মো. তৌহিদুল ইসলাম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
নভেম্বর ৯, ২০২৫
১৮:১৮:৩৬
বিমানে সহযাত্রীকে চড় দেওয়া ব্যক্তি বিএনপি নেতা রফিক আজাদ নন

বিমানে সহযাত্রীকে চড় দেওয়া ব্যক্তি বিএনপি নেতা রফিক আজাদ নন

নভেম্বর ৯, ২০২৫
১৮:১৮:৩৬

মো. তৌহিদুল ইসলাম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে বিএনপি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় এক সহযাত্রীকে বিএনপি নেতা রফিক আজাদ চড় মেরেছেন দাবিতে একটি ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়েছে। তবে ডিসমিসল্যাবের ফ্যাক্টচেকে দেখা যায়, সহযাত্রীকে আঘাত করা ওই ব্যক্তির নাম আবদুল সুবহান। অস্বাভাবিক আচরণ করায় বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে উড্ডয়নের আগেই জেদ্দায় বিমান থেকে তাকে নামিয়ে দেওয়া হয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত ৭ নভেম্বর রাতে “ডাক্তার আইজউদ্দিন” নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ১০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আপলোড করা হয়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, একটি বিমানের মধ্যে একজন টুপি পরিহিত ব্যক্তি  আরেকজন যাত্রীর গালে চড় মেরেছেন ও দুজনের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই আরেকজন যাত্রী এসে টুপি পরিহিত ব্যক্তিকে পেছন দিক থেকে টেনে ধাক্কা দিয়ে অন্যদিকে সরিয়ে দেন। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা হয়, “বিএনপি’র অত্যাচারে দেশ ছেড়েছি বলায় যুবকের গালে থাপ্পড় দিচ্ছেন বিএনপি নেতা রফিক আজাদ!!-> মব চলছে মাটিতে -পানিতে এবং আকাশে।” এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভিডিওটি তিনশর অধিক শেয়ার হয়েছে। মন্তব্য করা হয়েছে ষাটটির বেশি। এছাড়াও একাধিক ফেসবুক পেজ ও প্রোফাইল থেকে ভিডিওটি শেয়ার করা হয় (, , , )।

ঘটনাটির সত্যতা যাচাইয়ে ভিডিওর একাধিক কিফ্রেম রিভার্স সার্চ করলে সংবাদমাধ্যম চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একই দৃশ্য সম্বলিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের ক্যাপশনে লেখা হয়, “বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে যাত্রীদের হাতাহাতি!” 

পোস্টটিতে বিভিন্ন ফেসবুক ব্যবহারকারীর করা মন্তব্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আবদুর রহমান সেলিম নামের একজন ব্যক্তি একই ফ্লাইটে ছিলেন জানিয়ে একটি মন্তব্য করেছেন। ব্যবহারকারীর প্রোফাইলে গত ৫ নভেম্বর সৌদির জেদ্দায় অবস্থিত আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট থেকে সিলেটের উদ্দেশে যাত্রার একটি ট্রাভেলিং ট্যাগ যুক্ত পোস্টও খুঁজে পাওয়া যায়। সেই সূত্র ধরে ডিসমিসল্যাব আবদুর রহমান সেলিমের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরো বিষয়টি জানতে চায়। আবদুর রহমান জানান, তিনি একই ফ্লাইটে ছিলেন। বিমান উড্ডয়নের আগ থেকেই ওই যাত্রী অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন ও গালিগালাজ করছিলেন। এছাড়াও বিমানের মধ্যে বার বার সিজদাহ দিচ্ছিলেন। তিনি কোনোভাবেই সিটে বসতে চাচ্ছিলেন না। এতে করে ফ্লাইটে প্রায় এক ঘন্টা দেরি হয়ে যায়। এক পর্যায়ে বিমানে থাকা আরেক যাত্রী বিষয়টি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করলে অস্বাভাবিক আচরণকারী যাত্রী তাকে চড় মারেন। পরবর্তীকালে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সদস্যরা এসে ওই ব্যক্তিকে নামিয়ে দেয় এবং তার ফ্লাইট বাতিল করা হয়।

আব্দুর রহমান সেলিমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী উক্ত ফ্লাইটের নাম্বার হল BG 236। এটি গত ৫ নভেম্বর সৌদির জেদ্দা থেকে বাংলাদেশের সিলেটের উদ্দেশে রাত ১০ টা ৪৫ মিনিটে যাত্রার জন্য নির্ধারিত ছিল। 

ফ্লাইটের ওই  ব্যক্তির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ডিসমিসল্যাব বিমান বাংলাদেশের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাকে ফ্লাইটের নাম্বার উল্লেখ করে মূল ঘটনা জানতে চাওয়া হলে তিনি ঘটনাটির বিস্তারিত জানান। একই সঙ্গে বোসরা ইসলাম বিমান বাংলাদেশ জেদ্দার স্টেশন মাস্টারের স্বাক্ষরিত একটি লিখিত স্টেটমেন্টের ছবিও পাঠান ডিসমিসল্যাবকে। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী,  আরেকজন যাত্রীকে চড় মারা টুপি পরিহিত ওই ব্যক্তির নাম আবদুল সুবহান। গত ৫ নভেম্বর সৌদির জেদ্দা থেকে সিলেটের উদ্দেশে আসা বিজি ২৩৬ (BG 236) ফ্লাইটের ২২ডি নাম্বার সিটের যাত্রী ছিলেন তিনি। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুসারে, অস্বাভাবিক আচরণ ও মানসিক সমস্যার কারণে অন্য যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে বিমান থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। স্টেটমেন্টটিতে আবদুল সুবহানের পাসপোর্ট নাম্বারও উল্লেখ করা ছিল।

বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের দেওয়া এসকল তথ্য বিমানে থাকা আরেক যাত্রী আবদুর রহমান সেলিমের তথ্যের সঙ্গে মিলে যায়। ফলে, বিমান বাংলাদেশের জেদ্দা স্টেশন ম্যানেজারের স্বাক্ষরিত নথি, জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলামের দেয়া তথ্য ও একই বিমানে থাকা আরেকজন যাত্রীর তথ্যের ভিত্তিতে দাবিটি মিথ্যা বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। 

অর্থাৎ, বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইটে আরেক যাত্রীকে থাপ্পড় মারা ব্যক্তি বিএনপি নেতা রফিক আজাদ নন বরং তার নাম আবদুল সুবহান।

আরো কিছু লেখা