নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
ফ্যাক্টচেক: শাহ আমানত বিমানবন্দরে আগুন লাগার ভিডিওটি মহড়ার দৃশ্য

ফ্যাক্টচেক: শাহ আমানত বিমানবন্দরে আগুন লাগার ভিডিওটি মহড়ার দৃশ্য

নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে আগুন লেগেছে এবং অল্পের জন্য কার্গো ভিলেজ রক্ষা পেয়েছে দাবি করে একটি ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে। ফ্যাক্টচেকে দেখা গেছে ভিডিওটি গত ৩ নভেম্বরের। শাহ আমানত বিমানবন্দরের অগ্নিনির্বাপণ কাজে নিয়োজিত জনবল, যানবাহন ও ইকুইপমেন্ট এর কার্যকারিতা ও সক্ষমতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে আয়োজিত মহড়ায় এ আগুন নিভানোর দৃশ্য দেখানো হয়।

 ফেসবুকের একটি ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। ক্যাপশনে লেখা, “চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে আগুন অল্পের জন্য রক্ষা পেলো কার্গো ভিলেজ।” ফেসবুকের একাধিক (, ) ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে একই ভিডিও পোস্ট করে মূল দাবির পক্ষে মন্তব্য করতে দেখা যায়। 

২৩ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ভিডিওতে দেখা যায় একটি স্থানে আগুন জ্বলছে এবং দমকল বাহিনীর সদস্যরা আগুন নেভাচ্ছে। ভিডিওতে দমকল বাহিনীর যানবাহন, পাইপ ইত্যাদি ব্যবহার করতে দেখা যায়। ভিডিওর নিচে বামে সময় টিভির লোগো দেখা যায়। ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, “কার্গো ভিলেজের পাশে দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। তড়িঘড়ি বিমানবন্দরের নিজস্ব তিনটি ও বিমান বাহিনীর ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিটের মাত্র দুই মিনিটের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে। স্বস্তি ফিরে বিমানবন্দরে।” 

সত্যতা যাচাইয়ে কিফ্রেম ধরে সার্চ করলে গত ৩ ডিসেম্বরে ইউটিউবে সময় টিভির প্রকাশিত একই ফুটেজের একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, “শাহ আমানত বিমানবন্দরে প্রতীকী আগুন, নির্বাপনে মহড়া |” ২ মিনিট ২ সেকেন্ড দীর্ঘ এই ভিডিওর প্রথম ২৩ সেকেন্ডের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির হুবহু মিল। এছাড়া ভিডিও প্রতিবেদনের অডিওর সাথেও ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর অডিওতে মিল আছে। তবে মূল প্রতিবেদনে আরও বলতে শোনা যায়, “তবে এটি প্রতীকী অগ্নিকাণ্ড। চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে অনুষ্ঠিত হলো অগ্নি দুর্ঘটনা থেকে রক্ষায় বিশেষ মহড়া।” 

এছাড়াও ইউটিউবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের একাধিক (, , ) ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনগুলোতে বিমানবন্দরটিতে আগুন নেভানোর মহড়া দেখানো হয়। 

এ ঘটনা নিয়ে অধিকতর যাচাইয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করলে এই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের একাধিক (, , , , ) প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এ বিষয় নিয়ে গত ৩ ডিসেম্বর প্রকাশিত দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “চট্টগ্রামে শাহ আমানত বিমানবন্দরে অগ্নিনির্বাপণ মহড়া।” 

প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনবল, যানবাহন ও ইকুইপমেন্টর কার্যকারিতা ও সক্ষমতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে বিমানবন্দরের কার্গো ওয়ার হাউজ সংলগ্ন স্থানে একটি মাঝারি স্কেলের অগ্নিনির্বাপণ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩ ডিসেম্বর বেলা সোয়া ১১টার দিকে অনুষ্ঠিত মহড়ায় অংশ নিয়েছে বিমানবন্দরের ফায়ার শাখা, বিমানবন্দর এভসেক, এপিবিএন, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী, নৌ বাহিনী, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স টিম, বিমানবন্দরের মেডিকেল টিমসহ অন্যান্য অংশীজন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিমানবন্দরের মুখপাত্র প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল। 

অর্থাৎ, ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি শাহ আমানত বিমানবন্দরে আগুন লাগার প্রকৃত দৃশ্য নয়, বরং মহড়ার দৃশ্য। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৮ অক্টোবর ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেই সময় ভিন্ন দেশের ভিডিও শাহজালাল বিমানবন্দরের দৃশ্য দাবিতে ছড়িয়ে পড়লে ডিসমিসল্যাব ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

আরো কিছু লেখা