তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
ছবিটি পুলিশ কর্মকর্তা হারুনের নয়
This article is more than 3 months old

ছবিটি পুলিশ কর্মকর্তা হারুনের নয়

তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও সাবেক গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান মো. হারুন অর রশীদের বলে একটি ছবি সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে উক্ত ছবিতে থাকা ব্যক্তিটি সাবেক ডিবি প্রধানের দায়িত্বে থাকা হারুনের নয়। ছবি সম্বলিত পোস্টের কমেন্টে অনেকে বলছেন ছবিটি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর। তবে একাধিক সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে ছবিটি এই দুজনের কারোরই নয়।

ফেসবুকের একটি পেজ থেকে ৭ আগস্ট একটি ছবি পোস্ট করে সেটি সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের বলে প্রচার করা হয়। ক্যাপশনে লেখা, “এই ছবিটা ঘুরতেছিলো। এটা আসলেই ডিবির হারুণ। আমি নিশ্চিত হইছি। সি এম এইচ এ আই সি ইউয়ে আছে। কিন্তু কে কখন তারে পিটাইলো? এইটা জানতে পারি নাই। জানান বিস্তারিত। উনার জন্য দু আ কইরেন। ইমুর একজন প্রতিভাবান ফ্রি ল্যান্সারের এমন অকালে মৃত্যু মাইনা নেয়া যায়না।” এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পোস্টটিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পঞ্চাশ হাজারের বেশি ব্যবহারকারী, মন্তব্য করেছেন প্রায় দশ হাজার জন। এছাড়া পোস্টটি শেয়ার করা হয়েছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার বার। 

উক্ত ছবিযুক্ত পোস্টে মোট তিনটি দাবি করা হচ্ছে। প্রথমটি হলো ছবিতে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতাল বেডে শুয়ে থাকা ব্যক্তিটি সাবেক ডিবি প্রধান হারুন এবং দ্বিতীয়টি হলো ছবিটি সিএমএইচের। আর পোস্টের নিচে অনেকে কমেন্ট করেন সেটি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর। কমেন্টে এই দাবিতে এক ব্যবহারকারী লেখেন, “এটা সাবেক ছাত্রলীগ গোলাম রব্বানী দাদা।” আরেক ব্যবহারকারী লেখেন, “আরে ভাই এটা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রাব্বানী। ছবি দেখেইতো স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।”

তবে ছবিটির সত্যতা যাচাইয়ে দুটি আলাদা সোর্সের সঙ্গে কথা বলে ডিসমিসল্যাব। এছাড়া ডিসমিসল্যাবের এক তথ্য যাচাইকারী স্বশরীরে সিএমএইচে গিয়ে দাবিটি যাচাই করেন। 

উল্লেখিত হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান ছবিটি সিএমএইচের। এখানেই চিকিৎসা দেওয়া এক রোগীর। কিন্তু তিনি হারুন বা রাব্বানী নন। তবে রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য গোপনীয়তার স্বার্থে তার পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানান। আরেক সেনা কর্মকতা জানান সিএমএইচে হারুন বা রাব্বানী কেউ চিকিৎসা নিচ্ছেন না। তাদের কেউ সিএমএইচে নেই। 

এছাড়া ছবির অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে যখন ডিসমিসল্যাবের এক তথ্য যাচাইকারী স্বশরীরে সিএমএইচে খোঁজ নিতে যান তখন দুজন আলাদা ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন। সিএমএইচের সিসিইউতে দায়িত্বরত এক নার্স জানান সেখানকার আইসিইউ বা সিসিইউতে হারুন কিংবা রাব্বানী নামের কোনো ব্যক্তি চিকিৎসাধীন নেই। এছাড়া সেখানে কর্মরত এক সামরিক কর্মকতা জানান উক্ত ছবিতে থাকা ব্যক্তিটিকে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখেছেন। তবে তিনি হারুন বা রাব্বানী নন।

মূলত চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন কোথায় আছেন এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়। তিনি আটক হয়েছেন বা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন এমন গুজবও ছড়ায় সামাজিক মাধ্যমে। তবে গত ৬ আগস্ট কালবেলার প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায় তিনি দেশেই আছেন। দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি কালবেলাকে জানান, “গতকাল বিমানবন্দর বন্ধ ছিল। খুলেছে আজ। আমি আপনার সঙ্গে কথা বলছি। তাহলে আমি কীভাবে পালিয়েছি?”

আরো কিছু লেখা