সুদেষ্ণা মহাজন অর্পা

চট্টগ্রামে ড. ইউনূসের বাসভবনে হামলার দাবিতে ছড়াচ্ছে সাভারের পুরোনো ভিডিও
সুদেষ্ণা মহাজন অর্পা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবনে হামলা করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে, ডিসমিসল্যাব ফ্যাক্টচেক করে দেখেছে ছড়ানো ভিডিওটি পুরোনো এবং ভিন্ন ঘটনার। একাধিক সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সাভারের হেমায়েতপুরে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি ভাঙচুরের দৃশ্য এটি।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ৬ নভেম্বর বাসভবন ভাঙচুরের ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। ৫২ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একটি বাড়ির মূল ফটকের সামনে মানুষজনের ভিড়। কেউ কেউ দাড়িয়ে দেখছে, আবার কেউ কেউ সেখানে লাঠিসোটা নিয়ে ভাঙচুর করছে। ভিডিওতে একজনকে ধারাবিবরণী দিতে শোনা যায়।
ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, চট্টগ্রামের সাধারণ জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে ড. ইউনূসের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। ইউনূস আসার পরেই দেশের মানুষ অশান্তিতে (আছে) এবং চট্টগ্রাম থেকে তার বাড়ি উচ্ছেদ করা হবে– এরকম শোনা যাচ্ছে। সেখানে অনেক সেনাবাহিনী উপস্থিত হয়েছে বলে জানানো হচ্ছে বলেও দাবি করা হচ্ছিল ভিডিওতে।
ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা, “অবৈধ ইউনূস সরকারের চট্টগ্রামের বাসভবনে হামলা করেছে চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ।বাংলাদেশের কোন জায়গায় একটা ইটও ইউনূসের নামে থাকলে সেটা এই দেশের মানুষ রাখবে না।” এছাড়া “০৬/১১/২০২৫” তারিখ দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে এটি সাম্প্রতিক সময়ের।
ফেসবুকের একাধিক ব্যক্তিগত আইডি এবং গ্রুপ (১, ২, ৩, ৪, ৫) থেকে একই ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। ইনস্টাগ্রামেও একই দাবিতে ভিডিওটি প্রচার করা হয়। ৫৪ সেকেন্ডের হুবহু একই দৃশ্যের ভিডিও আরও কিছু ফেসবুক পেজ ও প্রোফাইল (১, ২, ৩, ৪, ৫) থেকে শেয়ার করা হয়েছে। সেই পোস্টগুলোর বিবরণে লেখা, “চট্টগ্রামে প্রধান উপদেষ্টা ইউনুছের গ্রামের বাড়িতে হামলা করেছে স্থানীয় তৌহিদী জনতা।নিজের তৈরি করা মবাদের হাতে নিজের বাড়ি হামলা। সময় এর অপেক্ষায়…..।”

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর সত্যতা যাচাইয়ে কিফ্রেম ধরে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ডিসমিসল্যাবের সামনে আসে সংবাদমাধ্যম বৈশাখী টিভি নিউজের একটি ভিডিও প্রতিবেদন। চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি বৈশাখী টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটি প্রচার করা হয়। ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা, “সাভারে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি ভাং*চু*রের সময় ছাত্র জনতার ওপর হা*ম *লা।” এই ভিডিওর শুরুর ৭ সেকেন্ড থেকে শুরু করে ১ মিনিট পর্যন্ত ফুটেজের সঙ্গে ড. ইউনূসের বাড়িতে হামলার বলে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ডও সার্চ করে দেখে ডিসমিসল্যাব। দেখা যায় সেসময় একাধিক সংবাদমাধ্যমে এ ঘটনা নিয়ে অনলাইন (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ) ও ভিডিও (১, ২) প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম ও তাঁর ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ফখরুল আলমের পৈতৃক বাসভবন “রাজ মঞ্জুরি” তে হামলা ও ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র–জনতা। তবে ভবনের বাইরের একটি অংশে আগুন দিতে গেলে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা তাদের বাধা দেয়। আর এতে বিক্ষুব্ধ জনতা বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লে শতাধিক এলাকাবাসী তাদের ধাওয়া দেন এবং কয়েকজনকে ধরে পিটুনি দেন।
অর্থাৎ, নয় মাস আগের একটি পুরোনো ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে চট্টগ্রামে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে হামলার দাবিতে যা সত্য নয়।