নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
অক্টোবর ২৮, ২০২৫
১৬:৫৫:১৮
বাণিজ্য উপদেষ্টার পুরোনো বক্তব্য বিকৃত করে ‘মেট্রোরেল ভাঙা’র পরামর্শ বলে প্রচার

বাণিজ্য উপদেষ্টার পুরোনো বক্তব্য বিকৃত করে ‘মেট্রোরেল ভাঙা’র পরামর্শ বলে প্রচার

অক্টোবর ২৮, ২০২৫
১৬:৫৫:১৮

নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

মেট্রোরেলের মতো অপ্রয়োজনীয় মেগা অবকাঠামো ভেঙে ফেলা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন- এমন একটি পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ডিসমিসল্যাব ফ্যাক্টচেক করে দেখেছে, মেট্রোরেল প্রজেক্টকে উল্লেখ করে এই ধরণের কোনো মন্তব্য করেননি বাণিজ্য উপদেষ্টা। 

ফেসবুকের একটি পেজ থেকে একটি ছবি পোস্ট করা হয় যার মধ্যে লেখা ছিল, “মেট্রোরেলের মতো অপ্রয়োজনীয় মেগা অবকাঠামো ভেঙে ফেলা উচিৎ: বাণিজ্য উপদেষ্টা।” পোস্টের ক্যাপশনে লেখা ছিল, “উনার মতো রিক্সা নির্মাণকারী ইঞ্জিনিয়াররাও বলছেন ভারতের তুলনায় বেশি টাকা লাগছে, মানসম্মত হয়নি! আপনার দক্ষতা যদি রিক্সা আবিষ্কার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে মেট্রোরেল নির্মাণ ব্যয় বেশি কেন তা বুঝবেন কি করে। বা এর নিয়মিত মেইনটেইন যে লাগে সেইটাই বা জানবেন কি করে। এদেশের গ্রামের ছেলেরাই বিমান বানিয়ে আকাশে উড়তেছে আর আপনারা রিক্সা বানান 🤷‍♂️ বাস্তবতা!”

ফেসবুকে একাধিক ব্যক্তিগত প্রোফাইল (, , , ), পেজ থেকে একই দাবি পোস্ট করে বলা হচ্ছে, উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এই উক্তিটি করেছেন। এছাড়া ইউটিউবেও একটি ভিডিও আপলোড করে একই দাবি করা হয়। 

বাণিজ্য উপদেষ্টা এবং সংশ্লিষ্ট সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চ-এ, সময় টিভির একটি প্রতিবেদন ডিসমিসল্যাবের সামনে আসে। চলতি বছরের ২৫ জুনে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল, “অপ্রয়োজনীয় মেগা অবকাঠামো ভেঙে ফেলা উচিত: বাণিজ্য উপদেষ্টা”। প্রতিবেদনে বলা হয়, “বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘যে প্রকল্পগুলো ৭০-৮০ শতাংশ হয়ে গেছে। এগুলোর কী হবে? এটা শেষ করতেও অনেক টাকা খরচ হবে। আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে এসব অবকাঠামো ভেঙে ফেলা। এর কারণ হলো এসব প্রকল্পের কোনো অর্থনৈতিক ব্যবহার নেই। তাই এসব প্রকল্প ভেঙে ফেলে একটা উদাহরণ তৈরি করা যে আমরা অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামো ভেঙে ফেলতে পারি। দায় তো আমাদের পরিশোধ করতেই হবে।’”

গত ২৫ জুন রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ মিলনায়তনে ‘পরিবেশবান্ধব প্রবৃদ্ধি এবং প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতির জন্য সহায়ক অটোমোবাইল নীতিমালা’-শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী ভেঙে ফেলার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো প্রকল্পের নাম উল্লেখ করেননি বাণিজ্য উপদেষ্টা। এই মন্তব্য নিয়ে সে সময় একাধিক (, , , ) প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। 

অধিকতর যাচাইয়ে, উপদেষ্টার মন্তব্য নিয়ে সময় টিভির ভিডিও প্রতিবেদনটি দেখে ডিসমিসল্যাব। ২০২৫ সালের ২৫ জুনে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির ২ মিনিট ২ সেকেন্ডের ভিডিওটির ৪৩ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড পর্যন্ত শোনা যায়, বাণিজ্য উপদেষ্টা বলছেন, “যে প্রকল্পগুলো ৭০-৮০ শতাংশ হয়ে গেছে, ৫০ শতাংশ হয়ে গিয়েছে, এগুলোর কী হবে? এটা শেষ করতেও অনেক টাকা খরচ হবে। আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে এসব অবকাঠামো অনুরূপ পরিমাণ টাকা খরচ করে ভেঙে ফেলা। ভেঙে ফেলার দুইটা কারণ। এর এক কারণ হলো এসব প্রকল্পের কোনো অর্থনৈতিক ব্যবহার বা কারণ নেই। আর দ্বিতীয় কারণ হলো, এসব প্রকল্প ভেঙে ফেলে একটা উদাহরণ তৈরি করা যে আমরা অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামো ভেঙে ফেলতে পারি। এটার দায় তো আমাদের পরিশোধ করতেই হবে। কারণ এটা আন্তর্জাতিক দায়। কিন্তু যেটার প্রয়োজন নাই, এমন সব জিনিস যা করা হয়েছে, আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে এসব ভেঙে ফেলা।” 

এছাড়া একই দিনে প্রকাশিত দেশ টিভির একটি ভিডিও প্রতিবেদনে একই মন্তব্য করতে দেখা যায় বাণিজ্য উপদেষ্টাকে। 

অর্থাৎ, মেগা প্রকল্প নিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার করা মন্তব্য ছিল, যেগুলো অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প এবং নির্মাণাধীন রয়েছে, সেগুলো ভেঙে ফেলা উচিৎ বলে তিনি মনে করেন। তবে তার বক্তব্যে কোথাও মেট্রোরেল ভেঙে ফেলার কথা উল্লেখ ছিল না। অর্থাৎ, মেগা প্রকল্প নিয়ে করা এই উপদেষ্টার বক্তব্য ভুলভাবে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বাণিজ্য উপদেষ্টা মেগা অবকাঠামো নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন চলতি বছরের জুন মাসে। 

আরো কিছু লেখা