনতা নিউজের একটি সংবাদ প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল “ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে গোয়াল ঘরে আগুন লেগে গরু-ছাগল পুড়ে ছাই”। এই প্রতিবেদনে উল্লিখিত ছবিটি দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, “ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগরের বালুয়াটি গ্রামে গোয়াল ঘরে আগুন লেগে ছয়টি গরু একটি ছাগল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সোমবার(০৯ ডিসেম্বর) ভোরে মো. বেদন মিয়ার গোয়াল ঘরে আকস্মিক আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। মো. বেদন মিয়া বালুয়াটি গ্রামের দেওয়ান আলীর ছেলে।” এই ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয় আরও একাধিক গণমাধ্যমে (, , )। সবগুলো প্রতিবেদনেই বলা হয় যে, পুড়ে যাওয়া গরুগুলো ছিল মো. বেদন মিয়ার। পরবর্তীতে তাকে ঢেউটিন ও অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন নবীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (, )। 

অর্থাৎ, গরু পুড়ে যাওয়ার ঘটনার ভুক্তভোগী খামারি হিন্দু নন এবং এটির সঙ্গে সাম্প্রদায়িক সহিংসতারও কোন সম্পর্ক নেই।

প্রসঙ্গত কুমিল্লার চান্দিনার মাধাইয়া বাজারে হিন্দুদের দোকানে ইসলামপন্থীরা সংঘবদ্ধ হামলা করে অগ্নিসংযোগ করেছে এমন দাবিতে পোস্ট হতে দেখা গিয়েছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বরেও। ডিসমিসল্যাবের একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে দেখা যায় মাধাইয়া বাজারে আগুন লাগার ঘটনাটির সঙ্গেও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোন সম্পর্ক ছিল না। 

আরো কিছু লেখা