মিনহাজ আমান

রিসার্চ-লিড, ডিসমিসল্যাব
পুরনো ভৌতিক ভিডিও দেখিয়ে বলা হচ্ছে বঙ্গবাজারে আগুন লাগানো হয়েছে 
This article is more than 1 year old

পুরনো ভৌতিক ভিডিও দেখিয়ে বলা হচ্ছে বঙ্গবাজারে আগুন লাগানো হয়েছে 

মিনহাজ আমান

রিসার্চ-লিড, ডিসমিসল্যাব

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে একটি ফুটেজ দেখিয়ে বলা হচ্ছে, সম্প্রতি বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ইচ্ছে করা ঘটানো হয়েছে। এছাড়া একই ফুটেজের থাম্বনেইল মূলধারার গণমাধ্যমও ব্যবহার করেছে। কিন্তু ডিসমিসল্যাব যাচাই করে দেখেছে, আসল ভিডিওটি অন্তত এক বছর আগে আপলোড করা একটি কথিত ভৌতিক দৃশ্য। বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে ভিডিওটির কোনো সম্পর্ক নেই। 

গত ৪ এপ্রিল “টিম উইথ রিয়াদ ফারুকি” নামের ফেসবুক পেজ থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয় যার শিরোনাম ছিল, “বঙ্গবাজারে আগুন ইচ্ছে করেই লাগিয়েছে || Bango Bazar News”। এই প্রতিবেদনটি লিখতে লিখতেই ভাইরাল এই ভিডিওটির ভিউ তিন মিলিয়ন বেড়ে হয়ে যায় ১২ মিলিয়ন।

এছাড়া দেখা গেছে, একই শিরোনামে এই ভিডিওটি ৫০টির বেশি ফেসবুক পেজ, গ্রুপ ও ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে আলাদাভাবে পোস্ট করা হয়েছে। 

ভিডিওটির শুরুতে তিনি বলেন, “আসসালামু আলাইকুম, ইতিমধ্যে আপনারা শুনতে পারছেন বঙ্গবাজারে আগুন লাগছে। তবে আমি যদি বলি আগুন লাগে নাই বরং আগুন লাগানো হইসে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই আগুনটা লাগিয়েছে। আপনারা বিশ্বাস করবেন না তাই আপনাদের জন্যে সিসিটিভি ফুটেজ বা বিভিন্ন তথ্য আমি রেখেছি। যে তথ্য উপাত্ত আপনি ভিডিও শেষ অব্দি পর্যন্ত দেখেন তাহলে বুঝতে বাধ্য হবেন যে এখানে আসলে ঘটনাটা কী হয়েছিল।” ভিডিওটির এক পাশে একটি ফুটেজে রাতের আঁধারে মোটরবাইকে দুজন ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া ভিডিওটিতে লেখা আছে, “বঙ্গবাজারে ইচ্ছা করেই আগুন দিয়েছে সিসিটিভি ফুটেজে গোপন তথ্য ফাঁস”। 

দাবিটি যাচাই করতে গিয়ে এসকেএল-অক্সোটিক নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে একই ভিডিওর একটি দীর্ঘতর সংস্করণ পাওয়া যায়। সেটি আপলোড করা হয়েছে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে, অর্থ্যাৎ এক বছর আগে। এই ফুটেজের সঙ্গে গত ৪ এপ্রিলের বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের কোনো সম্পর্কই নেই।

এক বছর পুরনো ভিডিওটির বিবরণে ভূত বা ভৌতিক বিষয় সংক্রান্ত বেশ কিছু হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে; যেমন: Bhoot #bhoothakaalam #bhootboss #bhootni ইত্যাদি। ভিডিওটির কথিত ভৌতিক দৃশ্যে শেষ পর্যন্ত সেই মটর সাইকেল আরোহীদের পালিয়ে যেতে দেখা যায়। এখান থেকে একটি অংশ নিয়ে বঙ্গবাজারের আগুন লাগানোর দৃশ্য বলে দাবি করা হচ্ছে। 

টিম উইথ রিয়াদ ফারুকির ফেসবুক পেজে “বঙ্গবাজারে আগুন ইচ্ছে করেই লাগিয়েছে” বলে দাবি করা ভিডিওটিতে কমেন্ট অপশন বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে অন্য যেসব গ্রুপ বা পেইজ সেই ভিডিওটি পোস্ট করেছে, তাদের কমেন্ট সেকশনে এমন অনেককেই পাওয়া গেছে যারা দাবিটিকে বিশ্বাস করে মন্তব্য লিখেছেন। যেমন জান্নাতুল ফেরদৌস লিখেছেন, এমনটা আমি আগে থেকেই ধারণা করেছি যে ইচ্ছে করেই আগুন লাগিয়েছে। আরেকজন লিখেছেন, এত তথ্য আপনি পেলেন কোথায়? এমনকি একজন ব্যবহারকারী এই “সত্য” প্রকাশের জন্যে পোস্টদাতাকে ধন্যবাদও জানান।

একই ফুটেজের থাম্বনেইল পাওয়া যায় মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলার একটি খবরে। গত ৫ এপ্রিল কালবেলার ইউটিউব চ্যানেলে “বঙ্গবাজারে বাইকে ২ জন এসে আগুন লাগিয়েছে: বলছেন ব্যবসায়ীরা” শিরোনামে একটি খবর আপলোড করা হয়। সে খবরের থাম্বনেইল নেওয়া হয়েছে এক বছর পুরোনো সেই কথিত ভৌতিক ভিডিও থেকে। 

কালবেলার ভিডিওর দুটি অংশে (১ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড ও ২ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডে) দুজন ব্যক্তি কালবেলার সাংবাদিককে বলেন যে তারা ইন্টারনেটে দেখেছেন, দুজন ব্যক্তি বাইকে করে এসে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে গেছে। সংবাদে সূত্র হিসেবে নেওয়া দু’ব্যক্তির সাক্ষাৎকারের আগুন লাগিয়ে দেওয়ার দাবিটি চাক্ষুষ নয়, বরং ইন্টারনেটে পাওয়া সূত্রহীন তথ্য।   

ইউটিউবের স্প্যাম, বিভ্রান্তি ও প্রতারণামূলক চর্চা সংক্রান্ত নীতিমালার বিভ্রান্তিকর মেটাডেটা ও থাম্বনেইল অংশে বলা হয়েছে, তাদের প্ল্যাটফর্মের ভিডিওতে এমন কোনো শিরোনাম, থাম্বনেইল বা বিবরণ ব্যবহার করা যাবে না “যা ব্যবহারকারীদের এমন কোনো কন্টেন্ট বিশ্বাস করতে প্রলুব্ধ করে যা প্রকৃতঅর্থে সেরকম কিছু নয়।”

ফেসবুক পেজকে ওয়াচবেইট ও ফ্ল্যাগড হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে মেটার ওয়াচবেইট পলিসিতে বলা আছে যে, অতিরঞ্জিত বা ফটোশপ করা এমন কোনো দৃশ্য বা প্রতিক্রিয়া যা আসলে মূল ভিডিওতে নেই তা থাম্বনেইল হিসেবে ব্যবহার করবেন না।

দক্ষিণ কোরিয়ার ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে সংসিল বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন গবেষক প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ভুয়া খবর বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, অধিকাংশ ভুয়া খবরের সঙ্গে থাম্বনেইলের মিল থাকে না বা কম মিল থাকে। এছাড়া বিভ্রান্তিকর শিরোনাম বা থাম্বনেইল ব্যবহার করে কীভাবে নেপালের প্রেসিডেন্টকে নিয়ে ভুয়া খবর ছড়ানো হয়েছিল, তা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশটির ফ্যাক্টচেক সংস্থা, নেপালচেক।

আরো কিছু লেখা