মো. তৌহিদুল ইসলাম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
মেঝেতে রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি আঁকার দাবিতে এআই দিয়ে সম্পাদিত ছবি প্রচার

মেঝেতে রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি আঁকার দাবিতে এআই দিয়ে সম্পাদিত ছবি প্রচার

মো. তৌহিদুল ইসলাম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

পূর্ব বাংলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা মেঝেতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেহারা আঁকছে- এমন দাবিতে একটি ছবি সম্প্রতি পাকিস্তান ও বাংলাদেশ- দুই দেশ থেকে পরিচালিত হওয়া একটি ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করা হয়। তবে ডিসমিসল্যাবের ফ্যাক্টচেকে দেখা যায়, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের মেঝেতে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিতদের প্রতিকৃতি আঁকার দৃশ্যকে এআই দিয়ে সম্পাদনা করে মিথ্যা দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে।

“পাকিস্তান বাংলাদেশ ইউনিটি” নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ছবিটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়– “বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা মেঝেতে রবি ঠাকুরের ছবি আঁকছে যিনি পূর্ব বাংলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন। শিক্ষার্থীদের বিশ্বাস তিনি আমাদের অপছন্দ করার পাশাপাশি পৃথিবীর নিচুস্তরের প্রাণী মনে করতেন।” এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পোস্টটি ২২ বার শেয়ার করা হয়েছে ও দুইশটির বেশি প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। সামাজিক মাধ্যম এক্স-এও একই ছবি পোস্ট হতে দেখা গেছে।

ছড়িয়ে পড়া দাবির সত্যতা যাচাইয়ে ছবিটি রিভার্স সার্চ করলে প্রথম আলোদ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের দুইটি প্রতিবেদন সামনে আসে। প্রতিবেদন দুটিতে প্রায় একই দৃশ্যের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে যুক্ত ছবির ক্যাপশনে লেখা আছে, “জগন্নাথ হলের ভেতরে রাস্তায় আঁকা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত জামায়াত নেতা গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী ও কাদের মোল্লার ছবি।” ছবিটি আরফাতুল ইসলাম তুলেছেন বলেও উল্লেখ করে প্রথম আলো। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রতিবেদনে ব্যবহৃত একই ছবির ক্যাপশনে লেখা আছে, “শনিবার দিবাগত রাতে হলের সড়কের মেঝেতে এই ঘৃণাসূচক প্রতিকৃতিগুলো এঁকেছিলেন শিক্ষার্থীরা।” 

এছাড়া পাকিস্তান বাংলাদেশ ইউনিটি পেজ থেকে প্রচারিত ছবিটির নিচে ডান কোণে গুগলের জেমিনি এআই (Gemini AI)-এর একটি লোগো রয়েছে। গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট জেমিনির ‘ন্যানো বানানা‘ নামের একটি মডেল ব্যবহার করে ছবি সম্পাদনা করলে, সম্পাদিত ছবিতে লোগোটির এমন জলছাপ থাকে।

অর্থাৎ, মূল ঘটনার ছবি এআই দিয়ে সম্পাদনার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মুখ বসিয়ে মিথ্যা দাবিতে ছড়ানো হয়েছে। 

ফেসবুকের ‘পেজ ট্রান্সপারেন্সি’ তথ্য অনুযায়ী, ‘পাকিস্তান বাংলাদেশ ইউনিটি’ পেজটি মোট ছয়জন ব্যক্তি পরিচালনা করছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনের প্রধান অবস্থান পাকিস্তানে এবং একজনের বাংলাদেশে। 

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনের প্রবেশপথে পাকিস্তানসহ পাঁচটি দেশের পতাকা সাঁটানো একটি ছবি সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। দাবি করা হয়, (ডাকসু) ভবনের প্রবেশপথের মেঝেতে ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ভারত ও পাকিস্তানের পতাকার ছবি সাঁটানো হয়েছে। তবে ডিসমিসল্যাবে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন হতে জানা যায়, মূল পতাকাটি ছিল পাকিস্তানের, সেখানেও এআই ব্যবহার করে অন্যান্য দেশের পতাকা যুক্ত করা হয়েছিল।

আরো কিছু লেখা