ফামীম আহমেদ

রিসার্চার, ডিসমিসল্যাব
মেসি ইসলাম গ্রহণ করেননি, নেইমারের সঙ্গে বসে ডা. জাকির নায়েকের বক্তৃতাও শোনেননি
This article is more than 1 year old

মেসি ইসলাম গ্রহণ করেননি, নেইমারের সঙ্গে বসে ডা. জাকির নায়েকের বক্তৃতাও শোনেননি

ফামীম আহমেদ

রিসার্চার, ডিসমিসল্যাব

সম্প্রতি ফুটবলার লিওনেল মেসিকে নিয়ে আলাদা দুটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। দুটি ভিডিওর একটিতে দেখা যাচ্ছে, কালেমা পাঠ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন লিওনেল মেসি এবং অপরটিতে মেসি ও নেইমার পাশাপাশি বসে ডা. জাকির নায়েকের ধর্মীয় আলোচনা শুনছেন। 

প্রথম ভিডিওটি টিকটকে প্রায় তিন হাজার বার শেয়ার হয়েছে এবং তাতে ১ লাখ ৭৬ হাজার রিঅ্যাকশন পড়েছে। দ্বিতীয় ভিডিও ফেসবুক (, , ) ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব (, , , )টিকটকে ছড়িয়ে পড়েছে এবং একটি ইউটিউব চ্যানেলে থেকেই ৩২ লাখ বার দেখা হয়েছে।

তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে ভিডিও দুটি সম্পাদিত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

মেসির ইসলাম গ্রহণের ভুয়া ভিডিও

১৪ সেকেন্ডের এই ভিডিওটির শিরোনামে দাবি করা হচ্ছে, কাতারে আয়োজিত বিশ্বকাপে ইসলাম গ্রহণ করেছেন লিওনেল মেসি। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ডা. জাকির নায়েকের সঙ্গে তিনি কালেমা পাঠ করছেন।

মেসির অংশের ভিডিও থেকে কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স সার্চ করার পর এলডোচে ডট টিভি নামের একটি স্প্যানিশ টিভি চ্যানেলের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। তাদের খবরটি ছিল, ২০২১ সালে ফুটবল ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেইতে (পিএসজি) যোগদানকালে ভক্তদের সঙ্গে মেসিকে পরিচয় করিয়ে দেয়া নিয়ে। ২০২১ সালে লিওনেল মেসিসহ ৫ জন খেলোয়াড় পিএসজিতে যোগ দেন।  

পরবর্তীতে খোঁজ করে পিএসজির অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলেও ভিডিওটি পাওয়া যায়। এর ৭ মিনিট ৫৭ সেকেন্ড থেকে কিছু অংশের সঙ্গে মেসির ইসলাম গ্রহণের ভুয়া ভিডিওতে ব্যবহার করা ক্লিপ পুরোপুরি মিলে যায়।

অর্থাৎ, ২০২১ সালে মেসির পিএসজি ক্লাবে যোগদানের অনুষ্ঠানের ভিডিও থেকে একটি অংশ নিয়ে তাতে অন্যের কণ্ঠ এবং ডা. জাকির নায়েকের ভিন্ন একটি ভিডিও ক্লিপ যোগ করে ভুয়া ভিডিওটি বানানো হয়েছে।  

মেসি ও নেইমার জাকির নায়েকের বক্তব্য শুনছেন বলে দাবি করা ভিডিও

অনলাইনে খোঁজ করে গতমাসে প্রকাশিত বাংলাদেশের একাধিক ফ্যাক্টচেকিং সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মেসি এবং নেইমারের পাশাপাশি বসে জাকির নায়েকের বক্তব্য শোনার ভিডিওটি সম্পাদিত। সেখানে বলা হয়েছে, ভিডিওটির প্রথম অংশ ফিফার অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে পাওয়া গেছে। মূলত ভিডিওটি ফিফা কর্তৃক আয়োজিত “দ্য বেস্ট ফিফা ফুটবল অ্যাওয়ার্ডস ২০১৭” পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের। এটি আপলোড করা হয়েছিল ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর।

ফ্যাক্টচেকগুলোতে বলা হয়, সে বছর ফিফার সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গ্রহণকালে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তারকা ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এবং মেসি ও নেইমার তার বক্তব্য শুনছিলেন। 

ডিসমিসল্যাবের বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, ভুয়া ভিডিওর যে অংশে মেসি ও নেইমারকে দেখা যাচ্ছে সেসব ফ্রেমে ফিফা টিভির জলছাপ রয়েছে, কিন্তু ডা. জাকির নায়েক যেসব ফ্রেমে কথা বলছেন সেখানে ফিফার জলছাপ নেই।

একইভাবে ভুয়া ভিডিওটির শেষের অংশ রিভার্স সার্চ করে ডা. জাকির নায়েকের একটি আলাদা ভিডিও পাওয়া যায়। “বিলিভিং বিয়িংস” নামের একটি ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর তারিখে ৪ ঘন্টা ৫৭ সেকেন্ডের এই ভিডিও আপলোড করা হয়।

“ডাজ গড এক্সিস্ট?” শীর্ষক সেই ভিডিওর ৬ মিনিট ১৪ সেকেন্ড পরের কিছু অংশের সঙ্গে সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও, নেপথ্যের কন্ঠ ও বক্তব্যের বিষয়বস্তু পুরোপুরি মিলে যায়। এর ইউটিউবে দেওয়া বর্ণনায় লেখা হয়েছে, জাকির নায়েকের বক্তব্যটি ২০১৬ সালের।

এই অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল কাতারের দোহায় অবস্থিত কাতারা কালচারাল ভিলেজে। কাতারা কালচারাল ভিলেজের ওয়েবসাইটে সেই অনুষ্ঠানের একটি সময়সূচি পাওয়া গেছে। জাকির নায়েকের নিজস্ব ফেসবুক পেজেও ২০১৬ সালের এই অনুষ্ঠানের খবর প্রচারিত হতে দেখা গেছে। 

অর্থাৎ, মেসি-নেইমার একসঙ্গে ডা. জাকির নায়েকের বক্তব্য শোনার দাবি সম্বলিত ভিডিওটি সম্পাদিত। মূলত ২০১৭ সালের ফিফা আয়োজিত একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের ভিডিওতে মেসি ও নেইমারের পাশাপাশি বসে থাকা দৃশ্যের সাথে ২০১৬ সালে ডা. জাকির নায়েকের একটি বক্তৃতার দৃশ্যকে যুক্ত করে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

ক্রীড়া ও ধর্মকে মিলিয়ে অসংখ্য বানোয়াট কিংবা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে আছে সামাজিক মাধ্যম এবং ভিডিও প্লাটফর্মগুলোতে। 

বার্তা সংস্থা এএফপি গত বছরের ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে অন্তত ২২টি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তার মধ্যে অন্তত ৭টি প্রতিবেদন পাওয়া গেছে যেখানে ফুটবল বিশ্বকাপে ধর্মীয় দাবি সম্বলিত ভুয়া খবরগুলোকে যাচাই করেছে। রয়টার্সেও এ সংক্রান্ত একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন পাওয়া গেছে।

এএফপি এবং রয়টার্সের এসব যাচাইকৃত প্রতিবেদনের মধ্যে আছে, হলিউড তারকা মরগান ফ্রিমানসহ একাধিক ব্যক্তির ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ভুয়া দাবিসহ ভিন্ন প্রেক্ষাপটের ভিডিওকে কাতার বিশ্বকাপের বলে প্রচার।

আরো কিছু লেখা