তামারা ইয়াসমীন তমা

রিসার্চার, ডিসমিসল্যাব
বঙ্গবাজারের আগুন থেকে অক্ষত গীতা উদ্ধারের ছবিটি পুরোনো
This article is more than 8 months old
Gita Factcheck Feature Image

বঙ্গবাজারের আগুন থেকে অক্ষত গীতা উদ্ধারের ছবিটি পুরোনো

তামারা ইয়াসমীন তমা
রিসার্চার, ডিসমিসল্যাব

রাজধানীর বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অধিকাংশ দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মগ্রন্থ গীতার একটি কপি অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারের দাবি করা একাধিক পোস্ট (, , , ) ভাইরাল হয়েছে। তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা গেছে, গীতার অক্ষত ছবিটি বঙ্গবাজারের ঘটনার নয়। মাস সাতেক আগে সৌরভ মহন্ত হীরা নামের রংপুরের এক ব্যক্তি নিজ বাড়িতে আগুন লাগার পর গীতার ছবিটি তুলেছিলেন।

গত ৪ এপ্রিল (মঙ্গলবার) সকাল ৬টা ১০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবাজারে আগুন লাগে। সেদিন দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস। পরদিন, ৫ এপ্রিল (বুধবার) বেশ কিছু ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হয়, বঙ্গবাজারে শত শত দোকান আগুনে পুড়ে গেলেও এক হিন্দু ব্যক্তির দোকান থেকে অক্ষত অবস্থায় গীতা উদ্ধার করা হয়েছে।

তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা গেছে, বঙ্গবাজারে উদ্ধারের দাবি করা ছবিটি আগুন লাগার ঘটনার আগেই ফেসবুকে ভাইরাল হয়। গত ২ ও ৩ এপ্রিল বেশ কয়েকটি পেজ (, , )  থেকে ছবিটি আপলোড করা হয়। 

এর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো পোস্টটি হলো ২ এপ্রিল রাত ৯টা ৩৭ এ শ্রীকৃষ্ণ- এর ভক্ত নামের ফেসবুক পেজে আপলোড করা ছবি। ছবির ক্যাপশনে লেখা আছে, “একটি বাড়িতে একবার আগুন লেগেছিল, সেই আগুনে পুরো ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও পুড়ে যায়নি গীতাটি।”

Sri Krishna- এর ভক্ত পেজের কাছে ডিসমিসল্যাবের পক্ষ থেকে ছবির সূত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানান, ছবিটি সৌরভ মহন্ত হীরা নামের আইডি থেকে সর্বপ্রথম পোস্ট করা হয়। বঙ্গবাজারে উদ্ধারের দাবি করে গীতার এই ছবি নিয়ে অপপ্রচার চলছে বলেও জানান তারা।

সৌরভ মহন্ত হীরা সম্পর্কে খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, এ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে গত ২ এপ্রিল দুপুর ১টা ১৬ মিনিটে হিন্দু প্রেম ক্যানভাস_গ্রুপ নামের একটি গ্রুপে ছবিটি আপলোড করা হয়। ছবির ক্যাপশনে লেখা, “নিজের সাথে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা শেয়ার করছি। আমাদের বাড়িতে একবার আগুন লেগেছিল, সেই আগুনে পুরো ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও পুরে যায়নি গীতা টি”।

এছাড়া বঙ্গবাজার থেকে অক্ষত গীতা উদ্ধারের ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পর তা নিয়ে সৌরভের আইডি থেকে প্রতিবাদও জানানো হয়। গ্রুপের আরেকটি পোস্টে নিজের প্রথম পোস্টের স্ক্রিনশট ও গুজব ছড়ানো দুটি পোস্টের স্ক্রিনশট দিয়ে সৌরভ মহন্ত হীরা লেখেন, “একটু ভাইরাল হওয়ার জন্য গুজব ছড়িয়ে কি লাভ ভাই। আপনাদের এরকম কাজের জন্য আমাদের মাথা নিচু। কথা বলার জবাব খুজে পাওয়া যায় না। ধীক্কার জানাচ্ছি আপনাদের এরকম কাজের জন্য”।

ছবিটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সৌরভ মহন্ত হীরার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান ছবিটি তাঁর তোলা। ডিসমিসল্যাবকে তিনি বলেন, “এটি আরও ছয়-সাত মাস আগের তোলা ছবি। পুরোনো অ্যালবাম থেকেই সম্প্রতি আমার নিজস্ব গ্রুপ হিন্দু প্রেম ক্যানভাসে ছবিটি আপলোড করি”।

প্রসঙ্গত, ভাইরাল পোস্টের ছবি অনুযায়ী রংপুরের একটি প্রকাশন থেকে গীতাটি ছাপানো হয়।

এর আগে গণমাধ্যমে বঙ্গবাজারের ছাইয়ের স্তূপ থেকে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কুরআন শরীফ অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারের দাবি করা হলেও ফ্যাক্টচেকে দেখা যায় উদ্ধারকৃত বইটি কুরআন নয়, বরং একটি হাদীস ব্যাখ্যার গ্রন্থ।

আরো কিছু লেখা