তাসনিম তাবাস্সুম মুনমুন

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের দাবিতে ছড়াচ্ছে পুরোনো ভিডিও
তাসনিম তাবাস্সুম মুনমুন
ভারতের সহযোগিতায় শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আসবেন এবং জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন। শুধু শেখ হাসিনা নন, ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হচ্ছে। সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়ানো এক ভিডিওতে এমনটা দাবি করা হচ্ছে। তবে ডিসমিসল্যাবের ফ্যাক্টচেকে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের ২৪ নভেম্বর প্রকাশিত এটিএন নিউজের ভিডিও প্রতিবেদন থেকে নেওয়া ভিডিওর অংশ এটি।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে একজন উপস্থাপিকাকে ওবায়দুল কাদেরের বরাতে বলতে শোনা যায়— “৩০০ আসনে চুড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে আওয়ামী লীগ। প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে নারী বা পুরুষ নয়, জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন ব্যক্তিদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ কথা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।”

ভিডিওতে শেখ হাসিনাকে বৈঠকে কথা বলতে দেখা যায়। একটু পর ওবায়দুল কাদেরকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। ভিডিও-এর নিচে যমুনা টিভির লোগো দেখা যায়। পোস্টের ক্যাপশনে আরও বলা হয়েছে, “ব্রেকিং নিউজ 🛑৩০০ আসনে প্রার্থী চুড়ান্ত করলো আওয়ামী লীগ, সূত্র বলছে শেখ হাসিনার ফিরে নির্বাচন করবেন, সহযোগিতা করবে বন্ধু রাস্ট্র ভারত” (বানান অপরিবর্তিত)। পোস্টে একজন মন্তব্য করেছেন, “জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু জয় হোক নৌকা মার্কায় ১০০% জিতবে”। ভিডিওটি এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ বার দেখা হয়েছে, শেয়ার হয়েছে ১৪০০ বারের বেশি।
কিওয়ার্ড সার্চ করলে একাধিক সংবাদ প্রতিবেদন (১, ২) খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজতে গেলে ইউটিউবে পাওয়া যায় এটিএন নিউজের একটি প্রতিবেদন। ২০২৩ সালের ২৪ নভেম্বর প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের সঙ্গে যাচাই করা ভিডিওটি পুরোপুরি মিলে যায়। ১ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের প্রতিবেদনের শুরুর ৩২ সেকেন্ড নিয়ে এই ভিডিওটি বানানো হয়েছে। যাচাই করা ভিডিওটিতে ৯ সেকেন্ড পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাড়ি, বৈঠকে বসা ব্যক্তিদের সারির ক্রম, তাদের পোশাক, তোফায়েল আহমেদ ও জাহাঙ্গীর কবির নানকের পাশাপাশি বসাসহ সকল ফুটেজ মিলে যায়। ১০ সেকেন্ডে ওবায়দুল কাদেরের পোশাক, তার পাশের ব্যক্তি, পেছনের ছবি সবই প্রতিবেদনের সঙ্গে মিলে যায়। এটিএন নিউজের ভিডিও-এর উপরে ডান কোণায় “বৃহস্পতিবারের ছবি” লেখার ‘বৃহস্প’ অংশ ফেসবুকে সম্প্রতি ছড়ানো ভিডিওতেও দেখা যায়।

ভুয়া দাবিতে ছড়ানো ভিডিও (বামে) এবং সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত মূল ভিডিও (ডানে): ফ্রেম–বাই–ফ্রেম তুলনামূলক যাচাই 
ভুয়া দাবিতে ছড়ানো ভিডিও (বামে) এবং সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত মূল ভিডিও (ডানে): ফ্রেম–বাই–ফ্রেম তুলনামূলক যাচাই 
ভুয়া দাবিতে ছড়ানো ভিডিও (বামে) এবং সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত মূল ভিডিও (ডানে): ফ্রেম–বাই–ফ্রেম তুলনামূলক যাচাই 
ভুয়া দাবিতে ছড়ানো ভিডিও (বামে) এবং সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত মূল ভিডিও (ডানে): ফ্রেম–বাই–ফ্রেম তুলনামূলক যাচাই
এটিএন নিউজের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যাচাই করা ভিডিওতে দৃশ্যমান উপস্থাপিকার নাম উজমা হাসান। ভিডিও প্রতিবেদনের শুরুতে তিনি বলেন, “রোববার ৩০০ আসনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে আওয়ামী লীগ। প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে নারী বা পুরুষ নয়, জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন ব্যক্তিদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ কথা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিকেলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।” যাচাই করা ভিডিওতে উপস্থাপিকার “বিকেলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের” বলা অংশটি কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৩ ও ২৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। দলটির সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বোর্ডের সভায় বাকি মনোনয়নপ্রাপ্তদের তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ হয়।
২৩ নভেম্বর বোর্ডের সভার ফুটেজ ব্যবহার করা হয় ২৪ নভেম্বর এটিএন নিউজের প্রতিবেদনে। তাই প্রতিবেদনে “বৃহস্পতিবারের ছবি” (২৩ নভেম্বর) লিখে দেওয়া হয়েছে। এই অংশ যাচাই করা ভিডিও-এর প্রথম ৯ সেকেন্ড।
পরবর্তী ১ সেকেন্ড ওবায়দুল কাদেরকে দেখা যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে। ২৪ নভেম্বরের এই ফুটেজটি শেখ হাসিনার ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালের। সেদিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নামের তালিকা ঘোষণার তারিখ জানিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের।
অর্থাৎ, আওয়ামী লীগের ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি দুই বছর পুরোনো। ভিডিওর ফুটেজগুলো ২৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা ও ২৪ নভেম্বর শেখ হাসিনার ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালের।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে সদ্য ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। বর্তমানে দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্ট করেছেন যে, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় কার্যক্রম স্থগিত থাকায় আওয়ামী লীগ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পাবে না।